বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

বন্ধ্যাত্ব ঃ কারণ ও চিকিৎসা

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০৪ এএম

সন্তানের মাতা-পিতা হওয়া প্রত্যেক বিবাহিত দম্পতির ঐকান্তিক বাসনা। সন্তান ধারনের পর সুষ্ঠুভাবে জন্মদান করানোর মধ্য একজন নারীর পূর্ণতা লাভ হয়। বন্ধ্যাত্ব বলতে সাধারণত বোঝায় যদি কোন রকম প্রতিরোধক ব্যবস্থা ছাড়াই স্বামী ও স্ত্রীর নিয়মিত ১ বছর মেলামেশার পরেও (অনেকের মতে ১.৫-২ বছর) সন্তান ধারণে সক্ষম না হয়। ৮৪ শতাংশ দম্পত্তি বিয়ের প্রথম বছরেই সন্তান ধারণে সক্ষম হয়। আর ৯২ শতাশং দম্পত্তি বিয়ের প্রথম ২ বছরেই সন্তান ধারণে সক্ষম হয়। সমীক্ষার দেখা গেছে প্রতি সাতজন দম্পত্তির মধ্যে একটি পরিবারে এ সমস্যা দেখা যায়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বন্ধ্যাত্ব সমস্যার নিয়ে অনেক দম্পতিই চিন্তিত। বাঙালীর তুলনায় মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপে এ সমস্যা বেশি। আমাদের দেশের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব সমস্যা আরো বেশি।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
এক বছর বা এর বেশি সময় ধরে কোন রকম জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ছাড়া সন্তান ধারণে ব্যর্থ হলে অবশ্যই যে কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নিতে হবে। তবে বয়স ৩৫ এর অধিক থাকলে ৬ মাস চেষ্টা করে যদি ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অতি জরুরী।
প্রকারভেদ
বন্ধ্যাত্বকে ২ ভাবে ভাগ করা যায়:-
প্রাথমিক বন্ধ্যাত্ব: যখন কোন মহিলার কখনোই গভধারণ হয় নি।
সেকেন্ডারী বা অর্জিত বন্ধ্যাত্ব: অতীতে কখনও গর্ভধারণ হয়েছিল বা সন্তান জন্মদানের পরে দম্পতি কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে একসাথে থাকার পরও গর্ভধারণে সক্ষম হয়নি।
কারণ:
বন্ধ্যাত্বের বহুবিধ কারণ থাকে, সেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর যে কোন একজনের বা উভয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকতে পারে। গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ্য ওভাম বা ডিম, সবল বীর্য ও স্বাভাবিক জরায়ু বা ইউটেরাস। এদের যে কোন একটির সমস্যা হলেই দম্পতি গর্ভধারণে অক্ষম হতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে বন্ধ্যাত্বের কারণ গুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, কারণ গুলো-এনুভলেশন (ডিম্বাশয় হতে ওভাম বা ডিম নিঃসরণ না হওয়া), ইউটেরাস বা জরায়ু বা ডিম্বনালীর সমস্যা এবং পুরুসের সমস্যা।
ডিম্বস্ফুটন না হওয়ার কারণ সমূহ
হরমোন জনিত সমস্যা। যেমন: প্রলেক্টিন, থাইরয়েড, লুটেনাইজিং, পিটুইটারি, এফএইচএস ইত্যাদি হরমোন অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণের ফলে ডিম্বস্ফুটন বা ওভুলেশন বাধাগ্রস্থ হয়।
পলিসিষ্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম।
শারীরিক ওজনের তারতম্য- যেমন: অতিরিক্ত ওজন কম বা অতিরিক্ত ওজন বেশি।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা।
অতিরিক্ত শারীরিক ব্যায়াম।
প্রিম্যাচিউর ওভারিয়ান ফেইলিউর।
দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতা, যেমন: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কিডনী ফেইলিউর ইত্যাদি
বিভিন্ন রকম ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন: কেমোথেরাপি, ক্যানাবিস, কোকেইন ইত্যাদি
জিনগত সমস্যা।
দ্রুত মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি
ইউটেরাস বা জরায়ু ও ডিম্বনালির সমস্যা
জরায়ু ও ডিম্বানালির প্রদাহ।
জরায়ুর টিউমার- যেমন: এডিনোমায়োসিস, ফাইব্রযেড বা পলিপ।
জরায়ু, ডিম্বনালি ও সারভিক্স এ পূর্ববর্তী অপারেশন জনিত সমস্যা।
এন্ডোমেট্রিওসিস (মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা ইত্যাদি)
ডিম্বাশয়ে ডিম্বানুর সংখ্যা কম হওয়া জনিত সমস্যা।
পুরুষের সমস্যা
স্বামী বা পুরুষের জন্যও বন্ধ্যাত্ব ঘটে থাকে যাকে আমরা পুরুষজনিত বন্ধ্যাত্ব বলি। এই পুরুষজনিত বন্ধ্যাত্ব ২-১০ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘটে থাকে।
শতকরা ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
শুক্রানু বা বীর্য যথেষ্ট গতিশীল না হলে বা অস্বাভাবিক গঠনগত সমস্যা।
ভেরিকোসিল, জীনগত ক্রুটি, টেষ্টিসের কারণে শুক্রানু তৈরী ব্যহত হলে।
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় স্বাভাবিক শুক্রাণু তৈরী ব্যহত হলে।
কোন সংক্রমন বা আঘাতের ফলে শুক্রাণু বের হওয়ার পথ বন্ধ হলে।
মানসিক চাপ, বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা জনিত সমস্যা।
উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন, ধুমপান, মদ্যপান করলে।
বহুমুত্র, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, পিটুইটারী গ্রন্থির সমস্যা হলে।
বন্ধ্যত্বের যৌথ কারণ
মারাত্মক পুষ্টিহীনতার কারণেও অনেক সময় গর্ভধারণ হয় না।
সঠিক পদ্ধতিতে শারীরিক মেলামেশার বা উর্বর সময়ে শারীরিক মেলামেশার জ্ঞানের অভাব।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জানতে হবে। তারপর স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে:-
স্বামী ও স্ত্রীর উভয়ের হরমোন পরীক্ষা।
স্বামী-স্ত্রী উভয়ের রক্ত পরীক্ষা।
স্বামীর বীর্ষ পরীক্ষা।
স্ত্রীর জন্য ওভোলেশন টেষ্ট, মনোগ্রাফি, হিস্টস্কপি বা ল্যাপারস্কপি।
জরায়ু এবং ডিম্বানালি পরীক্ষা, জরায়ুর ভেতরের স্তরের ঝিল্লি পরীক্ষা ইত্যাদি
চিকিৎসা
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য প্রথমে কারণ উদঘাটন করা। এর উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা শুরু করা। চিকিৎসাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঔষুধ প্রয়োগ, শল্যচিকিৎসা, কৃত্রিম উপায়ে শুক্রানু স্থাপন, সমন্বিত চিকিৎসা।
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। মনে রাখতে হবে যে, মানবজাতির স্বাভাবিক প্রজননের হার অন্যান্য প্রজাতির চেয়ে অনেক কম। সন্তান ধারণে ব্যর্থ হলে স্বামী-স্ত্রী কারো না কারো সমস্যা থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা করে প্রজননের হার স্বাভাবিক করা যায়। এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায়ও সফলতা লক্ষ করা যায়। হোমিওপ্যাথিক হলো মানব দেহের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
উপদেশ
পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের হার বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে। ৩৫ বছরের পর মেয়েদের ডিম্বস্ফুষ্টনের হার কমতে থাকে, একই সাথে শুক্রানুর কার্যকারীতাও বয়সের সাথে সাথে কমতে থাকে। তাই সমস্যা দেখা দিলেই অতি দ্রæত চিকিৎসকের শরনাপন্ন অতি প্রয়োজন।
এছাড়াও শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা, নিয়মিত ফলিক এসিড সেবন, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস, ধুমপান-মদ্যপান না করা, শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মানসিক চাপ, কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা, চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ সেবন না করা।
ডাঃ মোঃ হুমায়ুন কবীর
কনসালট্যান্ট, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
৮৯, নিমতলী সিটি করপোরেশন মার্কেট
চাঁনখারপুল, ঢাকা-১০০০।
০১৭১৭৪৬১৪৫০, ০১৯১২৭৯২৮৯৪।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন