শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গাড়ির ট্যাক্সের হার নিয়ে বিআরটিএর তোগলকি কান্ড

প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, প্রাইভেট কারের ট্যাক্সের টাকা আদায়ের নামে বিআরটিএতে তোগলকি কারবার শুরু হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত নিয়ম ছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গাড়ির ট্যাক্সের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রথম ৩ মাসে জরিমানা ধার্য করা হতো ১০ শতাংশ। সেই ৩ মাসে ট্যাক্সের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী ৩ মাসে ২০ শতাংশ ও তার পরবর্তী ৩ মাসে ৩০ শতাংশ হারে ক্রমানুসারে জরিমানা দিতে হতো। তাতেও যদি গাড়ির মালিকরা ব্যর্থ হতেন তাহলে ৮০ শতাংশ হারে জরিমানা করা হতো। গত মে মাস পর্যন্ত এই নিয়মই চালু ছিল। কিন্তু জুন মাস থেকে হঠাৎ করে কাউকে না জানিয়ে নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। এই নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখে গাড়ির ট্যাক্সের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে পরের দিন থেকেই আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। এর সাথে ফিটনেসের জরিমানা তো আছেই। এই জরিমানা ধার্য এবং আদায় করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সিএনএস (কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং সিস্টেম) নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর। বিআরটিএর এক শ্রেণীর অফিসারও স্বীকার করেন যে, এখন আর এ ব্যাপারে তাদের করার কিছুই নেই। কম্পিউটারে এমনভাবে সিস্টেম করা হয়েছে যে, একদিন ফেল করলেই দ্বিগুণ ট্যাক্স দিতে হবে। এই নতুন নিয়ম সম্পর্কে সরকার পূর্বাহ্নে কাউকে কিছু জানায়নি। কোন প্রজ্ঞাপনও জারি করেনি। গাড়ির মালিকরা বা তাদের ড্রাইভাররা বিআরটিএ অফিসে ট্যাক্সের টাকা জমা দিতে এসে নতুন নিয়মটি জানতে পারেন। ফলে টাকা দিতে এসে মানুষ একদিকে যেমন বিভ্রান্ত হচ্ছেন অন্যদিকে তেমনি বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। এই ধরনের কোন নিয়ম চালু হলে সাধারণত পূর্বাহ্নে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অথবা সার্কুলার দিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়। কিন্তু এ ধরনের কোন রকম প্রদক্ষেপ বিআরটিএর তরফ থেকে গাড়ির মালিক বা সংশ্লিষ্ট কাউকে জানানো হয়নি। যারা গাড়ির মালিক এবং গাড়ির সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে অকস্মাৎ এই ধরনের একটি নিয়ম চালু করা নজিরবিহীন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. শামছুল হক বলেন, যখন সরকার জরিমানা সংক্রান্ত কোন নির্দেশ জারি করেন তখন আইনের দৃষ্টিতে সেটি অবশ্যই যৌক্তিক হতে হয়। একটি ডেট লাইন ফেল করলে জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণ হবে, এমন নজির বা আইন বিশ্বের কোথাও নাই বলে তিনি দাবি করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এই নতুন নিয়ম সম্পর্কে অবহিত কিনা সে ব্যাপারে অনেক গাড়ির মালিক সন্দেহ প্রকাশ করেন। ইনকিলাবের ঐ রিপোর্ট পড়ে বোঝা যায় যে, এই নতুন নিয়ম চালু হওয়ার ব্যাপারে স্বয়ং বিআরটিএর চেয়ারম্যানও অন্ধকারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অর্থাৎ এনবিআর এই নিয়ম চালু করার সময় বিআরটিএর সাথে আলোচনা করেছেন বলে মনে হয় না। কারণ বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেছেন, এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে এনবিআর। বিআরটিএর অন্যান্য অফিসারও এ ব্যাপারে অজ্ঞ বলে মনে হয়। কারণ তারাও বলছেন, তারা এ ব্যাপারে অসহায়। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই নতুন নিয়মটি জারি করেছেন এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে ট্যাক্সের পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাই তাদের এ ব্যাপারে করার কিছু নেই। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিষয়টি সম্পর্কে অনবহিত বলেই মনে হচ্ছে। কারণ গাড়ির মালিকরা বলেন যে, বর্তমান সড়ক পরিবহন মন্ত্রী অত্যন্ত এ্যাকটিভ। সেতু, ব্রিজ এবং সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের ব্যাপারে তিনি সব সময় রাস্তায় অর্থাৎ ফিল্ডে থাকেন। সব বিষয় তিনি সরাসরি খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করেন। গাড়ির ট্যাক্স দ্বিগুণ করার ব্যাপারে তিনি যদি অবগত থাকতেন তাহলে বিআরটিএ এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারতো।
যারা গাড়ির মালিক তারা অভিযোগ করেন যে, এমনিতেই বিআরটিএ যে পরিমাণ ট্যাক্স আদায় করে সেই অনুপাতে তারা সার্ভিস দেয় না। প্রয়োজনের তুলনায় তাদের সার্ভিস অপ্রতুল এবং সন্তোষজনক নয়। সেখানে ট্যাক্সের পরিমাণ দ্বিগুণ করাটা আসলে গাড়ি ব্যাবহারকারীদের নিকট থেকে অধিক পরিমাণে অর্থ আদায়ের একটি কৌশল। ইতোপূর্বে ১০ শতাংশ হারে যে জরিমানা আদায় করা হতো সেই অর্থ যদি প্রদত্ত সার্ভিসের তুলনায় সন্তোষজনক না হয় তাহলে ট্যাক্সের টাকা দ্বিগুণ করা গাড়ি ব্যাবহারকারীদের পকেট কাটা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। এই অনাচার, এই তোগলকি কা- কেন ঘটলো, কারা এটি ঘটালো, সেটি অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনে সৎ ব্যক্তি বা সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। সে তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ওপর বিভিন্ন ধরনের যানবাহন মালিকদের আস্থা রয়েছে। এ ছাড়া এই ধরনের অনিয়ম এবং অনাচার প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি সেটিকে প্রশ্রয় দেন না। তিনি এ সব অনাচার দূর করার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আলোচ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে বিষয়টি তার নজরেও আনা যেতে পারে। এমনিতেই বিআরটিএর বিরুদ্ধে বড় ছোট নির্বিশেষে বিভিন্ন যানবাহন মালিক এবং চালকদের অভিযোগের অন্ত নেই। বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি বিআরটিএর কণ্ঠলগ্ন সহচরে পরিণত হয়েছে। তার ওপর আবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মত ট্যাক্সের টাকা নিয়ে জুলুমবাজি। বিষয়টি মন্ত্রী পর্যায়ে উত্থাপিত হওয়া উচিত। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে ফয়সালা করা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট সকলে মনে করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন