শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

কেরানীগঞ্জে নতুন কারাগারে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের চরম ভোগান্তি

প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কেরানীগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা : কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারে গতকাল (রোাববার) আনুষ্ঠিকভাবে বন্দীদের সাথে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাক্ষাৎ শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এই কারাগারের বন্দীদের আত্বীয়-স্বজনেরা ভিড় জমাতে থাকেন কারাগারের সামনে। সাক্ষাৎপ্রার্থীরা তাদের স্বজনদের এক নজর দেখার জন্য টিকিট করার জন্য টিকিট কাউন্টারের সামনে প্রখর রোদের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ সাক্ষাৎপ্রার্থীদের বিনামূল্যে প্রথম দিন টিকিট করার সুযোগ দিয়েছেন। বিনামূল্যে টিকিট পেলেও সাক্ষাৎপ্রার্থীদের তাদের স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সাক্ষাৎপ্র্রার্থীদের কেউ কেউ অনেক কষ্টের বিনিময়ে তাদের স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করলেও অনেকই আবার তাদের স্বজনদের খুঁজেই বের করতে পারেনি। ফলে অনেকেই কয়েক দিন পার করেও দেশের দূরদূরান্ত থেকে এসে নতুন কারাগারে তাদের স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। এই নতুন কারাগারে বন্দীদের সাথে সাক্ষাৎ করা যেমন একদিকে নানা সমস্যা তেমনি অপর দিকে বন্দীদের খাবার সরবরাহ করাও অনেক জটিল হয়ে পড়েছে। আরজিনা বেগম নামে এক সাক্ষাৎপ্রার্থী বলেন, আমি কুষ্টিয়া থেকে এই কারাগারে বন্দী আমার স্বামী মো: শরিফুল ইসলামকে দেখার জন্য এসেছি। সকাল থেকে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করে টিকিট পেলেও আমার স্বামীর সাথে সাক্ষাৎ মিললে তার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারিনি। এখানে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের বসার কোনো জায়গা নেই। একেবারে মরুভূমির মধ্যে এই কারাগারটি অবস্থিত । ঢাকার বাড্ডা থেকে আসা কমলা বেগম বলেন, আমি এখানে এসেছি আমার ছেলে কামরুল ইসলামকে দেখার জন্য। আমার ছেলে এখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এই কারাগারে বন্দীদের শুধু খিচুরি খেতে দেয়া হচ্ছে। একদিকে প্রখর রোদ অন্যদিকে খাওয়া-দাওয়ার অনেক অসুবিধা। নিরাপত্তারও ভালো ব্যবস্থা নেই। আশুলিয়া থেকে আসা জহির আহমেদ বলেন, আমি এখানে বন্দী আমার মেয়ের জামাই আরমানকে দেখতে এসেছি সকাল ৯টায়। আর তার সাথে সাক্ষাৎ পেলাম বেলা ৩টায়। কারাগারের ভেতরে বন্দীদের খাবারদাবারের অনেক কষ্ট। আবার বাইরে থেকে ভেতরে খাবার পাঠাতেও অনেক অসুবিধা। রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে আসা জয়গুন নামে এক মহিলা বলেন, ছোট ভাই শহিদুলকে পাঁচশ’ টাকা খরচ করে এখানে দেখতে এসেছি। কিন্তু তার সাথে সাক্ষাৎ মিলল না। কারাগারে বন্দীদের খাবারদাবারের অনেক কষ্ট। নারায়ণগঞ্জ থেকে স্বামী রাজাকে দেখতে আসা বিউটি বেগম নামে এক মহিলা বলেন, টিকিট নিয়ে সাক্ষাৎকার রুমে ঢুকেও আমার স্বামীর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারিনি। কারাগারের আশপাশে কোনো দোকানপাট নেই। তাই বাধ্য হয়েই কারাগারের ক্যান্টিন থেকে বেশি দামে খাবার কিনে ভেতরে পাঠালাম। রাজধানীর দোলাইরপাড় থেকে আসা মো: সাত্তার নামে এক লোক বলেন, আমি আমার ভাতিজা জালালকে দেখতে এখানে এসেছি। অনেক কষ্টের বিনিময়ে টিকিট নিয়ে সাক্ষাৎকক্ষের ভেতরে প্রবেশ করি। আমার ভাতিজার সাক্ষাৎ মিললেও তার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পরিনি। ভেতরে কাচের দেয়াল থাকায় ভালো শব্দ শোনা যায় না। সিরাজদিখান থেকে আসা পারভিন নামে এক মহিলা বলেন, আমি এখানে এসেছি আমার ছেলে রাকিবকে দেখার জন্য। আমার ছেলে কারাগারের ভেতর থেকে কারাগারের বাইরে আমাকে দেখে ডাকচিৎকার করে সে আমাকে খাবারের কষ্টের কথা বলে তার জন্য ভেতরে তাড়াতাড়ি খাবার পাঠাতে আমাকে অনুরোধ করে। আমি ক্যান্টিনের মাধ্যমে দুই হাজার টাকার খাবার কিনে ভেতরে পাঠিয়েছি। সাক্ষাৎকক্ষের দায়িত্বে এক কারারক্ষী জানান, নতুন জায়গায় কারাগারটি স্থানান্তর হওয়ায় কয়েক দিন সাক্ষাৎপ্রার্থীদের একটু অসুবিধা হবে। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কেরানীগঞ্জ নতুন কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার মো: জাহাঙ্গীর কবীর জানান, প্রথম দিন শুধু বন্দীদের খিচুড়ি খেতে দেয়া হয়। গ্যাস না থাকায় বন্দীদের খাবার দিতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি হয়। তবে তাদের সবসময় খিচুড়ি খেতে দেয়ার কথা সঠিক নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন