রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রবাস জীবন

প্রবাসী কর্মীদের লাশ আসছেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

মরণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাঝে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে দফায় দফায় ফিরছে প্রবাসী কর্মীদের লাশ । পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে হৃদরোগসহ নানা কারণে অনেক কর্মীই মারা যাচ্ছেন। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে একাধিক বিশেষ ফ্লাইট যোগে ১৬ জন প্রবাসী কর্মীর লাশ ঢাকায় পৌঁছেছে। বিমানবন্দরে মৃত প্রবাসীদের লাশের কফিন দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অপেক্ষমান স্বজনরা।

চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এবং ভিটেমাটি গবাদিপশু বিক্রি করে বিদেশে গিয়ে অনেক প্রবাসী কর্মীই অভিবাসন ব্যয়ের টাকাও তুলতে পারেনি। ঋণগ্রস্ত এসব অসহায় প্রবাসী পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আয় উপর্জনের একমাত্র ব্যক্তি বিদেশে গিয়ে মারা যাওয়ায় পরিবার পরিজনের মাঝে চলছে আহাজারি। বিদেশে মৃত কর্মীর লাশ এক নজর দেখার জন্য প্রতিবেশিরাও ছুটে যাচ্ছেন তাদের বাড়িতে। গত এক মাসে শুধু মালয়েশিয়া থেকেই ফিরেছে ৮৩ প্রবাসী কর্মীর লাশ। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারীতে বহির্বিশ্বে লাখ লাখ বাংলাদেশি চাকরি হারানো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন কোম্পানীতে কাজ না থাকায় অনেক প্রবাসী কর্মীই খালি হাতে দেশে ফিরছে। শুক্রবার গভীর রাতে কুয়েত থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইট যোগে ১৪১ জন অবৈধ কর্মী খালি হাতে দেশে ফিরেছে। বিমানবন্দরস্থ প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের এডি ফখরুল আলম গতকাল শনিবার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পরিবারের আর্থিক অভাব অনটনের খবরে মানসিক দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবারের অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাসের কারণে প্রবাসে অনেক কর্মী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। অভিজ্ঞ মহল এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিমান বন্দরের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস মহামারীর মাঝেও বিশেষ ফ্লাইট যোগে সউদীসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে প্রতি সপ্তাহেই মৃত কর্মীদের লাশ আসছে। শুক্রবার রাতে কুয়েত থেকে যেসব মৃত কর্মীর লাশ দেশে পৌঁছেছে তারা হচ্ছে, ফেনীর নূর আলম, টাঙ্গাইলের মো. আনোয়ার হোসেন, কুমিল্লার আমির হোসেন, ঢাকার শেখ শামসুদ্দিন, সুনামগঞ্জের হাবিবুর রহমান, কুমিল্লার হারুন মিয়া, মাদারিপুরের শাহ আলম, গাজীপুরের আব্দুল হালিম, যশোরের নূর ইসলাম, সউদী আরব থেকে কিশোরগঞ্জের সোহরাব উদ্দিন, (সড়ক দুর্ঘটনায়) বগুড়ার রণি শেখ, টাঙ্গাইলের জামাল হোসেন, ওমান থেকে সুনামগঞ্জের তোরাব আলী, কাতার থেকে মুন্সিগঞ্জের মাসুদ শেখ, ঢাকার বাদল বাবু ও ময়মনসিংহের শরীফ।

প্রবাসে মৃত কর্মীদের লাশ পরিবহনের ভাড়া বাবদ এবং দাফন কাফনের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে কল্যাণ তহবিল থেকে প্রবাসে মৃত কর্মীদের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে দেয়া হবে।

ইনসিডিন বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাসুদ আলী গতকাল শনিবার ইনকিলাবকে বলেন, বিদেশে অভিবাসী কর্মীদের অনেক আবাসনগুলোই স্বাস্থ্য সম্মত নয়। প্রবাসী কর্মীদের হোষ্টেলগুলোতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস নেই। পরিবারের আর্থিক অভাব অনটনের খবরে মানসিক দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবারের অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাসের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রবাসী কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাক্ট সংশোধিত হয়েছে। সেখানে অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডকে। বোর্ড অভিবাসী কর্মীদের ইনস্যুরেন্স সেবা চালু, সরকারিভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং অভিবাসী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশে প্রবাসী কর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় মিশনগুলোকে নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে প্রবাসী কর্মীদের সুরক্ষার কাঠামো তৈরি করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন