সায়ীদ আবদুল মালিক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কোরবানির হাট ইজারা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। এ বছরের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১২টি হাটের ইজারা কার্যক্রমের প্রথম দফার টেন্ডার প্রক্রিয়াই এখনো শেষ করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে ইজারা প্রক্রিয়ায় একজন নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অংশগ্রহণ নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। ইজারা প্রক্রিয়ায় কাউন্সিলরের অংশগ্রহণ আইনানুগ হয়নি-এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টির আইনগত দিক পর্যালোচনা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে অস্থায়ী হাট ইজারা প্রদান কমিটি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি কমিটি। এছাও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের ভেতরের জায়গায় একটি নতুন হাট ইজারার তালিকায় রয়েছে। যার সর্বোচ্চ দরদাতা আবু বকর সিদ্দিক বাকের। তিনি এ হাটের দর দিয়েছেন ৭৫ লাখ টাাক। জানা গেছে, এ হাটটি নিয়েও ইতোমধ্যে পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক চলছে। উক্ত স্থানে যেন এ হাটটি বসতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর ও ইজারা প্রদান কমিটির কাছে এ নিয়ে চলছে নানা দেন দরবার। এতেও কাজ না হলে প্রয়োজনে আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে হাটের ভাগ্য। যে কারণে প্রথম দফায় দরপত্র বাক্স খোলার পর ইতোমধ্যে ১২ দিন অতিবাহিত হলেও পুরো ইজারা প্রক্রিয়া থমকে আছে।
তবে আগামী ৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার অস্থায়ী হাট ইজারা প্রদান কমিটি বৈঠকে বসবে বলে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে জানা গেছে। ওই বৈঠক থেকে এ সমস্যাগুলোর যুক্তিক সমাধান বের হয়ে আসতে পারে বলে জানা গেছে।
১২টি অস্থায়ী পশুর হাট ইজারার জন্য গত ২৬ জুন দরপত্র আহŸান করে ডিএসসিসি। এরপর নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২১ জুলাই দরপত্র বাক্স খোলা হয়। এতে ১২টি হাটের বিপরীতে ৪১টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। দরপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুরমাঠ এবং কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা নিয়ে গঠিত দুটি হাটের বিপরীতে সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক একেএম মমিনুল হক সাঈদ। গোপীবাগ বালুর মাঠের বিপরীতে তিনি সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা দর দেন। এ হাটের গত তিন বছরের দরের গড়ের সঙ্গে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে এবারের সরকারি মূল্য ধরা হয় ৩০ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। সর্বোচ্চ দর দেওয়ায় মমিনুল হক সাঈদের হাটটি পাওয়ার কথা।
একইভাবে কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন হাটের জন্য সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা দর দিয়েছেন। প্রথমবারের মতো বসতে যাওয়া এ হাটটির বিপরীতে সর্বোচ্চ দর দেওয়ায় এটির ইজারাও মমিনুল হক সাঈদের পাওয়ার কথা। কিন্তু কাউন্সিলরের দরপত্রে অংশ নেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন অন্য দরপত্রদাতারা। তারা বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ অনুযায়ী কোনো জনপ্রতিনিধির এ সংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার বৈধতা নেই।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯-এর মেয়র এবং কাউন্সিলরদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা বিভাগের ২ নম্বর ধারার ‘ছ’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য এবং উক্তরূপ মেয়র বা কাউন্সিলর পদে থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি কোনো সমবায় সমিতি এবং সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ব্যতীত, সরকারকে পণ্য সরবরাহ করবার জন্য বা সরকার কর্তৃক গৃহীত কোনো চুক্তির বাস্তবায়ন বা সেবা কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য, তিনি তার নিজ নামে বা তার ট্রাস্টি হিসেবে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নামে বা তার সুবিধার্থে বা তার উপলক্ষে বা কোনো হিন্দু যৌথ পরিবারের সদস্য হিসেবে তার কোনো অংশ বা স্বার্থ আছে এরূপ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে থাকেন।
এবং ‘জ’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার পরিবারের কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের কার্য সম্পাদনের বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদার হন বা এর জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হন বা সিটি কর্পোরেশনের কোনো বিষয়ে তার কোনো প্রকার আর্থিক স্বার্থ থাকে বা তিনি সরকার কর্তৃক নিযুক্ত অত্যাবশ্যক কোনো দ্রব্যের ডিলার হন। এদিকে সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তাও কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেছেন, একজন প্রভাবশালী কাউন্সিলর ও সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনের একজন সিনিয়র নেতা ইজারা প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে। যে কারণে হাটের বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। তবে যদি কোনোভাবে ওই কাউন্সিলরকে হাট ইজারা দেওয়া হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতে একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তখন অন্যরাও জনপ্রতিনিধি হয়ে এভাবে হাটের ইজারা চাইবে।
ইজারা প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দরপত্র বাক্স খোলার পর মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি এখন পর্যন্ত একটি সভাও করতে পারেনি। কাউন্সিলরের বিষয়টি ইজারা প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বিষয়টি নিয়ে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এটি নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মুহাম্মদ বিলাল বলেন, কোরবানির পশুর হাট নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছে। কাউন্সিলরের ইজারা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের বিষয়টিতে আইনগত পরামর্শ নেওয়া হবে। আইনি বিষয়টি বিবেচনা করেই এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন