শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সিরাজের নির্মম হত্যায় ইংরেজ শাসনের সূচনা

বাংলার স্বাধীনতা হারানোর ইতিহাস-১

বিবিসি বাংলা | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

২৩ জুন, ১৭৫৭ সাল। পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তার রাজধানী প্রায় ৫০ মাইল দূরে - মুর্শিদাবাদে। সারা রাত উটের পিঠে চেপে পরের দিন ভোরেই সিরাজ পৌঁছেছিলেন রাজধানীতে। মীর জাফর আর রবার্ট ক্লাইভ তখনও পলাশীর প্রান্তরেই রয়েছেন।

পরের দিন সকালে রবার্ট ক্লাইভ একটি চিরকুট পাঠালেন মীর জাফরের কাছে। লেখা ছিল: ‘এই জয়ের জন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই। এই জয় আমার নয়, আপনার। আশাকরি আপনাকে নবাব ঘোষণা করতে পেরে নিজে সম্মানিত হতে পারব’।
এই চিরকুট পাঠানোর আগে, যুদ্ধ জয়ের পরের দিন সকালেই মীর জাফর গিয়েছিলেন ইংরেজদের শিবিরে, রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে দেখা করতে। কিছুটা পরিশ্রান্ত, কিছুটা চিন্তিত লাগছিল তাকে।
ইংরেজ সৈনিকরা তাকে নিয়ে গিয়েছিল কর্নেল ক্লাইভের তাঁবুতে। রবার্ট ক্লাইভ তখনও লর্ড হননি, কর্নেল ক্লাইভ তিনি তখন। ক্লাইভ মীর জাফরকে বললেন, ‘আপনার এখনই রাজধানী মুর্শিদাবাদের দিকে রওনা হওয়া উচিত। শহরটা নিজের কব্জায় করে ফেলুন। আপনার সঙ্গে কর্নেল ওয়াটসও যাবেন’। ক্লাইভ তার নিজের সেনাদের নিয়ে পেছনে পেছনে চললেন।
সিরাজ যে দূরত্ব এক রাতের মধ্যে পার করেছিলেন, সেই ৫০ মাইল পেরুতে ক্লাইভ আর তার বাহিনীর লেগে গেল তিন দিন। রাস্তার নানা জায়গায় তোপ দাগার ফলে গর্ত, ভেঙে পড়া গাড়ি আর সিরাজউদ্দৌলার সৈনিক আর ঘোড়ার মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিল। স্যার প্যান্ডেরল মুন তার ‘দা ব্রিটিশ কনকোয়েস্ট অ্যান্ড ডোমিনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ বইটিতে লিখছেন, ‘ক্লাইভের ২৭ জুনই মুর্শিদাবাদে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জগৎ শেঠ তাকে বলেছিলেন যে, ক্লাইভকে হত্যার পরিকল্পনা হচ্ছে। সেজন্যই আরও দু’দিন পর, ২৯ তারিখে ক্লাইভ শহরে পৌঁছান।
‘মীর জাফর শহরের প্রধান ফটকে অপেক্ষা করছিলেন ক্লাইভকে স্বাগত জানানোর জন্য। দু’জনেই একসঙ্গে শহরে ঢুকেছিলেন। রবার্ট ক্লাইভই মীর জাফরকে মসনদে বসিয়ে নতুন নবাবকে স্যালুট করেছিলেন। এরপরে তিনি ঘোষণা করেন মীর জাফরের শাসনে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না কোম্পানি। শুধু নিজেদের ব্যবসার দিকেই তাদের নজর থাকবে’। তারপর থেকে ১৮০ বছর ভারতে একচ্ছত্র রাজত্ব চালিয়েছে ইংরেজরা।
যেভাবে ইউরোপের অন্যতম ধনী লর্ড ক্লাইভ
সিরাজউদ্দৌলার রাজকোষ থেকে পাঁচ কোটি টাকা পেয়েছিলেন ক্লাইভ। তার আশা ছিল তিনি আরও বেশি পাবেন। প্রসিদ্ধ ইতিহাসকার উইলিয়াম ডালরিম্পল তার বই ‘দ্য অ্যানার্কি’তে লিখেছেন: ‘এই যুদ্ধ জয়ের জন্য ক্লাইভের পাওনা হয়েছিল দু’লাখ ৩৪ হাজার পাউন্ড। এছাড়া জমিদারীর মালিক হিসাবে প্রতিবছর ২৭ হাজার পাউন্ড পাওয়ার কথা ছিল। যদি এই বিপুল অর্থ তিনি সত্যিই পেতেন, তাহলে মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই রবার্ট ক্লাইভ হঠাৎই ইউরোপের সবথেকে ধনী ব্যক্তিদের একজন হতে পারতেন।
‘পরের কয়েকটা দিন বেশ দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছিলেন ক্লাইভ। তার ভয় ছিল মীর জাফর কথার খেলাপ করবেন না তো! তাদের দেখে মনে হত, যেন দুই ক্ষমতাবান গুন্ডা বড়সড় লুটের পরে ভাগাভাগিতে বসেছে’। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Abu Rayhan ৪ জুলাই, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
বর্তমান সমাজে কারো নাম মীর জাফর রাখি না। কিন্তু আমরা গোপনে অনেকেই মীর জাফরের চরিত্রটাকে খুব ভাল ভাবে পোষণ করছি।
Total Reply(0)
Rukon Alam ৪ জুলাই, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
সবকিছুর মূল হোতা বৃট্রিশরা।লুঠেরা। মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়না শুধু আপসোস এবং অনুশোচনা করে।আমরা ভাবতে পারি নবাব সিরাজউদ্দোলার লাশ ঘোরার পিঠে ঘুরানো হয়েছিল কত নির্মম যা ভাষাই প্রকাশ করা যাই না। এই নিউজে বিট্রিশদেরকে ভালো সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে। পৃথিবীতে যত ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে সবকিছুর নাটেরগুরু এই বিট্রিশরা।
Total Reply(0)
ইমরান এইচ ৪ জুলাই, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
সিরাজ হত্যার পেছনে মীর জাফর একা ষড়যন্ত্র করে নি নবাবের দপ্তরে উচ্চ পদে চাকরী করা হিন্দুরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুসলিম শাসনের অবসান চেয়েছিল, সফলও হলো
Total Reply(0)
Pavel Ahasan ৪ জুলাই, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত না হলে, বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস অন্য রকম হতো,হয়ত অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র ই পাল্টে যেত। পৃথিবীর ধনী রাষ্ট গুলোর 10 টির ভিতরে একটি হতো ভারতীয় উপমহাদেশ বা বাংলাদেশ।
Total Reply(0)
Suma Roy ৪ জুলাই, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
ক্ষমতার লোভে মীর্জাফর দেশকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিল। আজও মীর্জাফরের উত্তরসুরী অনেক আছে যারা ক্ষমতার লোভে দেশকে ভারতের হাতে তুলে দিতে চায়।
Total Reply(0)
Abu Bokor Sheetu ৪ জুলাই, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
ঝুগে ঝুগে মিরজাফররা ছিলো এখনো আছে,ওরা ধিকৃত ওরা ঘৃনীত তাই আজ পর্যন্ত মীর জাফরের নামে কোন বাঙালী তাদের কোন বংশধরের নাম মির্জাফর রাখে না। অন্য দিকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা মানুষের হৃদয়ে আছে,ও চিরদিন থাকবে।
Total Reply(0)
Joy Jony ৪ জুলাই, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
মীর জাফর পুত্র মিরন যেভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে হত্যা করেছিল। মিরনকেও তার পাপের পারিনিতি ভোগ করতে হয়েছে, ইংরেজদের হাতে হত্যার মধ্যদিয়ে মিরনের পাপাচারের সমাপ্তি হয়।
Total Reply(0)
Samin Mollah ৪ জুলাই, ২০২০, ৩:০৮ পিএম says : 0
মীরজাফর নামটা বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক বিশ্বাসঘাতকতার নাম তাই কারো নাম মিরজাফর রাখা হয় না কিন্তু এই মীরজাফর চরিত্রের মানুষ গুলো আজও আছে আমাদের দেশে আদের থেকে সদা সতর্ক থাকা উচিৎ
Total Reply(0)
M,A, Malek ৫ জুলাই, ২০২০, ১০:২৫ পিএম says : 0
ইংরেজদের দায়ী করে আর কি হবে তারা সুবিধাবাদি-সাম্রাজ্যবাদি সেটা জেনও মসনদের লোভে মিরজাফরই- ঘষেটি বেগমরাই তো সিরাজের পতন ও প্রাণ বধ করেছে। যে কারনে মীরজাফরের বংশধরেরা পূর্ব পূরুষের পরিচয় দিতে চায়না,নিজেদের লুকিয়ে রাখে।এখনও অনেক মীরজাফর আছে সুযোগের অপেক্ষায়।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:১১ পিএম says : 0
Good job
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন