প্রাণঘাতী করোনার আতঙ্ক ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বিপর্যস্থ মানুষরা ঋণের কিস্তি ও হালখাতার যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এনজিও ঋণ ও মহাজনের হালখাতা কিভাবে শোধ করবেন সে চিন্তায় অস্থির কলারোয়াবাসী। জানা গেছে, লকডাউনের সময় মানুষ গৃহে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসা বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে। অর্থ সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমন সময় গত ২০ মে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আঘাত হানে। ঝড়ে মাঠের পাকা ধানসহ আম, কাঠাল, কলা এমনকি ক্ষেতের শাকসবজি পর্যন্ত বিনষ্ট হয়ে যায়।
হাজার হাজার ফলজ ও বনজ বৃক্ষ উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে। রাস্তা ঘাটে পড়ে থাকা গাছপালা অপসারণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলেও এখনো ক্ষেত খামারে ভেঙে ও উপড়ে পড়া গাছপালা অপসারণ শেষ হয়নি। চাষাবাদের জন্য ক্ষেত খামারের গাছপালা অপসারণের জন্য শ্রমিকের মুজরি ৩’শ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬’শ টাকা হয়েছে। ঝড়ের আঘাতে বেগুন ঢেড়শ গাছ এপাশ ওপাশ আছড়ে বিনষ্ট হয়েছে। আম্পান ও পরবর্তী প্রায়শ বৃষ্টিতে বেশির ভাগ ক্ষেতের উচ্ছে পটল গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। বৃদ্ধি পেয়েছে চাল ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম। ফলে সাধারণ মানুষ চরম ভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়ছে।
গ্রামীণ অর্থনীতির এই চরম দুর্দশার মধ্যে সার কীটনাশক, কাপড় ও মুদি দোকানে পাওনা আদায়ে চলছে হালখাতার ধুম। হালখাতায় অনুপস্থিত হলে পরদিন ভোর থেকে যে কোন ভাবে টাকা আদায়ে মহাজন শ্রেণি বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। থেমে নেই এনজিও গুলো। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকে এনজিও ঋণের কিস্তি আদায়ে বাড়ি বাড়ি হানা দেয়া হচ্ছে। তাগাদার পর তাগাদা আর বউ বাচ্চার সামনে হেনস্থা করে কিস্তি প্রদানে বাধ্য করা হচ্ছে। বিশেষ করে সমবায় দপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সুদের ব্যবসায় লিপ্ত মহাজনের চাপে পালায়ে বেড়াচ্ছে মানুষ।
ঋণগ্রহীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকালে কিস্তি আদায়ের লোক এসে কিস্তি চায়, কিন্তু কয়েকদিন ধরে কাজ কর্ম না থাকায় কিস্তির টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। কিস্তির টাকা দিতে না চাইলে পরবর্তীতে ঋণ দেবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কখনো কখনো বউ বাচ্চার সামনে হেনস্থা করা হচ্ছে। তাই নিরুপায় হয়ে ধার দেনা করে কিস্তির টাকা দিচ্ছে তারা। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে বিধ্বস্ত গ্রামীণ অর্থনীতি একেবার স্থবির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে স্থানীয়দের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন