মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুরোগ চিকিৎসায় হোমিও নিরাময়

| প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২০, ১২:০৩ এএম

করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে মশা বাহিত ডেঙ্গুরোগ আমাদের দেশে গত বছরের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। কারণ দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে গত বছর সবচেয়ে বেশি মানুষ মৃত্যু বরণ করেছে ও আক্রান্ত হয়েছে। 

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ২৯৬ জন ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত বলে শানাক্ত হলেও কোনো মৃত্যু হয়নি। তবে গত বছরে এ সময়ে মাত্র ১৩১ জন আক্রান্ত হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের দিকে প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে।
এটি একটি সংক্রামক ট্রপিক্যাল ডিজিজ যা ডেঙ্গু ভাইরাস-এর কারণে হয়। রোগটি সর্বপ্রথম স্কটল্যান্ডের ডান্ডিতে মহামারী আকারে দেখা দেয়। তাই এ জ্বরকে ডান্ডি জ্বর বলেও ডাকা হয়। এটি বহু ব্যপক ও অল্পদিন স্থায়ী জ্বর বিশেষ। বর্ষার সময়ে এডিস মশা দ্বারা এই জ্বর বেশী বিস্তার লাভ করে। ডেঙ্গু জীবাণুবাহী মশা কামড়ানোর পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে সাধারণত রোগের উপসর্গ দেখা যায়। কিছু কিছু ডেঙ্গু রোগী কোনো উপসর্গ ছাড়াই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। যে উপসর্গগুলি দেখা যায় তার মধ্যে আছে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি এবং গাঁটে ব্যথা এবং ত্বকে র‌্যাশ যা হাম জ্বরের সমতুল্য। অনেক ব্যথার কারনে কেউ কেউ একে ব্রেকবোন ফিভার বা হাড়ভাঙ্গা জ্বর বলে। স্বল্প ক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার-এ পর্যবসিত হয়, যার ফলে রক্তপাত, রক্ত অনুচক্রিকার কম মাত্রা এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ হয়। কখনও কখনও ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম-এ পর্যবসিত হয়, যেখানে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।
তাই এ জ্বরকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়-সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর ও হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর।
এই জ্বরের প্রাকৃতিক ইতিহাস : সামান্য শীতভাব ও চোখমুখে লালিমাসহ প্রবল জ্বর হয়। জ্বর ১০২ হতে ১০৫ ডিগ্রী পর্যন্ত হতে পারে। সর্বশরীরে বিশেষত: চক্ষুগোলকের উপরিভাগে, চক্ষুগোলক, কোমড়ে বেদনা করে। রোগী নিদারুন যন্ত্রনায় কাতর হয়ে পরে। জিহ্বা শুষ্ক, ময়লাবৃত, বমি ভাব, কোষ্ঠবদ্ধতা উপস্থিত হয়। চোখ রক্তবর্ণ ধারন করে। মুখে ফোলা ভাব দেখা দেয়। এইরুপ দুই তিন দিন চলে পরে চতুর্থ দিনে পুনরায় জ্বর রেড়ে যেতে পারে। এর সাথে হামের মত উদ্ভেদ দেখা দিতে পারে। ২/৩ দিন পরে মিলিয়ে যায়। কিন্তু জ্বর শেষে অত্যন্ত দূর্বলতা, অক্ষুধা, মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরে উত্তাপের তুলনায় নাড়ীর গতি কম থাকে। রক্তে শ্বেত কনিকার ও অণুচক্রিকার অভাব দেখা দেয় ও ইসিনোফিলের পরিমান বেড়ে যায়। অনেক সময় এই অসুখের সাথে ইন্ফুয়েঞ্জা ও বাতজ্বরের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সমস্যা হয়।
★হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর : জ্বর ভাল হওয়ার পর বা জ্বরের শেষের দিকে হেমোরেজিক জ্বর দেখা দেয়। ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়, ত্বক ছুলে আঁঠালো ও শীতল অনুভূত হয়। ভীষণ পেটব্যথা থাকতে পারে। প্রথম দিকে মাড়ি, নাক, মুখ বা ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ত্বকের নিচে কালো বর্ণের চাকা চাকা দাগ হতে পারে। শিশুরা অনবরত কাঁদতে থাকে। খুব পিপাসা পায়। শ্বাসকষ্ট হতে পারে, মাঝে মধ্যে বমিও হয়। বমিতে রক্ত নাও থাকতে পারে। কালো আলকাতরার মত পায়খানা হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের জটিল অবস্থাকে বলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এ অবস্থায় হৃৎকম্পন বেড়ে যায়। রক্তচাপ কমে যায়। হাত-পাসহ সারা শরীর শীতল হয়ে যায়। একপর্যায়ে রোগী মূর্ছা যেতে পারে। রোগীর খুব অস্থিরতাবোধ, একই সঙ্গে ঘুম ঘুম ভাব দেখা যায়।
করণীয় : বেশিরভাগ ডেঙ্গু জ্বরই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায় এবং অধিকাংশই ভয়াবহ নয়। যথেষ্ট পরিমাণ পানি খান, বিশ্রাম নিন এবং প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার গ্রহণ করুন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে উচ্চ তাপমাত্রা রোধ করতে শরীর পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। খাবার স্যালাইন দিতে হবে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে। তাকে পূর্ণ বিশ্রামে রেখে বেশি করে পানি খেতে দিতে হবে। প্রয়োজনে শিরায় প্রয়োজনীয় ফ্লুইড দিতে হয় বা রক্ত দিতে হয়।
হোমিওপ্রতিবিধানঃ
রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা করা হয়, তাই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর রোগের পুরা লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে আল্লাহর রহমতে হোমিওতে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
হোমিও চিকিৎসা.
অভিজ্ঞ চিকিৎসকগন যেই সব ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন-একোনাইট, বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া, রাসটক্স, ইউপেটেরিয়াম পার্ফ, আর্সেনিক এলবাম, কার্বোভেজ, ইপিকাক, সালফার সহ আরো অনেক ঔষুধ লক্ষণের উপর আসতে পারে।
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ইমেইল: drmazed96@gmail.com
মেবাইল: ০১৮২২৮৬৯৩৮৯।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন