খরচ কম। লাভ বেশি। তাছাড়া করোনায় খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকারি প্রণোদনা ও কৃষকরা ধানের দাম বেশি পাওয়ায় অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার দেশে আউশ আবাদ বেড়েছে। আউশ ধানকে একসময় হেলাফেলা করে আবাদ হতো। এখন বোরো ও রোপা আমনের মতোই পরিকল্পিতভাবে আউশ আবাদ হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারাও কৃষকদের উৎসাহী করতে সক্ষম হয়েছেন আউশ আবাদে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (ফিল্ড সার্ভিস উইং) ড. আলহাজ উদ্দিন আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, অতীতে কৃষকরা হেলাফেলা করেই আউশ আবাদ করতেন। এবার সারাদেশেই খুব জোরেশোরে বপন নয়, রোপন আউশ আবাদ হয়েছে। তিনি জানান, আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সারাদেশে ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৬ শ’ হেক্টর জমি। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন চাল। আউশ আবাদ প্রায় শেষ।
মঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ড. আখতারুজ্জামান জানান, আউশে স্থানীয় জাতের আবাদ এখন হয় না বললেই চলে। উচ্চ ফলনশীল জাতের আউশ আবাদ হয় সিংহভাগ। ব্রি-ধান ৪৮ ও বিনা ধান-১৯ জাতের আউশ আবাদ হচ্ছে বেশি। এর ফলনও ভালো। হেক্টরে ৬/৭ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অতীতে আউশ আবাদ খুবই কম হতো। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বড়জোর ৯/১০ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হতো। চলতি মৌসুমে বেড়ে গেছে অনেক। করোনাকালে আউশ ধানে খাদ্য নিরাপত্তায় বিরাট সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, আউশ আবাদে সরকার প্রণোদনা দেয়া ছাড়াও সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও কৃষি উপকরণ সহায়তা দিয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করেছে। প্রযুক্তিও মাঠে পৌছানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বোরো ও রোপা আমন আবাদে যেভাবে সেচ ও সারের খরচ যোগাতে হয়, আউশে তা লাগে না। সময়ও কম লাগে। মাত্র ৯০ দিনে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারে। আর বোরোতে ১৪৫ দিন ও রোপা আমনে সময় লাগে ১৩০ দিন। অল্পদিনে কম খরচে বেশি লাভের ফসল হিসেবে আউশ নতুন পরিচিতি পাচ্ছে।
কৃষকদের কথা, আউশ আবাদ বরাবরই হতো, তবে পরিকল্পিতভাবে নয়, একেবারে হেলাফেলা করে। কৃষকদের কেউ জমি ফেলে রাখতেন, কেউবা বোরোর পর রবি ফসলের আগে কোনরকমে অফ চাঞ্চে আউশ আবাদ করতেন। এখন এর ব্যতিক্রম ঘটছে।
কৃষকরা আরো জানান, এবার ধানের দাম ভালো পাওয়া গেছে। তাই ধান আবাদে প্রচন্ড আগ্রহ বেড়েছে। বললেন, সাধারণত বোরোতে পানির অভাব হয়, রোপা আমন আবাদে প্রথমদিকে বন্যার শঙ্কা ও শেষদিকে খরা। যার কারণে আবাদ অনেকটাই হয় ঝুঁকিপূর্ণ। আর প্রকৃতিনির্ভর আউশ আবাদে কোন ঝুঁকি নেই। আষাঢ়ে আবাদ মৌসুম হওয়ায় বৃষ্টির পানিতেই বীজতলা তৈরি ও রোপন করা হয়। এসব কারণে আউশ ধান আবাদ ও উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছেন কৃষকরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন