মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তদন্তের মুখে পাপুলের ‘ইস্পাতের সাম্রাজ্য’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

কুয়েতের কারাগারে বন্দি লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের ইউটিউবে বেশ কয়েকটি বক্তব্যের ভিডিও রয়েছে। ভিডিওগুলোতে তিনি নানান বক্তব্য দিয়েছেন। তবে একটি ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘আমি কাচের সাম্রাজ্য গড়ে তুলিনি; যে ঢিল দিলেই চুরমার হয়ে যাবে। আমার সাম্রাজ্য ইস্পাতের; কেউ কখনোই ভাঙতে পারবে না’। এই ঐদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়া শহিদ কুয়েতের কারাগারে বন্দি। বিদেশেই শুধু তিনি বিপদে নেই; দেশেও তার ইস্পাতের সাম্রাজ্য তথা বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ-সম্পদের অনুসন্ধান চলছে; মানবপাচারের তদন্ত চলছে।

কুয়েতে এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অপকর্মে জড়িত থাকায় সে দেশের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও দু’জন এমপিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুয়েত আদালতে অপরাধ প্রমাণ হলে তার দীর্ঘ সাজা হবে বলেও সে দেশের আইনজীবীরা জানিয়েছেন। পাপুলের অবস্থা দেশেও ভালো না। তার স্ত্রী-সন্তান কার্যত পলাতক। মানবপাচারের দায়ে অভিযুক্ত এমপি পাপুলকে উদ্ধারের বদলে দেশেও তার বৈধ-অবৈধ অর্থ সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে। গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা পাপুলের বিষয়ে সব ধরনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। তাছাড়া তার বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ ও আছে। তাছাড়া এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু। তাই অনেক বিষয় বিবেচনা করে কাজ করতে হচ্ছে। তাই কিছুটা ধৈর্য ধারণ করতে হবে সবটা জানতে হলে।

দুদকে পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হওয়ার পর তার স্ত্রী মহিলা এমপি সেলিনা ইসলাম, তার কন্যা ও শ্যালিকার ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তাদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুদক সূত্রে জানা যায়, ৩০ জুন কমিশনের পক্ষ থেকে জয়েন স্টোক, কক্সবাজার সাব রেজিস্টার অফিস ও সিলেট সাব রেজিস্টার অফিসে চিঠি দিয়ে পাপুলের বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর আগে ২১ জুন কমিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়ে পাপুল এবং তার কোম্পানির যাবতীয় ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ (লেনদেন স্থগিত) করতে দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়।

এরও আগে, নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে পাপুলের যাবতীয় তথ্য চায় দুদক। এছাড়া তার নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংককেও চিঠি দিয়েছে দুদক। ফলে দুদকের অনুসন্ধান টিম পাপুলের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে কাজ করে যাচ্ছে। যার মধ্যে অনেক তথ্য দুদকের হাতে এসে পৌঁছেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

দুদক গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারসহ জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত উপায়ে শত শত কোটি টাকা অর্জন করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য একজন কর্মকর্তাও নিয়োগ দেন। দুদকে পাপুলের বিরুদ্ধে ১৭৪ পাতার অভিযোগ জমা দেয়া হয়। ওই সময় কুয়েতের পত্রপত্রিকাগুলোতে পাপুলের মানবপাচার নিয়ে প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ হয়।

দুদকে জমা দেয়া অভিযোগে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এই পরিচালক বিদেশে ব্যবসার আড়ালে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। এর মধ্যে তিনি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে ২৮০ কোটি টাকা হুন্ডি ও বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পাচার করেন। এ টাকার মধ্যে তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মতিঝিল শাখার একটি হিসাবের মাধ্যমে ১৩২ কোটি টাকা ও প্রাইম ব্যাংকের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা পাচার করেন। ইউসিবিএলের মাধ্যমে ১০ কোটি ও প্রাইম ব্যাংকে ঋণ সৃষ্টি করে ১০ কোটি টাকা পাচার করেন। বাকি টাকা পাপুল তার শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং জেডডবিøউ লীলাবালি নামক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করেন।

দুদকে জমা দেয়া অভিযোগে আরও বলা হয়, ৫০ কোটি টাকার শেয়ার কিনে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক হয়েছেন পাপুল। আর স্ত্রীর নামে একই ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকার শেয়ার কিনে অংশীদার হয়েছেন। গুলশান-১ এর ১৬ নম্বর সড়কে গাউসিয়া ডেভেলপমেন্টের প্রকল্পে মেয়ে ও স্ত্রীর নামে দুটি ফ্ল্যাট, গুলশান-২ এর পিংক সিটির পেছনে গাউসিয়া ইসলামিয়া প্রকল্পে স্ত্রীর নামে ৯ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, স্ত্রী ও নিজের নামে লক্ষীপুরের রায়পুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৯১ কোটি টাকার সম্পদ আছে।

এছাড়া সোনালী ব্যাংকের ঢাকার ওয়েজ আর্নার্স শাখায় স্ত্রীর নামে ৫০ কোটি টাকার ওয়েজ আর্নার্স বন্ড ও মেয়ের নামে ২০ কোটি টাকার বন্ড আছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্ত্রীর নামে একটি ছয় তলা বাড়ি আছে।

শহীদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, অনুসন্ধান এখনও শেষ হয়নি, চলমান রয়েছে। অনুসন্ধানের পরই জানতে পারব তিনি দোষী নাকি নির্দোষ। আর তখনই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করি, তাহলে আইনি যেসব প্রক্রিয়া রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
MD. Samsul Alom ৭ জুলাই, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
আমাদের অসুস্থ্য, অমানবিক, ঘুণে ধরা সমাজে এক ধরনের সিন্ডিকেট ভিত্তিক চেইন ব্যবস্থা আছে। সিন্ডিকেট ভিত্তিক চেইন ব্যবস্থার রুট লেভেলে কাজ করে মানুষরুপি কীট, এসব কীটরা গিরগিটির মত রং বদল করে। এদের পরিবারে কেউ লালদল, কেউ নীলদল, কেউ কালোদল, কেউ দর্মদল, যখন যেদলই ক্ষতায় আসে তখন গিরগিটির মত তাদের রং বদল করতে বেগ পেতে হয়না। তাই এই সিন্ডিকেট ভিত্তিক চেইন ব্যবস্থার রুট লেভেলে গিরগিটির মত রং বদলকারীদের সমূলে উৎপাটন করেন দেখবেন সব সমস্যান সমাধান হয়ে গেছে।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৭ জুলাই, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
টাকা দিয়ে সংসদ সদস্য পদ যে কত সহজে কেনা যা
Total Reply(0)
N F Aronnya ৭ জুলাই, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
একজন আইন অমান্যকারীকে বার বার সুযোগ দিলে সে দেশে হয়ত ধরা পড়বে না, কিন্তু বিদেশে তাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
Total Reply(0)
Md.Belal Hossain ৭ জুলাই, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
এখন নমিশন দেয়ার সময় অতীত কর্মকান্ড বিবেচনা করে না টাকা থাকলেই হলো সেটা বৈধ অবৈধ কোনো বিষয় নয়।
Total Reply(0)
Jafrul Kabir ৭ জুলাই, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
সারাদেশে এরকম হাজার হাজার পাপুল অসৎ উপায়ে রাতারাতি টাকার কুমীরে পরিণত হয়েছে।
Total Reply(0)
Mohammed Ali ৭ জুলাই, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
টকশোতে চেতনার দাবিদার নেতারা সব সময় বলেন বিএনপির নেতাদের টাকা দিয়ে কিনা যায়, বিএনপি টাকার বিনিময়ে নমিনেশন দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু। এখন পাপুল সাহেব দেখিয়ে দিলেন চেতনার দাবিদারদেরও টাকার বিনিময়ে কিনা যায়। ২
Total Reply(0)
সাঈদ, মুক্তিযোদ্ধা ৭ জুলাই, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
Same kind of PAPLUs are moving around here and there. All those PAPLUs should be arrested immediately, no excuse for Govt supporting PAPLUs.
Total Reply(0)
Tanvir ৭ জুলাই, ২০২০, ৯:৪৪ এএম says : 0
Comilla, Meghna sub registry office papular wife ar namay onek lands registry hoisay
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন