রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাসায় নমুনা সংগ্রহে জটিলতা বাড়ছে

১৫ দিনের আগে মিলছে না সুযোগ বয়স্ক ও শিশুদের জন্য এই সুযোগ আরও বাড়ানো উচিত -বিশেষজ্ঞদের অভিমত

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২০, ১:০৩ এএম

দেশে করোনা রোগী শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ নিয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সময়মতো পরীক্ষা করাতে না পেরে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এদিকে যারা বাইরে বেরিয়ে আসতে পারছেন না তাদের প্রাধান্য দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু প্রতিদিনই করোনার ভয়াবহতা বাড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের এ সেবা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন বেশিরভাগ মানুষ। কারণ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাত্র ৮টি টিম রাজধানীতে নমুনা সংগ্রহের কাজ করছে। এদের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো সাধারণ মানুষের জন্য অসাধ্য কাজ। তাদের নাম্বার থাকে ব্যস্ত। আর কথা বলার সুযোগ মিললেও টেস্টের দরকার নেই। বাসায় থাকেন, ওষুধ খান। খারাপ হলে যোগাযোগ করবেন এই বলেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাজ শেষ। অপরদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাসায় নমুনা সংগ্রহে ‘ফি’ ৪৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই সেবায় এগিয়ে আসলেও তাদের রোগী সামাল দিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই অনেকে এই সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে আবার দীর্ঘদিনের তালিকা দেখাচ্ছেন। ১৫ দিনের মধ্যেও নুমনা নিতে পারবেন না বলছেন। আর এতে রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার পরও নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা চরম বিপাকে পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা এই সুবিধা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
করোনায় সংক্রমিত হয়ে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন মানিক নগরের বাসিন্দা গৃহিনী নাজমুন নাহার (৬২)। শরীর অনেক দুর্বল। উঠে দাঁড়ানো তো দূরের কথা বিছানা থেকে মাথাই তুলতে পারছেন না। এই শরীর নিয়ে দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা করাতে যাওয়া, সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু বাসায়ও নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না। স্বাস্থ্য অধিদফতর, প্রাভা হেলথ, রিজেন্ট হাসপাতালসহ বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেন নাজমুন নাহারের ছেলে নাঈম উদ্দিন। তিনি জানান, অনলাইনে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নাম্বার ব্যস্ত, প্রাভা ও রিজেন্ট হাসপাতালের সিরিয়াল পেতে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে ১৫ দিন।
৭০ বছরের বেশি বয়স্ক বাবার করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে শাঁখারী বাজারের রাশিদুল ইসলামের অভিজ্ঞতাও একই রকম। রাশিদুল জানান, তার বাবা অসুস্থ। নমুনা দিতে গিয়ে যে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হয় তা তার বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে বলা হয় বয়স্ক, অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নমুনা বাসা থেকে নেয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের যে নাম্বারগুলো বলা হয় তাতে সংযোগ পাওয়া মানে লটারি পাওয়ার মতো। হট নাম্বার কিংবা স্বাস্থ্য বাতায়ন কোনটাতেই সংযোগ পাওয়া যায় না। বেসরকারিভাবেও যদি কেউ নমুনা পরীক্ষা করাতে চায় সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সেখানেও ১২-১৫ দিনের দীর্ঘ সিরিয়াল। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে তো নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষাতেই অনেকে মারা যাবে। সরকারের উচিত এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া।
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, বাড়ি থেকে করোনা পরীক্ষা নমুনা সংগ্রহের কাজে আমরা হেলথ ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা নিয়েছি। কিন্তু রোগীর এত চাপ যে সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জনবল সঙ্কটের কারণে এমনটা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন যে পরিস্থিতি তাতে দশ হাজার লোক নিয়োগ দিলেও সঙ্কট কাটবে না। আগামী সপ্তাহ থেকে রিজেন্ট হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
প্রাভা হেলথের জনসংযোগ কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন কামালও জানালেন রোগীর চাপের কথা। তিনি বলেন, এতো মানুষের সিরিয়াল দেয়া হয়েছে যে নতুন রোগীর ১৫ দিনের আগে নমুনা নেয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আমাদের কাছে ফোন করেন। অনেকে খুব বেশি অসুস্থ নন কিন্তু তিনিও চান তার নমুনা বাসায় গিয়ে সংগ্রহ করা হোক। একেবারের ক্রিটিক্যাল রোগী ছাড়া বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করার কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং আইইডিসিআরের হটলাইনে সারা দেশ থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ফোন করে। এ কারণে লাইন পেতে সমস্যা হয় ও ব্যস্ত দেখায়। তিনি বলেন, বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য এই সুযোগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বেসরকারি আরও প্রতিষ্ঠানকে এই সেবায় এগিয়ে আসার আহবান জানান। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেছেন, করোনার ভয়াবহতা কমাতে হলে যে যেখানে আছে সেখানেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে বাসায় গিয়ে নমুনা পরীক্ষা অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন