বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জনগণকে সকল তথ্য জানিয়ে আশ্বস্ত করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে গত মঙ্গলবার ৯ জন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহতদের সম্পর্কে আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেছেন, নিহতরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, কল্যাণপুরের হতাহত জঙ্গিরা গুলশান হামলাকারি গ্রুপেরই সদস্য। রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এদিকে কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহতরা সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটাতে তৈরি হয়েছিল বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওই অভিযান চালানোর ফলে দেশ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। ঘটনার বিবরণে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, সোমবার দিবাগত রাতে জঙ্গিদের আস্তানায় অভিযান চালতে গেলে গুলি বিনিময় হয়। রাতভর পুলিশের অভিযানের প্রস্তুতিতে পুরো কল্যাণপুর এলাকায় ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। ভয়ে আতংকে নির্ঘুমরাত কাটায় এলাকার মানুষ। প্রায় ১ ঘণ্টায় অপারেশন স্টর্ম-২৬ নামক অভিযানে জঙ্গিরা পরাভূত হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে, ওই আস্তানায় থাকা ১১ জঙ্গির ৯ জন নিহত হলেও ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরজন পালিয়ে গেছে। অভিযানের পর তাজ মঞ্জিল নামের বাড়িটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ।
গুলশানের হামলা-ঘটনার পর কল্যাণপুরের অভিযানকে সফলই বলতে হবে। কারণ গুলশান হামলা প্রতিরোধে করতে গিয়ে শুরুতেই দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন। প্রায় ১১ ঘণ্টা পরে শুরু হওয়া অভিযান সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে বলে আইএসপিআরের সংবাদসম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। গুলশান হামলা সম্পর্কে প্রকাশিত খবরে বলা হয় হামলাকারীরা যাদের হত্যা করতে চেয়েছে তারা তা সম্পন্ন করেছে। আর উদ্ধারকারীদের হামলায় আক্রমণকারীরা নিহত হয়েছে। এবারের অভিযান সম্পর্কে পুলিশি ভাষ্যে যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার বাইরেও এলাকাবাসীর ভাষ্যে বলা হয়েছে, পুলিশের তল্লাশির আগেই ১০/১২ জন পালিয়ে গেছে। শব্দশুনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বাসার ছাদে গিয়ে দখতে পান পাশের বাসার ছাদ দিয়ে জিন্সের প্যান্ট ও টি-শার্ট পরা এক যুবক পালিয়ে যাচ্ছে। এরপর তিনি নিচে তাকিয়ে দেখেন আরো ১০/১২ জন পালিয়ে যাচ্ছে। বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারেও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণীতে পালিয়ে যাবার কথা বলা হয়েছে। এর আগে কলাবাগানে জুলহাস ও তার বন্ধুর ওপর হামলার যে ঘটনা ঘটে সেখানেও হামলাকারীরা অনেকটাই প্রকাশ্যে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এযাবৎকাল যেসব কথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযান হয়েছে তার অধিকাংশের ক্ষেত্রেই জনগণ শুধু অভিযান আর মৃত্যুর খবরই জানতে পেরেছে। কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে যেমন কিছু গৎবাঁধা কথা ছাড়া কোন বিবরণ পাওয়া যায় না তেমনি এসব ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়ে আসছে। এর আগে চট্টগ্রামের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীর চাঞ্চল্যকর হত্যাকা- নিয়ে যত কথাবার্তা হয়েছে হত্যাকারীদের সম্পর্কে তার কিছুই জানা যায়নি। দেখা যাচ্ছে, একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটার পর সেটির পূর্ণ তদন্ত হওয়া বা জনগণ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত হবার আগেই আরেকটি নতুন ঘটনা ঘটছে। আগেরটি চাপা পড়ে যাচ্ছে। অথচ বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, সারা দুনিয়াতে যে সব হামলা হচ্ছে, হামলার পর প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশে এমনটা না হওয়াতে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম হচ্ছে। এক ধরনের আস্থার সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিটি ঘটনার পরপরই এলাকায় সাধারণ মানুষের নানা ধরনের ভোগান্তি শুরু হয়। আলোচ্য ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিরা দু’একদিনের মধ্যে বড়ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। এদের সাথে গুলশান হামলায় জড়িতদের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল। অথচ এসব জঙ্গির পেছনের মূল্য হোতা কে বা কারা তা আজ পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি।
এধরনের সফল অভিযানের জন্য পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ। ডিএমপির প্রধান বলেছেন, এই অভিযানটি ছিল ইতিহাসের অন্যতম সফল একটি অভিযান, যেখানে শতভাগ জঙ্গি নিশ্চিহ্ন হয়েছে এবং আমাদের পক্ষ থেকে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। শুধুমাত্র আমাদের একজন পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হয়েছে। প্রকৃত সাফল্য হচ্ছে ঘটনা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। অবশ্য এটা বলার সময় আসেনি যে, আলোচ্য অভিযাান বা এধরনের অভিযানের ফলে জনমনে স্বস্তি সৃষ্টিতে কার্যকর কোন সুফল পাওয়া গেছে বা পাওয়ার মত কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জনমনে আস্থা সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করাই এখন বড় ইস্যু। চলমান ঘটনাবলীতে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা আরো বাড়ছে। সে কারণে প্রতিটি ঘটনার সকল তথ্য সঠিক ও যথাযথভাবে জনগণকে জানানো উচিত। বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়, এমন বিবরণ প্রকাশ করা কাম্য নয়। এই সফল অভিযানের ফলে হয়তো একটি হামলার আশঙ্কা দূর হয়েছে, তাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে সেকথা বলার সময় এখনও আসেনি। সংশ্লিষ্ট মহল জনমনে নিরাপত্তাবোধ জাগ্রতকরণে আরও কার্যকর ও আন্তরিক উদ্যোগ নেবে, এটাই কাক্সিক্ষত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন