চট্টগ্রাম ব্যুরো : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। দক্ষ জনশক্তি তৈরী এবং বিদেশে কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল (রোববার) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস কনফারেন্স হলে বিদেশগামী শ্রমিক ও কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ডের সেবা কার্যক্রম উদ্বোধনকালে মন্ত্রী একথা বলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রত্যেক জেলা থেকে প্রবাসীদের বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্টকার্ড দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়ে বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যারা চাকরির উদ্দেশ্যে বিদেশ যান তাদের ঢাকায় গিয়ে বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্টকার্ড নিতে হয়। এতে সময় এবং অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি বাড়ে ভোগান্তি। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে যারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন তাদের ভোগান্তি কমাতে নিজ নিজ জেলা থেকে ছাড়পত্র ও স্মার্টকার্ড প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে এ কার্যক্রম শুরু হলো। চট্টগ্রাম থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্টকার্ড প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কর্মসংস্থান মন্ত্রী বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা বেড়েছে দাবি করে এ বছর আট লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) চার লাখ ১৭ হাজার ৯৩৫ জন বিদেশ গিয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের দিকে তাকিয়ে না থেকে নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে রাশিয়ায় ৪শ’ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ১৬১টি দেশে প্রায় এক কোটি লোক কাজ করছে। জনবহুল বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি কর্মী শ্রম বাজারে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী দেশে তাদের চাকরির সংস্থান করা যাচ্ছে না। ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিদেশ যাচ্ছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। মন্ত্রী জানান, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসটি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে চট্টগ্রামবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম জেলায় প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামছুন নাহার বলেন, চট্টগ্রামের প্রবাসীদের সব ধরনের কার্যক্রম এখান থেকে করার দাবি দীর্ঘদিনের। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশ গেলে ভাল কাজ ও বেতন পাওয়া যায়। যে কোন বিষয়ে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন। অদক্ষ শ্রমিক হয়ে বিদেশ না গিয়ে দক্ষ হয়ে গেলে চাকরি নিয়ে সমস্যা হয় না।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা বলেন, রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে ছাড়পত্র ও স্মার্টকার্ড চট্টগ্রাম থেকে দেয়া হচ্ছে। ফলে এখানকার প্রবাসীদের আর ঢাকা যেতে হবে না। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে চট্টগ্রামের অবদান সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছর ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এতে চট্টগ্রামের অবদান বেশি। কারণ মোট প্রবাসীদের মধ্যে ৫ লাখ ৪১ হাজার চট্টগ্রামের।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমীন, জনশক্তি, কর্মশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আহমদ শামীম আল রাজী। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার, রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষে মোহাম্মদ আবু জাফর, প্রবাসী সন্তান শাহানা বেগম প্রমুখ। পরে মন্ত্রী বিদেশগামী কর্মীদের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন