সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মৃতের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক। ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যপী সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনা ভাইরাস কি : করোনা ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটি এক ধরনের করোনা ভাইরাস। ভাইরাসটির অনেক রকম প্রজাতি আছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সয়ংক্রমিত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতোমধ্যে ‘মিউটেট করছে’, অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। এ ভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে হাঁচি কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে আরেকজন মানুষের নাক, মুখ, চোখ দিয়ে ঢুকে পড়ছে।
কতটা ভয়ংকর এই ভাইরাস : এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে বেশী মাত্রায় সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্র হতে হাঁচি কাশির মাধ্যমে তা একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। দেখা যাচ্ছে, সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি, কাশির মাধ্যমে। তবে এর পরিণামে দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের প্রায় দুই শতাংশ মারা গেছেন, হয়তো আরও মৃত্যু হতে পারে। তাছাড়া এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা চিহ্নিত হয়নি। তাই এ ভাইরাস ঠিক কতটা ভয়ংকর, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
করোনা সংক্রমণের লক্ষণ কি : করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর এবং কাশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং তখনই কোন কোন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
কীভাবে ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস : মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। তবে ঠিক কীভাবে এর সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সম্ভবত কোন প্রাণী এর উৎস ছিল। প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোনও মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে উহান শহরে সামুদ্রিক প্রাণীর একটি বাজারের কথা বলা হচ্ছে। শহরটির ঐ বাজারে গিয়েছিল এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো। কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেমন বেলুগা জাতীয় তিমি করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে। তবে উহানের ওই বাজারে মুরগি, বাদুড়, খরগোশ এবং সাপও বিক্রি হতো।
করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা কি : ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনই এর কোন টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এমনকি এমন কোন চিকিৎসাও নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে মানুষকে নিয়মিত হাত ভালোভাবে ধোয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। হাঁচি, কাশির সময় নাক, মুখ ঢেকে রাখা এবং ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছে তারা। এশিয়ার বহু অংশের মানুষ সার্জিক্যাল মুখোশ পরা শুরু করে ভাল ফল পাচ্ছে। আপাতত প্রতিকার হিসেবে এ ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। ডাক্তারদের পরামর্শ, বারবার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক, মুখ স্পর্শ না করা ও ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা।
এখন পর্যন্ত ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি, সেহেতু প্রতিরোধী চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম। আর প্রতিরোধী হারবাল চিকিৎসাও ভাল কাজ করবে। এক্ষেত্রে আমরা ভাইরাস নির্মুল ও প্রতিরোধী হারবাল যেমন কালোজিরা, কাঁচা হলুদ, নিম, নিসিন্দা, তুলসি প্রভৃতি কার্যকর।
ডা. আলমগীর মতি
বিশিষ্ট হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক,
চেয়ারম্যান মডার্ণ হারবাল গ্রুপ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন