মুখের অনেক রোগ আছে যা সহজে ভাল হতে চায় না। এ নিয়ে রোগীদের ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতে হয়। ঘন ঘন ডাক্তার পরিবর্তন করে চিকিৎসা নেয়ার পরেও যখন রোগীরা আশানুরূপ ফল না পায়, তখন তারা আরো বেশি হতাশাগ্রস্ত জীবন অতিবাহিত করতে থাকে যার কারণে মুখের রোগগুলোর প্রকোপ আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। তেমনি একটি রোগের নাম লাইকেন প্ল্যানাস। মুখের লাইকেন প্ল্যানাস একটি ক্রণিক অটোইমমিউনজনিত রোগ। লাইকেন প্ল্যানাস প্রদাহজনিত সমস্যা যা মুখের আবরণ বা লাইনিংকে আক্রান্ত করে থাকে। তবে এ রোগের কারণ এখনও জানা যায়নি। দীর্ঘদিন লাইকেন প্ল্যানাস রোগে আক্রান্ত থাকলে তা ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে। লাইকেন প্ল্যানাসের যথাযথ চিকিৎসা না নিলে মুখে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমার ঝুঁকি থেকে যায়। মুখের সব ক্যান্সারের মধ্যে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা বা ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। মুখের লাইকেন প্ল্যানাস মুখের যে কোন স্থানে হতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গালের অভ্যন্তরে পিছনের দিকের বাক্কাল মিউকোসাতে। কিন্তু এছাড়া মাড়ি, জিহ্বা, ঠোঁট এবং মুখের অন্যান্য অংশেও হতে পারে। তালুতে খুব কম ক্ষেত্রে দেখা যায়।
মুুখের লাইকেন প্ল্যানাস দুটি রূপে দেখা যায় :
(ক) রেটিকুলার ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস।
(খ) ইরোসিভ ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস ।
রেটিকুলার মুখের লাইকেন প্ল্যানাস কোন লক্ষণ ছাড়াই মুখের দুপাশে হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে সাদা লেসি স্ট্রাই লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া বাক্কাল মিউকোসাতে প্যাপিউল দেখা যেতে পারে। প্যাপিউল হল শক্ত ফুলা ত্বক বা অস্বাভাবিক ত্বক যা ১ সেন্টিমিটারের চেয়ে কম হয়ে থাকে। লেসি স্ট্রাইকে উইকহ্যামস্ স্ট্রাই বলা হয়ে থাকে। স্ট্রাই বলতে বুঝায় ত্বকের অসম জায়গা যা দেখতে ব্যান্ড, স্ট্র্রাইপস অথবা লাইনের মত দেখা যায়। উইকহ্যাম স্ট্র্রাই হলো সাদাটে রেখা যা দেখা যায় লাইকেন প্ল্যানাসের প্যাপিউলের মধ্যে।
ইরোসিভ লাইকেন প্ল্যানাসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে লালচে বর্ণ দেখা যায় যা ইরাইথিমা নামে পরিচিত। আক্রান্ত স্থানের চার পাশে সাদা রেডিয়েটিং স্ট্র্রাই দেখা যায় এবং এক্ষেত্রে মাড়িতে আলসার দেখা যেতে পারে।
মুখের লাইকেন প্ল্যানাস রোগে ইমমিউনো প্যাথোজেনেসিস এর প্রমাণ রয়েছে যদিও দায়ী এন্টিজেন শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ইমমিউনো প্যাথোজেনেসিস বলতে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ব্যবস্থা ব্যাহত হয় বুঝায়। সিস্টেমিক ড্রাগ থেরাপী এনএস. এআইডি, এন্টি ম্যালেরিয়াল এবং বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ যদি ওরাল লাইকেনয়েড লিশন এর কারণ হিসাবে ধারণা বা সন্দেহ করা হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। লাইকেন প্ল্যানাস রোগে স্থানীয়ভাবে প্রয়োগকারী মলম জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। মুখে আক্রান্ত স্থানে ইনজেকশন আকারে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রদান করা যায়। মুখের খাবার ওষুধ হিসাবে সেবন করা যেতে পারে। সব কিছু নির্ভর করবে রোগের অবস্থা এবং রোগীর সার্বিক শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে। এছাড়া ক্যালসিনিউরিন ইনহিবিটর এলিডেল অর্থ্যাৎ পিমিক্রোলিমাস ক্রীম ১% ব্যবহার করা যায়। পিমিক্রোলিমাস স্টেরয়েডবিহীন। এ ছাড়া ট্যাকরোলিমাস জাতীয় ওষুধ প্রোটোপিক ক্রিম স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা যায়। মুখের লাইকেন প্ল্যানাস রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি লক্ষ রাখতে হবে যে রোগী কোন লিভারের রোগে ভুগছেন কিনা? এছাড়া নীরব ঘাতক হিসাবে শরীরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে এজন্য যে সি ভাইরাসের সাথে মুখের লাইকেন প্ল্যানাস রোগের যোগসূত্র রয়েছে। তবে রোগীর আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে হুট করে এ ধরনের ব্যয় বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রথমেই করা ঠিক নয়। সবার আগে অব্যশই মানবিক দিক লক্ষ রাখতে হবে।
ষ ডা. মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল : ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
ফৎ.ভধৎঁয়ঁ@মসধরষ.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন