মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভারতকে এখন আর ওয়ান অ্যান্ড অনলি ভাবার কারণ নেই

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২০, ১২:০৪ এএম

ভারত কি তার প্রতিবেশীদের দ্বারা কোনঠাসা হয়ে পড়ছে? জবাবে বলা যায়, একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া তার অন্য সব প্রতিবেশী দ্বারা এক ধরনের কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছে। তারা ভারতকে থোড়াই কেয়ার করছে। চীন রীতিমতো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে এবং তার সাথে লাগতে এলে মার খেতে হবে, এমন মনোভাব দেখাচ্ছে। অন্যদিকে ভারত চীনের ৫৯টি অ্যাপ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন ভারতীয় সব নিউজ চ্যানেল এবং মিডিয়া ওয়েবসাইটগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। নেপাল ভারতকে এখন পাত্তাই দিচ্ছে না। একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে তটস্থ করে রেখেছে। সম্প্রতি দেশটি ভারতকে উপেক্ষা করে সীমান্তের লিপুলেখ, লিম্পুয়াধারা ও কালাপানির মতো বিতর্কিত এলাকা মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সর্বশেষ অভিন্ন নদীগুলোর বন্যা ও সেচের পানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। নেপাল ও ভারত সীমান্তে গন্ডক নদীর ওপর যে ব্যারাজ রয়েছে, তার রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ভারতকে বারবার বাধা দিচ্ছে সে। এটা কি ভাবা যায়, যেখানে ভারতের দাদাগিরিতে একসময় নেপাল কোনো কথা বলত না, সেই নেপালই এখন তার নিজ স্বার্থে ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতিবাদ ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে! অন্যদিকে ভুটানের মতো নির্বিবাদী শান্তিপ্রিয় একটি ছোট্ট দেশও ভারতের আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর হয়ে উঠছে। সম্প্রতি দেশটি আসামের বাকসা চ্যানেল দিয়ে ভুটান থেকে আসা পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আসামের হাজার হাজার কৃষক পানির দাবীতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। ভুটান কেন পানি বন্ধ করে দিল, এ নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। ভারতও এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ ছাড়া কিছু বলতে পারছে না। অন্যদিকে পাকিস্তানের সাথে ভারতের চিরবৈরী সম্পর্ক বজায় রয়েছে। এখন পাকিস্তান সীমান্তে তার সৈন্য সংখ্যা বাড়াচ্ছে। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপও তাকে তেয়াক্কা করছে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের সাথে তার অন্য ছোট-বড় সব প্রতিবেশীর সাথেই সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। তারা ভারতকে পাত্তা না দিয়ে আত্মমর্যাদা বজায় রেখে নিজেদের মতো করে চলছে। বিশ্বের আর দশটি দেশের মতো পারস্পরিক কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থে যতটুকু স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখা যায়, তাই রাখছে। আমাদের মতো গলা ফাটিয়ে বলছে না, ভারত আমাদের সর্বোৎকৃষ্ট বন্ধু। এমন বন্ধু বিশ্বে আর নাই। এখানেই বাংলাদেশ ও ভারতের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মৌলিক পার্থক্য। এ নিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুঃখের অন্ত নেই। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনের এই দুঃখ প্রকাশ করছে। এই সময়ে যখন ভারতের অন্যায় আচরণ ও দাদাগিরির বিরুদ্ধে তার অন্যান্য প্রতিবেশী রুখে দাঁড়িয়েছে এবং সে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে, তখন আমাদের সরকার ও বিরোধী দলগুলো তার অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিবাদ করছে না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, চীনের সাথে সাম্প্রতিক কমবেট ফাইটে দেশটির ২০ সেনাসদস্য যখন নিহত হয়, তখন মোদি সরকার তার দেশের মানুষকে চীনা পণ্য বর্জনের আহবান জানায়। দেখা গেল, এই আহবানে তার জনগণ সাড়া না দিয়ে উল্টো চীনা পণ্যের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের বৃহৎ শিল্প গাড়ি ও ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো বলেছে, এটি করার চেয়ে বলা সহজ। তারা এতে রাজী নয়। অর্থাৎ মোদি সরকার ঘরে-বাইরে উভয় দিক থেকেই বিপাকে রয়েছে এবং বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছে। উভয় সংকটে পড়ে এক ধরনের নাজেহাল অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদেরকেও যে ঘুরে দাঁড়ানো দরকার এবং ভারতের অন্যায্য আচরণ, আবদার ও অযাচিত নানা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার উপযুক্ত সময়, তা যেন আমাদের সরকার ও বিরোধী দলগুলো উপেক্ষা করে চলেছে। ভারত তার এই সংকটকালেও সীমান্তে প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করছে, নানাভাবে নির্যাতন করে চলেছে। সরকার এবং বিরোধীদলগুলোর এমন প্রতিবাদহীন ভূমিকা শুধু দুঃখজনকই নয়, অসম্মানেরও।

দুই.
করোনার ধাক্কায় বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতি পুরোপুরি বদলে গেছে। করোনা পরবর্তী বিশ্ব যে এক অন্যরূপে আবির্ভূত হবে, তার নমুনা এখন দেখা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, প্রত্যেক দেশই নিজ নিজ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতি এবং ধারা পরিবর্তনে মনোযোগী হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় কীভাবে টিকে থাকা যায়, এ পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। পরিবর্তীত বিশ্বে যেসব দেশ অর্থনীতির মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াবে, তাদেরই আধিপত্য থাকবে। সবদেশই সেসব দেশের সাথে সম্পর্ক গভীর করার জন্য ঝুঁকবে। আমরা যদি, এ সময়ে বিশ্বের দিকে তাকাই তবে দেখব, বিশ্বের পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত এবং একক আধিপত্যবাদের দাবীদার যুক্তরাষ্ট্র রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে খাবি খাচ্ছে। দেশটির বেকার সমস্যা থেকে শুরু করে অর্থনীতির সবক্ষেত্র নেতিবাচকের দিকে। ফলে দেশটি বিশ্বে তার আধিপত্য হারানোর শঙ্কায় রয়েছে। এক্ষেত্রে চীন যে অর্থনীতি ও সমরশক্তি নিয়ে আবির্ভূত হবে, তা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে দেশটির নীতি সমরশক্তি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আধিপত্য বিস্তার বা হামলা করা নয়। তার নীতি হচ্ছে, সবকিছুর নিয়ন্ত্রক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করা। যে দেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দরকার সে দেশে তা করে দেশগুলোকে কাছে টেনে নেয়া। হুমকি-ধমকি দিয়ে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো মদদ দিয়ে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে ফায়দা লুটা নয়। কোন সরকারকে রাখতে হবে, কাকে ফেলতে হবে বা কাকে ক্ষমতায় বসাতে হবে-এই অপনীতি কিংবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি করে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করা নয়। চীন ভাল করেই জানে, সন্ত্রাস সৃষ্টি ও হামলা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে মিত্র রাষ্ট্রগুলোকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি নিজের অবস্থান সুসংহত করার মধ্যেই বিশ্বশান্তি নিহিত। চীনের এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নীতি এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ বিশ্বের অনেক দেশ সাদরে গ্রহণ করছে। তারা আগ্রাসী ও সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রকে পাশ কাটিয়ে চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে এক ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ বা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। চীনা বিশ্ব অর্থনৈতিক নীতির এ রেসে অনেক দেশই যুক্ত হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও এখন তাকে সমীহ করে চলতে বাধ্য হচ্ছে। বলা যায়, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য খর্ব হচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর যেভাবে সারাবিশ্বে সে ছড়ি ঘুরিয়েছে এবং ঘুরাচ্ছে, তা হ্রাস পাচ্ছে। চীনের উত্থান এই আধিপত্যে একটা ভারসাম্য নিয়ে এসেছে এবং তার সুনীতিমূলক নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও তা উপলব্ধি করে চীনের সাথে দ্ব›েদ্ব জড়াতে চাচ্ছে না। তবে তার আধিপত্য দেখাতে মাঝে মাঝে চীন সংলগ্ন সাগর-মহাসাগরে যুদ্ধ জাহাজের মহড়া দিয়ে থাকে। এর পাল্টা জবাবও চীন দিয়ে দিচ্ছে। চীনের শক্তিশালী অর্থনীতিকে কাবু করতে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির পণ্যের ওপর অধিক শুল্ক বা আমদানিতে বিধি-নিষেধ আরোপ করেও পাত্তা পায়নি। শেষ পর্যন্ত চীনের সাথে তাকে সমঝোতায় যেতে হয়েছে। অন্যদিকে প্রতিবেশীদের সাথে আগ্রাসী আচরণ করা ভারত চীনের অর্থনীতির সাথে যুক্ত হতে গিয়ে উল্টো বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। সে ভেবেছিল এ বিবাদে তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গী হিসেবে পাবে। দেখা গেল, প্রতিবেশী বেশিরভাগ দেশই তার সাথে নেই। উল্টো চীনের বিশ্বনীতির সাথে এক হয়ে নিজের উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে এবং ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছে। চীন অত্যন্ত সুকৌশলে দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করেছে। ফলে দেশগুলোর অর্থনীতি যেমন গতি পাচ্ছে, তেমনি ভারতের আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতেও শক্তি সঞ্চয় করেছে। ভারত ভেবেছিল, তার প্রভাব বলয়ের মধ্যে থাকা এসব দেশ আগের মতোই তার ধমকে চুপসে যাবে এবং সে তার স্বার্থ হাসিল করতে পারবে। লাদাখে চীনের সাথে কমবেট ফাইটে পরাজিত হওয়ার পর দেখা গেল, দেশগুলো তার পাশে নেই, উল্টো তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। তাদের এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এটাই প্রতিভাত হয়, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ আর ভারতের হুমকি-ধমকি বা প্রভাবকে পরোয়া করে না। ভারত এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এবং তার অন্তর্জ্বালাও বেড়ে গেছে। এই জ্বালা সে আমাদের ওপর মিটাচ্ছে। চীনের কাছে মার খেয়ে, নেপাল ও ভুটানের তোয়াক্কা না করায় তার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তার রাগ এবং রোশ যেন আমাদের উপর ঢেলে দিচ্ছে, সীমান্তে মানুষ হত্যা ও নির্যাতন করে।

তিন.
করোনা যে উপমহাদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এবং এ ক্ষেত্রে সত্যিকারের বন্ধু হয়ে চীন এ পরিবর্তনের সহায়ক ভূমিকা পালন করছে, তা আমাদের দেশের সরকার এবং বিরোধী দল বিশেষ করে অন্যতম বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি কতটা উপলব্ধি করতে পারছে, তা স্পষ্ট নয়। অথচ বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তনের এ ধারাটি তাদের উপলব্দি করতে না পারা যে পিছিয়ে পড়া, তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এটা সবাই জানে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভারতের শত অন্যায্য আচরণে কোনো রা শব্দ করবে না। তার কাছে, ভারতই বিশ্বের ‘ওয়ান অ্যান্ড অনলি’ বন্ধু হয়ে রয়েছে। ভারতের কাছে তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এই একতরফা কৃতজ্ঞতা যে ক্ষমতায় থাকাকে কেন্দ্র করে, তা সবাই জানে। দলটির ক্ষমতায় আসা এবং থাকার ক্ষেত্রে নির্বাচনের কথা বলা হলেও তা যে লোক দেখানো ছিল এবং এর নেপথ্যের মূল শক্তি ভারত, এ কথাও তারা জানে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বিএনপিও আওয়ামী লীগের এই পথ অনুসরণ করতে গিয়ে ভারতকে ম্যানেজ করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপের বিষয়টি উপলব্ধি করে ভারতকে তার দিকে টানার নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে থাকে। গত নির্বাচনের প্রায় ৬ মাস আগে দলটির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করে এবং বিজেপি’র সাথে বৈঠক করে অতীতে ভারত সম্পর্কে তার ভ্রান্ত নীতির কথা বলে প্রশংসা করে। এ সংবাদ ভারতসহ দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এভাবে দলটি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নানাভাবে বিজেপি সরকারকে কাছে টানার চেষ্টা করে। এ চেষ্টার কারণ, আওয়ামী লীগের মতো তাদেরকেও যাতে পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসতে বিজেপি সহযোগিতা বা পরামর্শ দেয়। দেখা গেল, দলটির সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে বিজেপি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রেখে চলেছে। পাল্লা দিয়ে দুই দলের এই ভারত তোয়াজের নীতি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কখনোই পছন্দ করেনি, করছেও না। দুঃখের বিষয়, বিএনপির এক সময়ের ভারতের অন্যায় আবদারের বিরোধী নীতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পছন্দ করলেও দলটি তা পেছনে ফেলে ভারত তোষণ নীতি অবলম্বন করে। মানুষ মনে করত, অন্তত বিএনপি ভারতের সাথে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি এবং তার ‘যা চাইব, তা দিতে হবে’ এমন নীতি সমর্থন করবে না। মানুষের এই বিশ্বাস বিএনপি রাখতে পারেনি এবং পারছে না। জনগণের অতিপ্রত্যাশিত এ আশায় গুঁড়ে বালি দিয়ে এখনও সে ভারতের আনুকূল্য পাওয়ার আশায় বসে আছে। যদি তা না চাইত তবে, ভারত যে তার অন্য প্রতিবেশীদের দ্বারা নাজেহাল হয়ে আমাদের সীমান্তে মানুষ হত্যা ও নির্যাতন করে চলেছে, এর জোর বিরোধিতা করত। নিদেন পক্ষে, কয়েক দিন আগে চীন বাংলাদেশকে যে আট হাজারের বেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ায় কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা তেলেবেগুণে জ্বলে ওঠে ‘খয়রাতি’ সুবিধা উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তার প্রতিবাদ করত। আমাদের প্রতি ভারতের চলমান বিরূপ আচরণের বিরুদ্ধে দলটি কোনো ধরনের প্রতিবাদ না করে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। দলটি কি এখনো মনে করছে, একদিন না একদিন তার প্রতি ভারতের মন গলবে এবং ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করবে? বিএনপি নেতারা যদি সত্যিই এটা ভেবে থাকেন এবং বিশ্বাস করেন, তবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। এই যে চীন, বাংলাদেশী পণ্য তার দেশে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে, করোনার সময় চিকিৎসা ব্যবস্থার সব ধরনের সুবিধা দিচ্ছে, তার উৎপাদিত টিকার পরীক্ষা বাংলাদেশে চালাবে এবং এ টিকা সবার আগে বাংলাদেশ পাবে, দেশটির এসব সুবিধা দেয়াকে কেন্দ্র করেও তো বিএনপি চীনের প্রশংসা করতে পারত। এতে যে কূটনৈতিকভাবে ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা’ হয়ে যাবে, এ বিষয়টিও কি সে বুঝতে পারছে না? চীনের প্রশংসা এবং তার বাড়িয়ে দেয়া হাত শক্ত করে ধরলে যে, দেশটিকে কাছে পাওয়া আর কৌশলে ভারতের বিরোধিতা করা হবে, এ বিষয়টি একজন সাধারণ মানুষও বোঝে। আওয়ামী লীগ তো এই দুই দিকেই খেলছে। যদিও সে মনে করে, তার ক্ষমতায় থাকার জন্য এখনও ভারতের প্রয়োজন রয়েছে। আর বিএনপির যে এর কোনোটিই নেই, তা দিবালোকের মতোই স্পষ্ট হয়ে রয়েছে।

চার.
বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে এক নতুন ধারা শুরু হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক মহামন্দা মোকাবেলায় প্রত্যেক দেশ তার নিজের ঘর গোছাতে ব্যস্ততার পাশাপাশি আগামী বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে এমন দেশের সাথে সম্পর্ক গভীর করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। আফসোসের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশের দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার মতো কূপমুন্ডুকতায় আবদ্ধ হয়ে একদেশদর্শী নীতি অবলম্বন করে চলেছে। এক্ষেত্রে উভয়েই ‘ওয়ান অ্যান্ড ওনলি’ হিসেবে ভারতকে আঁকড়ে ধরে আছে এবং আঁকড়ে ধরার চেষ্ট চালিয়ে যাচ্ছে। যে ভারত নিজেই ডুবে যাচ্ছে এবং অন্য প্রতিবেশী দেশগুলো পাত্তা দিচ্ছে না, তাকে দিয়ে আমাদের যে কোনো উপকার হবে না, এ বিষয়টি উভয় দলই মানতে চাচ্ছে না। অথচ ভারতের আধিপত্যবাদ থেকে আমাদের বের হয়ে আসার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। সীমান্তে ভারত নানা অজুহাতে যেভাবে গুলি করে বাংলাদেশী মারছে, আত্মরক্ষার্থে আমরা যদি তা প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ করি, তাহলে সে আমাদেরকে কি করবে? খেয়ে ফেলবে? এ অবস্থায় কি সে আছে? এ হিসাবটি কি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বোঝে না? আমরা যদি তার প্রতিবাদ না করে এখনও নতজানু হয়ে থাকি, তাহলে ভারত যখন নাজুক অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াবে, তখন সে কি আমাদের ওপর আরও ঝেঁকে বসবে না? এটাই কি দেশের প্রধান দুই দল চায়? অন্যদিকে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ সময়কে কাজে লাগিয়ে ভারতের প্রভাব বলয় থেকে যে বের হয়ে গেল, ভারত কি আর আগের মতো তাদের ওপর খবরদারি করতে পারবে? পারবে না। বিশ্ব ও উপমহাদেশের এ সময়ের রাজনীতির এই সরল অংকটি আমাদের উভয় দলই বুঝতে অক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
Monir Howlader ৩ জুলাই, ২০২০, ১:১২ এএম says : 1
ঠিকই বলছেন।
Total Reply(0)
AB Rahaman ৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 1
পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি হলো ভারতীয়। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত বিশ্বাস করে না। এরা মুনাফেক, বেইমান,অসভ্য। প্রতিদিন মুসলমানদেরকে হত্যা করছে, আমাদের বর্ডারে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। আমাদের সবাইকে ভারতীয় পণ্য বর্জন করা উচিত।
Total Reply(0)
Alamin ৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
যদি নিজেদেরকে আমরা নিজেরাই পরিবর্তন না করি তাহলে বন্ধু দিয়ে কাজ হবে না। সবাই নিজের স্বার্থ বুঝে, আর আমরা বুঝি প্রতিবেশীর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পেশাদারিত্ব দেখানো এখন সময়ের দাবি। বিড়ালের attitude টা এখন ছাড়া দরকার।
Total Reply(0)
Sohel Mahmud ৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
দক্ষিন এশিয়াতে যা হচ্ছে তাতে আমাদের কোন পক্ষ নেওয়ার চিন্তা বোকামি , তবে নিজেদের মূল্য বুঝে আগামীর দিন গুলোর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে
Total Reply(0)
J Alam ৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 1
অসাধারণ একটি সময়োপযোগী লেখা
Total Reply(0)
Md Afzal Hossain ৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৮ এএম says : 0
একেবারে সাধারণ আম জনতার মনের কথাগুলো তুলে ধরেছেন সেই জন্য ইন ক্লাব কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার হৃদয়ের মধ্যে থেকে
Total Reply(0)
ইব্রাহিম খলিল ৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৮ এএম says : 1
খুবই অসাধারন লিখেছেন এ পর্যন্ত এমন লেখা কোনো নিউজে দেখিনি যা দেখেছি সব ভারতের পা চাটা দালালিতে ভরপুর। আজ মনে হলো দেশের জন্য এখনও অনেক নীতিবান মানুষ ভাবে। আমাদের এখনি সময় ঘুরে দাঁড়ানোর না হয় সারা জীবন ভারতের পায়ের তলায় থাকতে হবে। এখনি সময় সরকারে ভারতের পা চাটা বন্ধ করা। ভারত চিন নেপালের মার খেয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে সাধারন বাংলাদেশের মানুষকে পাখীর মতো গুলি করে মেরে তারা চীন নেপালের জীদ মজায় আর আমাদের দেশের সরকার হাসি মুখে সেই লাশ নিয়ে আসে জী হুজুর জী হুজুর করতে করতে।
Total Reply(0)
বাতি ঘর ৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৯ এএম says : 1
ভারত যেভাবে আমাদের বাংলাদেশের সাথে জনগণের সাথে প্রতারণা করে আসছে এখনই সুযোগ তাদেরকে সময়সূচী জবাব দেওয়া তারা নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কাউর দুঃখ ভরা বেদনার কথা তারা শোনে না তাই এখনই আমাদের বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে তার একগুঁয়েমি ভাবের জবাব দিয়া
Total Reply(0)
মু হিব বুল্লাহ ৩ জুলাই, ২০২০, ১:২০ এএম says : 0
আমাদের লজ্জা কম ।
Total Reply(0)
মু হিব বুল্লাহ ৩ জুলাই, ২০২০, ১:২০ এএম says : 0
আমাদের লজ্জা কম ।
Total Reply(0)
Nannu chowhan ৩ জুলাই, ২০২০, ৬:১২ এএম says : 0
Likhok mohadoy ,boro shondorvabe amader shorkari o birudhi dolke chokhe angul dia dekhaia dilen tarporo jodi tader chokh mukh na khole tahole bujhte hobe eai desher rajnitibider chaite shadharon manusher chokkhu kan onek khola ebong shochenota onek beshi desher shartho shomporke,ebong eaishob rajnitibidder itihasher asta kure nikkhep kora ochit...
Total Reply(0)
Jack Ali ৪ জুলাই, ২০২০, ৯:০২ পিএম says : 0
Our Government is a slave of India.. They want to remain power as such they need India.. We need a muslim government who will rule our country by the Creator who created us then nobody dare to point a finger to us,, we also slave of Barbarian Myanmar.. Muslim do not fear anybody except Allah as such muslim used to rule half of the world.. May Allah's curse upon them because they have insulted our muslim in our Beloved Country.
Total Reply(0)
জুয়েল ৬ জুলাই, ২০২০, ২:২২ পিএম says : 0
রাইট
Total Reply(0)
জুয়েল ৬ জুলাই, ২০২০, ২:২৩ পিএম says : 0
রাইট
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন