অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ পরিচিত এক অসুখ। এটি এমন একটি অসুখ যার ফলে হাড়ের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কমে যায়। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। ভঙ্গুরও হয়ে যায়। চল্লিশ বছরের পর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট কমতে থাকে। এর ফলে হাড়ের গঠনে পরিবর্তণ হয়। হাড় হয়ে পড়ে দুর্বল ও ভঙ্গুর।
এই রোগে মহিলা ও পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হয়। তবে মহিলাদের মধ্যে এটি অনেক বেশি দেখা যায় । শতকরা আশি ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদেরই রোগটি দেখা দেয়। মেয়েদের মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। এর ফলে হাড়ের ক্ষয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোন ৬০-৭০ বছর বয়সে কমতে শুরু করে এবং তখন হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়।
অস্টিওপোরোসিসে হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ফলে সামান্য পরিমাণ আঘাতেই শরীরের বিভিন্ন জায়গার হাড় ভেঙে যেতে পারে। অস্টিওপোরোসিস একটি নীরব ঘাতক। তেমন লক্ষণ থাকেনা। প্রাথমিক অবস্থায় অস্টিওপোরোসিসের তেমন কোনো উপসর্গও থাকেনা। যখন হাড়ে ফাটল ধরে বা হাড় ভেঙে যায় তখন বোঝা যায়। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যায়।
ভাল ভাবে ইতিহাস নিয়ে, এক্সরে এবং বিএমডি টেস্ট করে অস্টিওপোরোসিস ডায়াগনোসিস করা যায়। বিএমডি (বোন মিনারেল ডেনসিটি) পরীক্ষা করে হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় করা হয়। এটি সাধারণ এক্স-রের মতো একটি পরীক্ষা যা সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত। এই পরীক্ষা সহজ এবং রেডিয়েশন খুব কম হয়। তবে এই পরীক্ষা সবজায়গায় হয়না। মেশিনের দামও অনেক বেশি।
অস্টিওপোরোসিসের হাত থেকে বাঁচতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম খাবারে রাখতে হবে। প্রতিদিন খাবারে যেন ক্যালসিয়াম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুগ্ধজাত খাদ্যে এবং সামুদ্রিক মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। ভিটামিন ডি পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়ায়। ভিটামিন ডি বেশি পাওয়া যায় ডিমে, কড লিভার তেলে, সামুদ্রিক মাছে ও কলিজায়। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি’র অন্যতম প্রধান উৎস। এই আলো চামড়ায় পড়লে চামড়ায় থাকা এক উপাদান নানা বিক্রিয়া শেষে ভিটামিন ডি তে পরিণত হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ধূমপান এবং এলকোহল বর্জন করতে হবে। অস্টিওপোরোসিসের বেশ কিছু ওষুধ আছে। সেসব খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ।
ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল
পাবনা মেডিকেল কলেজ, পাবনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন