হাসির চেয়ে সহজ, স্বাভাবিক আর কী হতে পারে। ডাক্তার, ওষুধ-কোনো কিছুরই দরকার নেই। মনপ্রাণ খুলে হাসুন ভালো থাকুন।
প্রতিদিনের জীবনের গুরুত্ব, গতি, চাপ, চিন্তা, কাজ- এ সবকিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে চলতে আমরা হাপিয়ে উঠি। মনে পড়ে না শেষ কবে শুধূমাত্র আড্ডা মারার জন্য বন্ধ-বান্ধবের সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়েছিলাম। অথবা কবে আশেপাশের কথা চিন্তা না করে মন খুলে হেসেছিলাম। ভালো থাকা আর ভালো রাখার প্রথম এবং প্রধান ওষুধ হচ্ছে মন-প্রাণ খুলে হাসা। মন খুলে যে হাসতে পারবে তার অর্ধেক অসুখ সেরে যাবে। এখন তো ডিপ্রেশন, হার্টের অসুখের চিকিৎসাতেও ডাক্তাররা লাফটার থেরাপি সাজেস্ট করছেন। এখন তো বিভিন্ন শহরে জায়গায় জায়গায় বেশকিছু লাফিং ক্লাবও গড়ে উঠেছে। ভোরবেলা পার্কে অথবা লেকের ধারে গেলে দেখা যেত, বেশকিছু মানুষ একসঙ্গে হাসছেন । আসলে বিভিন্ন লাফিং ক্লাবের সদস্যরা এমনভাবেই হাসির অনুশীলন করেন এবং আস্তে আস্তে এই অনুপ্রেরণা ফিরিয়ে আনে জীবনের ছন্দ। হাসি- এই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় সব বিপরীত পরিস্থিতি। এখন এই করোনাকালে শরীর ও মন ভালো রাখার সব থেকে ভালো উপায়-হাসি।
কোনো এক বিশেষ দিনে কোনো কারণে অথবা এমনি আপনার মনটা খুবই খারাপ। সেই সময় আপনার টিভিতে চালিয়ে দিন যে-কোনো হাসির সিনেমা, টম অ্যান্ড জেরি অথবা মিস্টার বিন। দেখবেন অজান্তেই হাসতে হাসতে কখন যে আপনার মন ভালো হয়ে গেছে বুঝতেই পারবেন না। হিউমার, প্রাণখোলা হাসি এমনিই একটি ওষুধ যা মুহূর্তের মধ্যে উধাও করে দেবে সব মন খারাপ। হিউমার আপনাকে অনুপ্রোণিত করে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে, নতুনভাবে জীবন এবং আমাদের চারপাশের পরিস্থিতিকে দেখতে। আর নতুন উদ্যমে জীবনের যে-কোনো বিপদ, ভয় এবং দুর্বল মুহূর্তের মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে, আর আপনার মন এবং মেজাজ ভালো রাখতে অবশ্যই আপনি বেশি সতর্ক থাকবেন।
হিউমার এক ধরণের ব্রেনের এক্সপেরিয়েন্স। আমাদের মস্তিস্কে ‘হিউমার মাসল’-এর এমন এক নেটওয়ার্ক আছে যা বিভিন্ন সময়ে আমাদের মস্তিস্কে নানা রকম সিগন্যাল পাঠায়। আমাদের মস্তিস্কে ‘ফিল গুড’ কেমিক্যাল মেসেঞ্জার ডোপামাইন স্টিমুলেট করতে সাহায্য করে। আরো একটি মজার দিক হচ্ছে-হাসি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। জীবনের বিষয়ে অকারণে সিরিয়াস হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সবসময় যদি আমরা সিরিয়াস হয়ে থাকি, তাহলে দেখা যাবে আমাদের জীবন থেকে আনন্দ, হাসি মজা সব কিছুই একদিন হারিয়ে গেছে। দিনের যে কোনো সময় আমাদের মন খারাপ হতেই পারে। এই সময় ভালোলাগার মানুষটিকে হয়তো কাছে পাওয়া সম্ভব না। এ রকম পরিস্থিতিতে কী করবেন? খুব সহজ কিছু সমাধান রয়েছে এজন্য। আপনার ঘরের ভিতরে এমন জিনিস রাখুন, যা দেখে আপনার হাসি পায়। আপনার পছন্দের মানুষের জীবনে নানা ধরণের পরিস্থিতি আসতেই পারে। সেই ক্ষেত্রে সে সব পরিস্থিতি নিয়ে অকারণে চিন্তা না করাই ভালো। কিছু পরিস্থিতি সময়ের হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভালো। কারণ, পৃথিবীর সব সমস্যা আপনার নিজের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। শুধু শুধু চিন্তা মানেই স্ট্রেস লেভেল বেড়ে যাওয়া আর তার সঙ্গে দেখা দেবে নানা ধরণের অসুখের লক্ষণ। এসব থেকে যতটা দুরে থাকা যায় ততই ভালো। যতটা সম্ভব বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের মধ্যে নানান ধরনের পজেটিভিটি থাকে যা কিনা আপনার যে-কোনো রকমের কঠিন পরিস্থিতিতেও মুখে হাসি আনবে। বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করলেও হাসি আসবে। মাথার ভিতর যে চিন্তা ছিল, তা কখন যে দূর হয়ে গিয়েছে ।
এক কঠিন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে , অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার জন্যও হাসি খুবই উপকারী । মুখের ব্যায়াম হিসাবে হাসি খুবই উপকারী। হাসির সময় আমাদের মুখের ১৫ টি মাসল কাজ করার ফলে রক্তের সঞ্চালন বেশি হয় এবং হাসির ফলে মুখের ত্বক আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হাসি আমাদের নানা রকম ব্যথা সহ্য করার শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ক্যানসারেও পেন ম্যানেজমেন্ট হিসেবে হাসি অব্যর্থ। জীবনটা মন-প্রাণ খুলে উপভোগ করতে হবে তাহলে দেখা যাবে জীবনের মানেটাই বদলে গিয়েছে।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন