শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

দুই প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ শুভ বার্তাবহ

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার মধ্যাহ্নে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মাত্র ১৫ মিনিটের টেলিসংলাপের কথা দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিভিন্ন উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর টেলিসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত, প্রতিবেশি ও বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমুহের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে এটি একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে চলা দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার ফোনালাপ এখন বিশেষ সংবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য ইতিপূর্বেও এই দুই নেতার মধ্যে সৌজন্য ফোনালাপ হয়েছে। তাতে সম্পর্কের কোনো হেরফের হয়নি। তবে বৈশ্বিক মহামারী, চীন-ভারত উত্তেজনা এবং আঞ্চলিক ভ‚-রাজনৈতিক সম্পর্কের নতুন বাস্তবতার মধ্যে বুধবারের ফোনালাপ এবং দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কোন্নয়নের গুরুত্ব ও সম্ভাবনাকে আবারো স্মরণ করিয়ে দিল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই ফোনালাপের প্রয়াসে সাঁড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। দুই নেতার ফোনালাপে ইমরান খান করোনাভাইরাস মহামারী ও বন্যা মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নানা উদ্যোগ সম্পর্কে অবগত হওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোতিার ক্ষেত্রে সার্কের গুরুত্ব এবং ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মির পরিস্থিতি ও পাকিস্তানের অবস্থান সম্পর্কে মত প্রকাশ করেছেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর এই ফোনালাপ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ক্ষেত্রে শুভ ইঙ্গিতবাহী।

করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই সময়ে যখন আঞ্চলিক পক্ষগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও বোঝাপড়া প্রয়োজন তখন ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্ত বিরোধের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন আঞ্চলিক রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়েছে। ভারত ও চীনের সাথে বাংলাদেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পক বিদ্যমান থাকলেও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের অবনতি ও শীতলতা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ভারত ও চীনের পাশাপাশি পাকিস্তানও এ অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ এবং পারমানবিক শক্তির অধিকারী রাষ্ট্র। মূলত বাংলাদেশের উদ্যোগে আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার(সার্ক) অন্যতম সদস্য রাষ্ট্রও পাকিস্তান। সার্ক কেন তার লক্ষ্য অনুসারে এগিয়ে যেতে পারছে না তা ভিন্ন প্রসঙ্গ। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ভারতের প্রভাব ও পাকিস্তানের সাথে তার বৈরিতাকেই দায়ী করা যায়। মনে করা হয়, ভারতীয় প্রভাব পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক ভ‚মিকা রাখছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পাশে থাকা দু’টি বড় মুসলমান জনসংখ্যা অধ্যুসিত রাষ্ট্র। ভারতে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান এবং মুসলমান বিদ্বেষী নানা তৎপরতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে উপমহাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় আত্মপরিচয়ের বিষয়গুলো নতুনভাবে উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সর্ম্পকোন্নয়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বোঝাপড়া ও সহযোগিতা একটি নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারে। দুই দেশের মানুষের জন্য এটা একটা বড় রকমের স্বস্তির ব্যাপার।

ভারত-চীনের সীমান্ত বিরোধ ও উত্তেজনার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এক প্রকার নতুন আঞ্চলিক রাজনৈতিক মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারত তার কোনো প্রতিবেশীর সাথেই স্বাভাবিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ধরে রাখতে পারছে না। চীন-পাকিস্তানের কথা বাদ দিলেও শ্রীলঙ্কা, নেপাল, এমনকি ভূটান-মালদ্বীপের সাথেও আস্থাপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। এ সুযোগে চীন তার বিশাল অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা, বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও বিনিয়োগের ডালি নিয়ে হাজির হয়েছে। চীনের মত বড় প্রতিপক্ষের সাথে সীমান্ত বিরোধ ও যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্যেই ক্ষুদ্র ল্যান্ডলক্ড দেশ নেপাল ও ভূটানের সাথে ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেল। নিকটতম দেশগুলো ক্রমেই ভারতের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে চীনের প্রভাব বলয়ে চলে যাওয়ার পেছনে ভারতের দাদাগিরিই দায়ী। গতকাল টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে সীমান্ত বাণিজ্য চালুর জন্য একটি স্থল কাস্টমস হাউজ প্রতিষ্ঠা করতে ভূটানের প্রস্তাব দীর্ঘদিন ধরে ভারত ঝুলিয়ে রাখার পর অবশেষে তার অনুমোদন দিতে রাজি হয়েছে মোদি সরকার। চীনের সাথে বিরোধের মধ্যে ভূটান ও নেপালের তরফ থেকে ভারত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার পরও এখন নমনীয় আচরণ করতে বাধ্য হয়েছে মোদি সরকার। অপরপক্ষে নানা ধরনের একপেশে সিদ্ধান্তের পরও ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে বাংলাদেশ। ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়’ এই রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ধারণ করেই বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলো অবারিত রেখেছে। ভারত-চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা ও রেষারেষির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সার্কের প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে মূলত মুসলমানরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সার্কের কমিটমেন্ট এবং বাংলাদেশ-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন হলে এ অঞ্চলের ৬০ কোটি মুসলমানের মধ্যে সন্তোষ ও নিরাপত্তার পাশাপাশি উপমহাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Jack ali ২৪ জুলাই, ২০২০, ৫:৫৬ পিএম says : 0
Muslim's are like one body-- so we need to unite all muslim populated country under one banner of Islam.. then our past glory will come back and we will be able to establish the law of Allah then we can live in peace with human dignity..
Total Reply(0)
omor faruk ২৫ জুলাই, ২০২০, ১০:৩৮ পিএম says : 0
ভারতের সাথে সমস্ত চুক্তি বাতিল করে পাকিস্তানের সাথে চুক্তি করুন । আমাদের এ দেশ আরও তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ।।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন