সন্ত্রাস নয় শান্তি চাই, শঙ্কা মুক্ত জীবন চাই- এ শ্লোগান সামনে রেখে গত সোমবার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী মানববন্ধন করেছে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর লাখ লাখ শিক্ষার্থী। ক্লাস ছেড়ে রাস্তায় এসে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রতিবাদ জানান তারা। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ রুখে দেয়ার প্রত্যয়ে হাতে হাত মিলিয়ে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অংশ নেন শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। মানববন্ধন থেকেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ইসলাম নয় বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির বৈষম্যই সন্ত্রাসবাদকে অনুপ্রাণিত করে। সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার সাথে ইসলামের যোগসূত্র নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, সহিংসতার সাথে ইসলামকে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। সন্ত্রাসবাদের মুখ্য কারণের মধ্যে সামাজিক অবিচার ও অর্থের পূজা অন্যতম। তিনি বলেছেন, আমি যদি ইসলামিক সহিংসতা নিয়ে কথা বলি আমাকে ক্যাথলিক সহিংসতা নিয়েও কথা বলতে হবে। সন্ত্রাসবাদের নানা কারণ আছে উল্লেখ করে পোপ বলেন, যখন অন্যকোন বিকল্প থাকে না, যখন বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রে মানুষের বদলে অর্থ বসে, তখন সন্ত্রাস বাড়ে। এটাই সন্ত্রাসবাদের প্রাথমিক রূপ। এটিই সব মানবতার বিরুদ্ধে মৌলিক সন্ত্রাসবাদ। পোপ মনে করেন, ইসলাম নয়ং বরং অর্থের পুজারি বৈশ্বিক অর্থনীতি সন্ত্রাসবাদের অনুপ্রেরণা। এটাই বঞ্চিতদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়। এদিকে প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হচ্ছে, নিরাপত্তা শঙ্কার দরুন ঢাকায় থাকা বিদেশী কূটনীতিক কর্মকর্তা ও স্টাফরা তাদের পরিবারের সদস্য দেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন। জার্মানী, ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্তত ৪ জন কর্মকর্তা ঢাকায় আর না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এদিকে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীর মেসে মেসে অভিযানের কারণে নানা পেশাজীবী শিক্ষার্থীরা পড়েছে মহা সংকটে। অভিজ্ঞমহল মনে করছে, অর্থনীতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে কোন অভিযানেই কোন কাজ হবে না।
সাম্প্রতিক কিছু হামলাকে কেন্দ্র করে সচেতনতা সৃষ্টির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাকে অবশ্যই ইতিবাচকতায় দেখার সুযোগ রয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ রূখে দেয়ার দীপ্ত শপথের মধ্য দিয়ে কার্যত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐকমত্যের কথাই বলা হয়েছে। এনিয়ে সারা দুনিয়াতেই এখন কথা হচ্ছে। বিশ্বের কোন কোন মহল এনিয়ে যে পরিমাণ পানিঘোলা করার অপচেষ্টা করছে, সে বিবেচনায় পোপের বক্তব্য নিঃসন্দেহে গভীর বিবেচনার দাবি রাখে। সন্ত্রাসের সাথে অর্থনীতির যে সম্পর্ক উঠেছে তার নানামাত্রিক আলোচনা রয়েছে। বৈষম্যকে অবশ্যই চলমান বাস্তবতার সাথে যুক্ত না করলে চলমান সন্ত্রাসবাদের প্রকৃত অর্থ খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। বৈষম্যের প্রকৃতিও দেশে দেশে ভিন্নরূপ। কোন বিশেষ গোষ্ঠীর দায় যে সকলের উপর চাপিয়ে দেয়া যৌক্তিক বা সংগত নয়, সে কথাও পোপ স্পষ্ট করেছেন। এ বিবেচনায় বাংলাদেশের প্রেক্ষিতও বিবেচ্য কারণ বাংলাদেশের চলমান হামলার ঘটনা নিয়ে কোন কোন মহল মূলত ইসলামের দিকেই আঙ্গুল তোলার চেষ্টা করছে। এই প্রবণতা পরিস্থতি আরো নাজুক করে তুলছে। এতে প্রকৃত কাজের চেয়ে অকাজই বেশি হচ্ছে। কোন কোন মহলের কাজের পরিণাম কি দাঁড়িয়েছে তা সত্যিই গভীর উদ্বেগের। প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠেছে। দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত বন্ধ রয়েছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এরপর একমাস কেটে গেলেও স্কলাস্টিকাসহ প্রায় সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এখনো খোলেনি। নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে তারা শিক্ষা কার্ষক্রম বন্ধ রেখেছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলা থাকলেও ক্লাস হচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছে এসব স্কুলে অধ্যয়নরত হাজার হাজার ছাত্র। সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, নিরাপত্তার কথা বলে আর কতদিন স্কুল বন্ধ রাখবে কর্তৃপক্ষ। বৃটিশকাউন্সিল বন্ধ থাকার নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। এদিকে বিদেশে পড়াশোনার জন্য যেসব শিক্ষার্থীকে বিদেশীরা ভিসা দিয়েছিল তাদের অনেকের ভিসাই কোন কারণ না দর্শিয়ে বাতিল করছে। দেখা যাচ্ছে সরকারের অভিযানের কারণে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে গেলে লাটে উঠেছে। ইতোমধ্যেই বিদেশে লোক পাঠাবার সংখ্যা কমে আসছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী অন্যতম পোশাক খাত ও চামড়া শিল্পও হুমকির মুখে পড়েছে। এসব অবস্থা পর্যালোচনা করলে এটা পরিষ্কার যে, যে প্রত্যয় নিয়ে সন্ত্রাসবাদ রুখে দেয়ার জন্য সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। দেশের অগ্রগতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যদি প্রশ্ন সাপেক্ষ হয় বা বাধাগ্রস্ত হয়Ñ তাহলে এসবের কোন প্রকৃত অর্থ দাঁড়াবে না। দেশ থেকে শঙ্কা দূরের বিষয়টি সার্বিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শঙ্কার কারণেই বিদেশীরা দেশ ছেড়ে যচ্ছেন। বিনিয়োগকারীরা আস্থার সংকটে রয়েছেন। সরকারের জঙ্গি বিরোধী কর্মকা- জনগণের মনে আস্থা সৃষ্টি করতে না পারলে প্রকৃত শান্তি স্থাপন সম্ভব নয়। আজকের প্রজন্ম যে সম্ভাবনা দেখতে চায় তা বাস্তবায়নের ভাবনাই আজকের প্রেক্ষাপটে গুরুতর হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের মানুষ সবসময়ই যেকোন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। জঙ্গিবাদকে এ দেশের মানুষ কখনো মনেপ্রাণে গ্রহণ করেনি। আজো করে না। চলমান ঘটনাবলীর সাথে কারা কোথায় কিভাবে জড়িত এনিয়ে নানামাত্রিক আলোচনা রয়েছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, এসব প্রচারণা অভিযানের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। দেশের অর্থনীতি। একদিকে হামলার কারণে অন্যদিকে হামলা পরবর্তী সরকারি কর্মকা-েরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে করণীয় নিয়ে। অবশ্যই এটা ভেবে দেখতে হবে যে, সরকারি কর্মকা-ের কারণে যদি শঙ্কা কমার পরিবর্তে বৃদ্ধি পায় অথবা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়, তাহলে এধরনের অভিযানের পরিণতি নেতিবাচক হওয়াই স্বাভাবিক। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে, একদিকে যখন জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলছে, তখন আবার সরকারি কোন কোন মহলে চলছে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সশস্ত্র সংঘাত। সবমিলে এটা মনে করার সংগত কারণ রয়েছে যে, একটি সমন্বিত কর্মপন্থা ছাড়া পরিস্থিতির উত্তরণের কোন উপায় নেই। কোন ভিন্ন মতাবলম্বী বা ইসলামকে আক্রমণ নয় বরং সন্ত্রাসের মূল কারণ চিহ্নিত করে তার অবসানে সক্রিয় হওয়াই সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন