বৈশ্বিক এ করোনা মহামারী ইতোমধ্যে ২১৩ টি দেশ ও এলাকায় ছড়িয়ে পরেছে। এছাড়াও ২ টি বিলাস বহুল প্রমোদ তরীতেও এটা ছড়িয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে মৃত্যু বরণ করেছেন প্রায় ৪ লক্ষ। আক্রান্ত এবং মৃত্যুতে সবার উপরে আছে ট্রাম্পের দেশ আমেরিকা। আক্রান্তের দিক থেকে আমাদের বাংলাদেশের ক্রমের অবস্থান এই লেখাটি লেখার সময় পর্যন্ত ২০ এর কাছাকাছি।
গতবছরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে এটি ছড়িয়ে পরতে শুরু করে। এটি একটি খুবই সংক্রামক ভাইরাস, যা প্রধানত নাক, মুখ বা চোখের ঝিল্লির ভিতর দিয়ে মানুষের শরীরের প্রবেশ করে। তাই শরীরের এই অংশগুলিকে সংক্রমিত ব্যক্তি বা সংক্রমিত কোন বস্তু থেকে দুরে রাখতে পারলেই সংক্রমনের হাত থেকে বাঁচা যাবে। তাই সন্দেহজনক স্থানে গেলে শরীরের এই অংশগুলি ঢেকে রাখতে হবে। অপরিচ্ছন্ন কিছু দিয়ে এগুলো ছোঁয়া দেয়া যাবে না। তাই সবসময় ভাল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, বার বার হাত ধুয়ে ভাইরাসকে শরীরে লাগতে দেয়া যাবে না।
দেশে দেশে কঠোর বিধিনিষেধের পরও এখনও কোন দেশ সংক্রমণ মুক্ত হতে পারেনি। যারা ভালোমত আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন মেনে চলেছে তাদের দেশে এর প্রকোপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এই সংক্রমণের তীব্রতার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপক ভাবে। মানুষ ভাল থাকতে গিয়ে, সুস্থ হতে গিয়ে কোন কোন ভুল তথ্য মেনে জীবনকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। জেনে নেই কিছু জানা অজানা তথ্য-
আক্রান্তদের বেশীর ভাগই সুস্থ হয়ে উঠছে-সাধারণ জ্বর সর্দি কাশির মত কিছু উপসর্গের পর তা সামান্য কিছু ওষুধেই ভাল হয়ে যাচ্ছে। তাই এরকম কোন উপসর্গ হলেই ডাক্তারের পরামর্শমত চলা শুরু করতে হবে।
উপসর্গ অল্প কিছু থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এমন না। আপনার উপসর্গের ধরণ ও অন্যান্য জটিলতা বুঝে ডাক্তারই সিদ্ধান্ত নিবেন আপনাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে কি না।
এখনও পর্যন্ত করোনা চিকিৎসা বা প্রতিরোধের জন্য কোন ওষুধই অনুমোদন পায়নি। তাই করো কথায় অসুখের আগে বা শুরু হলেই ওষুধ খেয়ে নিজের স্বাস্থকে হুমকির মুখে ফেলবেন না।
খাবারের মধ্যে কোন ঝাঁঝাল মশলা-আদা, মরিচ, লবঙ্গ, থানকুনির রস ব্যবহারে এর কোন প্রতিকার হয় না।
মশা-মাছি দিয়ে করোনা ছড়ায় না- হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময় যে পানিয় ড্রপলেট বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তা দিয়েই অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছে।
বিøচিং বা ঝাঁঝাল পদার্থ শরীরে ছড়ালে করোনা মুক্ত হওয়া যায় না- বিøচিং শরীরে দিলে চোখের বা চামড়ার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। শিশুদের জন্য এটি খুবই মারাত্মক। আমাদের দেশে কোথাও কোথাও এই বিøচিং বা ডিজইনফেকটেন্ট টানেল বসান হয়েছে অজ্ঞতা থেকে।
এলকোহল করোনা মুক্তিতে কোন ভুমিকা রাখে না- কোন কোন দেশে এই এলকোহল বা মদ বরং মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তবে ৭০% এলকোহল দিয়ে কোন স্থান পরিস্কার করলে তা জীবানুমুক্ত হয়।
থার্মাল স্ক্যানার করোনা নির্ণয় করে না শুধুমাত্র জ্বর মাপার কাজে ব্যবহার হয়। জ্বর হলেই করোনা হয়েছে ভেবে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ না হয়ে বা না লুকিয়ে বিশেষ করে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকার মানুষ দ্রæত চিকিৎসককে জানাবেন।
৫জি মোবাইল নেটওয়ার্ক করোনা ছড়ায় না-এটিও একটি ভুল তথ্য। এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই।
রোদে বা গরমে থাকলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা নাই এটাও একটা ভুল তথ্য। তাই রোদে দাঁড়িয়ে থাকা বার বার গরম পানি দিয়ে গোসল করার কোন দরকার নাই।
১০ সেকেন্ডের বেশী দম ধরে রাখতে পারলে বা কোন কাশি না হলে করোনা নাই এটাও একটি বড় ভুল তথ্য। লক্ষণ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
বেশী ঠান্ডা, বৃষ্টি বা তুষারপাত করোনা ধ্বংস করতে পারে না।
হ্যান্ড ড্রাইয়ার বা হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে করোনা মারা যায় না।
আল্ট্রাভায়োলেট লাইট দিয়ে হাত বা শরীর স্ক্যান করলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
বার বার গরম পানি খেলে বা লবন পানি খেলে বা নাকে দিলেও করোনা মুক্ত থাকা যাবে না।
নিউমোনিয়ার টিকা নিলে করোনা থেকে মুক্ত থাকা যাবে না, তবে নিউমোনিয়া থেকে মুক্ত থেকে করোনার জটিলতা কমানো যাবে।
এজিথ্রোমাইসিন, আইভারমেকটিন বা অন্য কোন ওষুধ খেলে করোনা মুক্ত থাকা যাবে না, বরং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহারে ক্ষতিরও সম্ভবনা আছে।
তাই আবারও বলি, না বুঝে গুজবে কিছু করবেন না। ঘরে থাকি-সুস্থ থাকি। বাইরে বেরুলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করি। সন্দেহ জনক কিছু ছোঁয়া দিলেই ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলি। হাত দিয়ে চোখ-নাক-মুখ এলাকা স্পর্শ না করি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। বড়রা বাচ্চাদের দিকে খেয়াল রাখি।
zhsagar@google.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন