মোঃ গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে : দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সর্জনকুড়ি গ্রামের জঙ্গি সন্দেহে গ্রেনেড মামলায় বগুড়া জেলে আটক মোহামিনুল ইসলাম সিহাব (১৯)-এর তথ্য নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
প্রকাশ, ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের সময় গুলিবিদ্ধ গ্রেফতারকৃত জঙ্গী রাকিবুল হাসান রিগেন (১৮)-এর দেয়া তথ্যে পুলিশ ধারণা করছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সর্জনকুড়ি গ্রামের প্রবাসী আজাহার আলী সোনারের পুত্র মোহামিনুল ইসলাম সিহাব (১৯) জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত। গতকাল (বুধবার) সরেজমিন সিহাবের গ্রামের বাড়ি সর্জনকুড়ি গ্রামে গিয়ে তার মা ও এলাকাবাসীর সাথে কথা হয়। তার মা জাহানারা বেগম জানান, ২ সন্তানের মধ্যে সিহাব তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান। সে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামেরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত দুপচাঁচিয়া উপজেলা শাপলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। ছাত্র হিসেবে সে মেধাবী ছিল। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। ওই বিদ্যালয় থেকেই ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করে। পরে বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়। বগুড়ায় লেখাপড়া করা ও একই মেসে পাশাপশি থাকার সুবাদে রাকিবুল হাসান রিগেনের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রায় এক বছর পূর্বে গত বছর ২৬ জুলাই কাউকে না জানিয়ে তারা ২ বন্ধু নিখোঁজ হয়।
এ ব্যাপারে রাকিবুল হাসান রিগেনের মা রোকেয়া আক্তার বাদী হয়ে সিহাবের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করে। অপরদিকে সিহাবের মা জাহানারা বেগম প্রায় ২ মাস পর তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ায় গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে দুপচাঁচিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী (যার নং-৭৪৫) করে। প্রায় ৩ মাস পর সিহাব বাড়ি ফিরে আসলেও রাকিবুল হাসান রিগেন আর বাড়ি ফিরে আসে নি। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা দেয়াকালে গত ৩১ মে বগুড়ার ডিবি পুলিশ উক্ত মামলায় সিহাবকে তার ভগ্নিপতি দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুজ্জামানের উপজেলা সদরের সুখানগাড়ী বাসা থেকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে সে বগুড়া জেলহাজতে বন্দি রয়েছে। উক্ত সর্জনকুড়ি গ্রামের মৃত জরিফ উদ্দীনে সোনারের পুত্র আফাজ উদ্দীন সোনার (৭০), আইয়ুব আলী সোনারের পুত্র মজিবর রহমান (৮০), হায়দার আলীর পুত্র শহিদুল ইসলাম (৬০), মৃত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী বিবি ইসলাম (৬২)’র সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিহাব অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল।
গ্রামে কারো সাথে তার কোন বিরোধ ছিল না। নম্র, ভদ্র, মেধাবী এই ছেলে জঙ্গি কোন সংগঠনের সাথে জড়িত হতে পারে এটা তারা বিশ্বাস করতে পারছে না। তারা এ ধরনের মেধাবী ছাত্রদের যারা বিপদগামী করছে তাদের শাস্তিরও দাবি জানান, এ দিকে দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম ‘দৈনিক ইনকিলাব’কে জানান, সিহাবের স্বভাব চরিত্র ভাল ছিল না। তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে থানায় কোন জিডি হয় নি। অস্পষ্ট স্বাক্ষরসহ থানায় তার মায়ের দায়েরকৃত উক্ত নম্বরের জিডিটির বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, সে ঢাকার গাবতলি এসআই ইব্রাহিম হত্যা মামলায় সন্দিহান আসামি ছিল। তার বিরুদ্ধে বগুড়ার শেরপুর থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৯ ধারায় মামলা (যার নং-৪, তারিখ ০৫-০৪-২০১৬) রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো বিভিন্ন অভিযোগগুলো যাচাই-বাচাই চলছে। সব মিলিয়ে জঙ্গি সন্দেহে মোহামিনুল ইসলাম সিহাবের তথ্য নিতে পুলিশ মাঠে নেমেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন