পলাশী বাংলার ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ বিষাদময় ঘটনার সাক্ষী। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীতে যে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে, তার মধ্য দিয়ে বাংলার সাড়ে পাঁচশ’ বছরের মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। বিপন্ন হয় রাষ্ট্রীয় সত্তা। কিছু সংখ্যক নিকৃষ্ট বিশ্বাসঘাতক, সুযোগসন্ধানী, লোভী আর হিংসুক মানুষরূপী জানোয়ারের ষড়যন্ত্রের কারণে বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক সবক্ষেত্রেই সৃষ্টি হয় চরম বিপর্যস্ত অবস্থা। শস্য-শ্যামল, স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি জনপদের এ ধরনের পরাজয় পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ইংরেজরা বাংলার শাসন ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে শঠতা, প্রতারণা, ষড়যন্ত্র ও বিভেদনীতির আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। আর তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল হিন্দু শেঠ বেনিয়ারা, যাদেরকে বিশ্বাস করে মুসলিম শাসকরা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। যদিও প্রধান সেনাপতি হবার কারণে ঘটনাচক্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছিল অপদার্থ মীর জাফর, কিন্তু পেছনের প্রধান চক্রান্তকারীরা ছিল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
যুবক নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ মাত্র পনের মাস বাংলার সিংহাসনে ছিলেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ের একজন দেশপ্রেমিক অনন্যসাধারণ শাসক। তিনি যে একজন সাহসী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শাসক ছিলেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। যে বুদ্ধিমত্তা ও ক্ষিপ্রতার সাথে তিনি একযোগে আভ্যন্তরীণ কোন্দলের পাশাপাশি বিদেশি বেনিয়াদের চক্রান্ত উপলব্ধি করে তাদের শায়েস্তা করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন তাতে তাঁর সামরিক প্রজ্ঞা ও অসাধারণ যোগ্যতার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, তিনি সফল হতে পারেন নি। কিংবা বলা যায়, তাঁকে সফল হতে দেয়া হয়নি। যোগ্য ও পরিণামদর্শী শাসক থাকা সত্তে¡ও সম্পদশালী, সামরিক ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি স্বাধীন জনপদ কেন এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির শিকার হলো তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলাহর সফল না হওয়া এবং দেশ বিদেশি বেনিয়াদের হাতে চলে যাওয়ার যে কারণগুলো মূল ভ‚মিকা রেখেছে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তা গৌণভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। মতলবী ও ফরমায়েশী ইতিহাস লিখে যে একটা সময় পর্যন্ত হলেও সত্যকে আড়াল করে রাখা যায়, পলাশীর ঘটনা তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ! ষড়যন্ত্রমূলক পরাজয় এবং নির্মম শাহাদাতের পর ক্ষমতাসীনরা নবাবের বিরুদ্ধে মিথ্যা, কাল্পনিক ইতিহাস ছড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। একটা তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবী শ্রেণিও জুটে যায় একাজে। এমনকি মুসলিম লেখককে দিয়েও এ ঘণ্যৃ অপকর্ম আঞ্জাম দেয়া হয়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পরে প্রকৃত সত্য আজ সমাগত হয়েছে। ইতিহাসের এটাই হলো এক চরম ক্ষমতা যে, এক সময় না এক সময় সে সত্য উদঘাটন করবেই করবে। সে কাউকেই এক্ষেত্রে ছাড় দেয় না।
মূলত তৎকালীন আর্থ-সামাজিক পরিবেশটাই হয়ে উঠেছিল ষড়যন্ত্রের উপযোগী। ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, নবাব আলীবর্দী খান এবং সিরাজউদ্দৌলাহর শাসনামলে অধিকাংশ উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী ও জমিদার ছিল হিন্দু। নবাবদের সরলতা এবং অসাম্প্রদায়িক উদার চেতনার সুযোগ গ্রহণ করেছিল একটি সাম্প্রদায়িক কুচক্রী মহল। তৎকালীন প্রশাসন ব্যবস্থার ‘দেওয়ান’ ‘তানদেওয়ান’ ‘সাবদেওয়ান’ ‘বখশী’ প্রভৃতি সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে ছয়টিতেই হিন্দুরা অধিষ্ঠিত ছিল। এদের মধ্যে একমাত্র মুসলিম ছিল মীর জাফর। অপরদিকে ১৯ জন জমিদার ও রাজার মধ্যে ১৮ জনই ছিল হিন্দু। ফলে একজন স্বাধীন সার্বভৌম নরপতি হিসেবে সিরাজ যখন বারবার ইংরেজদের হুঁশিয়ার করে দেন যে, শান্তিপূর্ণভাবে ও দেশের আইন-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তারা যদি ব্যবসা করে তবে তাদের সহযোগিতা করা হবে, অন্যথায় তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়ন করা ছাড়া কোনো গতি থাকবে না, তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের হুঁশিয়ারিতে কর্ণপাত তো করেইনি, বরং নানা উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করেছিল। এর কারণ সুস্পষ্ট, তারা ভিতর থেকেই ইন্ধন পাচ্ছিল। এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল নবাবের সুবিধাবাদী, দেশদ্রোহী কিছু রাজকর্মচারী আর ঈর্ষাপরায়ণ কিছু নিকটাত্মীয়। ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল আর বাংলার বিশ্বাসঘাতক কুচক্রী আমাত্যবর্গের মধ্যে ১ মে ১৭৫৭ সালে এক গোপন লিখিত চুক্তি সম্পাদিত হয়। এখানে একটি বিষয়ের অবতারণা প্রাসঙ্গিক মনে করছি: তা হলো, পলাশী বিপর্যয়ের জন্য নবাবের নিকটাত্মীয় ও প্রধান সেনাপতি মীরজাফরকে এককভাবে দায়ী করা হয়। মীরজাফর লোভী, অপদার্থ, বিশ্বাসঘাতক ছিল এবং তার চূড়ান্ত নিষ্ক্রিয়তার ফলেই পলাশী দিবসের প্রহসন মঞ্চস্থ হয়েছিল সবই ঠিক আছে। কিন্তু উপরোল্লিখিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী শীর্ষ জমিদার আমলারা যেমন: উর্মিচাঁদ, জগৎশেঠ, রায়দূর্লভ, মানিকচাঁদ, দূর্লভরাম, রাজবল্লভ, কৃষ্ণচন্দ্ররায়, নন্দকুমার এরা কি শুধুই পার্শ্বচরিত্র ছিল? একশ্রেণির ঐতিহাসিক সে রকম ধারণা দিতেই বদ্ধপরিকর। ঐতিহাসিক মোহর আলী এক্ষেত্রে যথার্থই বলেছেন: ‘মীরজাফর যদি এই চক্রান্তে যোগ নাও দিত ষড়যন্ত্রকারীরা অন্য কাউকে খুঁজে নিত।’ এদের কূটকৌশল আর পরবর্তী কালের মতলবী প্রচারণা এতই শক্তিশালী ছিল যে, আজকে আমজনতার একটা বিরাট অংশ মিথ্যাচারকে প্রকৃত ইতিহাস বলে গ্রহণ করে ফেলেছে। বিশাল সৈন্যবাহিনী ও অস্ত্রপাতি থাকা সত্তে¡ও ২৩ জুন ১৭৫৭ পলাশী প্রান্তরে যুদ্ধ যুদ্ধ নাটকের মাধ্যমে জাতীয় বেঈমানরা দেশ ও জাতির সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করে বাংলার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিদেশি বেনিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয়। পরিকল্পনা মাফিক নবাবকে তারা গ্রেফতার ও পরে শহীদ করে।
পলাশীর এই যে সর্বগ্রাসী বিপর্যয়, এর সঠিক ইতিহাসটিও সাধারণকে জানতে দিতে চায়নি ইংরেজ ও তাদের আশীর্বাদে জন্ম নেয়া নব্য ভদ্রলোক বর্ণহিন্দু প্রভাবিত ঐতিহাসিকরা। নবাব সিরাজের পতনের পরপরই ফিরিঙ্গিরা কতক উচ্ছিষ্টভোগীদের দিয়ে ইতিহাস রচনা করায়। যেগুলোর মাধ্যমে সিরাজের চরিত্র হনন করা হয় নির্লজ্জভাবে। সিরাজের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচার চালিয়ে তারা বলতে চেয়েছে, তিনি অযোগ্য, চরিত্রহীন, লম্পট, অত্যাচারী, নিষ্ঠুর, জিঘাংসু, হিতাহিতজ্ঞানশূণ্য প্রভৃতি। তাঁর নিষ্ঠুরতার বায়বীয় বর্ণনা দিতে গিয়ে ইংরেজ ঐতিহাসিক ডডওয়েল লিখেছেন: ‘সিরাজ এতটাই নিষ্ঠুর ছিলেন যে, সে কৌতূহল মেটানোর জন্য গর্ভবতী মহিলার পেট চিরে দেখত ভেতরে কি আছে! শুধু তাই নয়, একথা পর্যন্ত তারা প্রমাণ করতে চেয়েছে, নবাবের পতন হয়েছে নিজেদের কোন্দলে, ইংরেজরা বরং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করেছে! ইংরেজদের কৃপাধন্য হিন্দু ঐতিহাসিক রাজীব লোচন লিখেছেন ‘যবন’ রাজত্বের অবসান ঘটানোর জন্যই হিন্দু আমাত্য-জমিদাররা উদ্যোগী হয়েছিলেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, পলাশীর এই যুদ্ধকে কোনো কোনো হিন্দু লেখক ‘দেবাসুর সংগ্রাম’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। এখানে দেবতা হলেন ক্লাইভ আর ‘অসুর’ ছিলেন বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে শহীদ নবাব সিরাজ। শুধু এখানেই থেমে থাকেনি বর্ণ হিন্দুরা, তারা পলাশীর শোকাবহ বিপর্যয়কে উপজীব্য করে বিজয় উৎসব পালনের লক্ষ্যে বাংলায় শারদীয় দূর্গোৎসব পালন করে লর্ড ক্লাইভকে দেবতাতুল্য সংবর্ধনা দেয় ১৭৫৭ সালে। ইতোপূর্বে বসন্তকালে এ দূর্গোৎসব পালন করা হতো।
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, শিক্ষা-সভ্যতায় আলোকিত সত্যিকার অসাম্প্রদায়িক চেতনাসমৃদ্ধ সুখী একটি জনপদ যে কীভাবে লুটপাট, অধিকার হরণ আর দুর্নীতির ফলে অতি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে চরম বিপর্যয়ে পতিত হতে পারে পলাশী পরবর্তী বাংলার ইতিহাস না পড়লে সেটা জানা কঠিন হবে। এতবড় বিপর্যয় ইতিহাসে খুব কমই দেখা যায়। পলাশী বিপর্যয়ের পর বাংলা ইংরেজ ও তাদের দেশীয় দালাল বর্ণহিন্দুদের লুটপাটের স্বর্গভূমি হয়ে উঠেছিল। পেটের দায়ে এদেশে আসা ইংরেজ ও তাদের দেশীয় সেবাদাস জগৎশেঠ গংরা রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়। ইংরেজরা এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দুর্নীতি আমদানি করে ব্যাপকভাবে। ব্রিটিশ সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৬ সাল পর্যন্ত মাত্র দশবছরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা ৬০ লাখ পাউন্ড আত্মসাৎ করেছিল। এই ব্যাপক লুণ্ঠনের ফলে ১৭৭০ সালে (বাংলা-১১৭৬) বাংলা-বিহারে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং কোটি মানুষ মৃত্যুর শিকারে পরিণত হয়। ‘ছিয়াত্তরের মনন্তর’ নামে পরিচিত এই মহাদুর্ভিক্ষে ইংরেজ গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ছিল এক কোটি পঞ্চাশ লাখ! শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয় শিক্ষা, ভাষা, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রেও পলাশী পরবর্তীকালে ব্যাপক বিপর্যয় ও নৈরাজ্য দেখা দেয়। ঐতিহাসিক ম্যাক্সমুলার উল্লেখ করেছেন যে, ইংরেজদের ক্ষমতা দখল কালে বাংলায় আশি হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রতি চারশ লোকের জন্য তখন একটি মাদরাসা ছিল। যে মাদরাসাগুলোতে হিন্দু-মুসলিম একই সাথে পড়া-শোনা করত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ যেখানে মিলেমিশে সমঅধিকার ভোগ করতো, সে সমাজে তাদের মধ্যেই চরম সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয় বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তি। মাদরাসাগুলোর অধিকাংশই ইংরেজ আমলে লুপ্ত হয়ে যায়। চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি থেকে মুসলিম শাসকরা ‘বাংলা’ নামক যে এক প্রকার স্বাধীন রাষ্ট্র পত্তন করে বাংলা ভাষাভিত্তিক লোকগোষ্ঠি গঠনের জন্য অবদান রেখেছিলেন পলাশী পর্যন্ত মুসলিম শাসকদের দ্বারা সে বাংলা ভাষার ধারাবাহিক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। ফোর্ট উইলিয়ামী ষড়যন্ত্র আর প্রসাদপুষ্ট ব্রা²ণ্যবাদী সংস্কৃত পন্ডিতদের হাতে বাংলা ভাষা রূপ ও সাহিত্যের গতি পাল্টে গেল। ফলে বাংলা ভাষা হয়ে উঠলো বাংলা হরফে সংস্কৃত লেখারই নামান্তর।
এই চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির চেয়েও বর্তমানে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, ইতিহাসের এ অন্ধকার দিকটিকে বিকৃত করে উপস্থাপন, ক্ষেত্র বিশেষে অস্বীকার করার একটা আত্মঘাতী প্রবণতা ইদানীং দেখা যায়। এরা কেন কী অথবা কাদের স্বার্থে জাতির অতীত ইতিহাসকে খন্ডিতভাবে বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছেন তা নতুন প্রজন্মকে বুঝতে হবে। প্রগতিশীল দাবিদার একশ্রেণির ঐতিহাসিক প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে, পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজরা জয়লাভ করলেও বাঙালিরা তাদের স্বাধীনতা হারায়নি। কারণ সিরাজ-উ-দ্দৌলাহ ও তাঁর আগের শাসকরা বহিরাগত এবং অবাঙালি! পলাশী সম্বন্ধে ইংরেজদের কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না, মুর্শিদাবাদ দরবারের অন্তর্দ্ব›দ্বই নাকি ইংরেজদের অনিবার্যভাবে বাংলার রাজনীতিতে টেনে এনেছিল ইত্যাদি ইত্যাদি!। এসব হলো মতলবী প্রচারণা, অলীক কল্পকাহিনী। আধিপত্যবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রচারণা যে কত মারাত্মক হতে পারে, তা পলাশী পরবর্তী বিকৃত ইতিহাসের ছড়াছড়ি থেকে প্রমাণিত। আজও নব্য আধিপত্যবাদী ও তাদের দোসরদের একই প্রকার অপপ্রচার দেখে স্তম্ভিত হতে হয়।
ইলিয়াস শাহী সালতানাতের পতনে রাজা গনেশ, পলাশীর যুদ্ধে জগৎশেঠ, রাজবল্লভদের ভূমিকা অনেক কিছুই চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিক্ষা দেয়। আমাদেরকে সে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। পলাশী দিবসের শিক্ষা আমাদের জাতিসত্তার বিকাশে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে। পলাশী হলো সেই আয়না, যা দিয়ে সেদিনের ও আজকের জাতীয় স্বার্থের বিরোধী, বহিঃশক্তির দালালদের সহজেই চেনা সম্ভব। সুতরাং এ দিবসের প্রকৃত শিক্ষা ও সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে উদ্যোগী হতে হবে আমাদেরকে। সাথে সাথে এদেশের স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা নবাব সিরাজের আদর্শকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। সম্প্রদায়িক ইঙ্গ-হিন্দু লিখিত পলাশীর বিকৃত ইতিহাসকে সরিয়ে সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে তা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। আর একটি পলাশী থেকে রক্ষা পেতে জাগ্রত হতে হবে এখনই। নব্য মীরজাফর-জগৎশেঠদের চিহ্নিত করতে হবে। যারা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে দেশ ও জাতির স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে তৎপর, যারা দেশের সার্বভৌমত্বকে অবমাননা করে ভিনদেশিদের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিতে প্রস্তুত, যারা নিজ দেশের সম্পদকে অপরের হাতে তুলে দিতে মরিয়া এদের ব্যাপারে সজাগ হয়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, নইলে পলাশী বিপর্যয়ের চেয়েও ভয়াবহ বিপর্যয় এ জনপদকে গ্রাস করবে।
লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন