শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি পারিজাত’র চলাচলের উপর রিটকারীকে আদালতের জরিমানা

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের অনুমোদিত নকশায় নির্মিত উপকূলীয় নৌপথ অতিক্রমকারী যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি পারিজাত’র বৈধ চলচলে বাধা সৃষ্টির লক্ষে হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তিসহ একই বিষয়ে বারে বারে রিট দাখিলকারীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। অত্যাধুনিক নৌ-সরঞ্জামাদী সমৃদ্ধ বিআইডব্লিউটিএ’র সময়সূচি অনুযায়ী চলাচলকারী নৌযানটি চলাচলে ইতোপূর্ব ৩টি রিট আবেদন নিষ্পত্তি হবার পরেও একই বিষয়ে ৪র্থ রিট দায়ের  করা হয়। কিন্তু সে রিটটি বাদী কর্তৃক প্রত্যাহারে গত ২৭ জানুয়ারির আবেদন বাদী ও বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি গ্রহণ করে ২৫ হাজার টাকা জরিমানাসহ প্রত্যাহারের অনুমোদন প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত। এর ফলে বরিশালÑলক্ষ্মীপুর (মজুচৌধুরীর হাট) রুটে এমভি পারিজাত চলাচলে আর কোনো আইনগত বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন নৌযানটির পরিচালনাকারী কোম্পানির আইনজীবীগণ।
বরিশালের ‘জামান এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে উপরকূলীয় এলাকায় চলাচল উপযোগী নকশা অনুমোদন করানোর মাধ্যমে এমভি পারিজাত নামের নৌযানটি নির্মাণ করে। বিআইডব্লিউটিএ’র রুট পারমিট ও সময়সূচি অনুযায়ী নৌযানটি বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে চলাচল শুরু করলে জনৈক সবুজ বেপারী জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত এমভি পারিজাত’কে একটি ত্রুটিমুক্ত নৌযান হিসেবে আখ্যায়িত করে। উচ্চ আদালত বাদীকে ‘ক্লিন হ্যান্ডে’ আদালতে না আসার কথা উল্লেখ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেন।
কিন্তু এরই কিছুদিন পরে জনৈক সেলিম গাজী একই বিষয়ে আরেকটি রিট পিটিশন দায়ের করে। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্ট এ বিষয়ে কোনো আদেশ না দেয়ায় বাদী মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। একই ব্যক্তি কিছুদিন বাদে ঐ বিষয়েই ৪র্থ দফা রিট পিটিশন দায়ের করলে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ নৌযানটি চলাচলে স্থগিতাদেশসহ রুল জারি করে। বিষয়টি নিয়ে নৌযানটির স্বত্বাধিকারী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আবেদন পেশ করলে শুনানি অন্তে নৌযানটি চলাচলের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় বিজ্ঞ আদালত। ফলে বিগত কিছুদিন ধরে নৌযানটি নির্বিঘেœ বরিশালÑলক্ষ্মীপুর রুটে যাত্রী পরিবহন করছিল।
ইতোমধ্যে গত ২৭ জানুয়ারি আকস্মিকভাবেই রিটকারী সেলিম গাজী হাইকোর্টে পূর্বে দায়ের করা রিট পিটিশনটি প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন পেশ করেন। বিষয়টি নিয়ে হাইকার্টের মাননীয় বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেন ও বিচারপতি এমডি বদরুজ্জামানের আদালতে শুনানি শেষে গত মঙ্গলবার আদেশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালত তার আদেশে মামলাটি প্রত্যাহার অনুমোদনের পাশাপাশি একই বিষয় নিয়ে বার বার রিট পিটিশন করে বিবাদীকে হয়রানি করায় বাদীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। রায় হাতে পাবার ১৫ দিনের মধ্যে তা বিবাদী কাজী ওয়াহিদুজ্জমানকে প্রদানের জন্য বাদীকে নির্দেশ প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত।  মহামান্য আদালত ফয়সালাকৃত একই বিষয় নিয়ে একই ব্যক্তির মামলা পরিচালনার জন্য বাদীর আইনজীবীকেও তিরস্কার করেন।
হাইকোর্টের সর্বশেষ এ আদেশের ফলে বরিশালÑলক্ষ্মীপুর রুটে উপকূলীয় নৌযান এমভি পারিজাত-এর চলাচলে আর কোনো আইনগত বিধি-নিষেধ থাকল না।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত নকশা ও প্রতিষ্ঠানটির প্যানেল প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত নিরাপত্তা সনদ লাভকারী ‘এমভি পারিজাত’ বরিশালÑলক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলে ইতোপূর্বে বিআইডব্লিউটিএ সময়সূচি প্রদান করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বার বারই পারিজাত-এর চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে আসছে সরকারি বিঅইডব্লিউটিসি’র সি-ট্রাক ইজারা নিয়ে পরিচালনাকারী ব্যক্তি। বিআইডব্লিউটিসি’র সি-ট্রাকের ইজারাদারের ইন্ধনে বিভিন্ন ব্যক্তি একই বিষয়ে এ পর্যন্ত চার দফায় হাই কোর্টে রিট দায়ের করে নিষেধাজ্ঞা জারি করালেও তার সবগুলোই খারিজ হয়ে গেল।
সরকার দেশের উপকূলীয় নৌপথে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনের লক্ষে বিআইডব্লিউটিসি’কে এ পর্যন্ত ১২টি সি-ট্রাক সংগ্রহে অর্থের যোগানসহ এ লক্ষে প্রতিবছর নগদ ভর্তুকিও প্রদান করে আসছে। অথচ সংস্থাটির একটি কুচক্রীমহল নানা কারসাজি করে এসব সি-ট্রাক ইজারার মাধ্যমে পরিচালনা করে কতিপয় ব্যবসায়ীর পকেট ভারি করতে সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপরন্তু, ঐসব ইজারাদার মনোপলি ব্যবসার লক্ষে শুধু ১৫ মার্চ থকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মৌসুমে ঐসব নৌযান পরিচালনা করে থাকে। সংস্থাটির কারিগরি ও বাণিজ্য বিভাগের যোগসাজসে অক্টোবরের মধ্যভাগ থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত এসব সি-ট্রাক নানা অজুহাতে বসিয়ে রাখা হয়। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর থেকে অশান্ত মৌসুমে অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো নৌযানকে উপকূলীয় এলাকায় চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয় না।
সে নিরিখে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের অনুমোদিত নকশায় উপকূলীয় নৌপথে চলাচল উপযোগী করে নির্মিত এমভি পারিজাত নৌযানটি অত্যাধুনিক নৌ-সরঞ্জামাদীসহ নির্মিত হলেও তার চলাচলে বারবারই আইনগত বিপত্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছিল। বিজ্ঞ আইনজীবীদের মতে, গত মঙ্গলবার মহামান্য হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের আদেশর ফলে এ বিষয়ে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সুযোগ থাকল না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন