স্টাফ রিপোর্টার : সরকার জঙ্গিদের হত্যা করে তথ্যের উৎস কেন নষ্ট করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এই প্রশ্ন তুলেন।
তিনি বলেন, যারা সত্যিকারের জঙ্গি তারা নিহত হবে, আহত হবে কষ্ট পাওয়ার কিছু নাই আমাদের। আমরা শুধু বলছি, তাদের হত্যা করে তথ্যের উৎস নষ্ট করার উদ্দেশ্যটা কী? বরং তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এই জঙ্গিদের মূল উৎস এটা নির্মূল করা দরকার। বিএনপির বক্তব্য সেটাই। তাদের শেকড় সন্ধান করাকে দুরূহ করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিন্তু সরকার সেই নির্বুদ্ধিতার কাজটাই করছেন। দেশবাসী এখন বিশ্বাস করে জঙ্গি নির্মূলে সরকারের কোনো আন্তরিকতা নেই। যদি থাকতো জঙ্গিদের হত্যা না করে উগ্রবাদের নাটের গুরুদের হদিস বের করতে সচেষ্ট হতো সরকার। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের সরকারের অনাগ্রহের সমালোচনা করে এ ব্যাপারে বিএনপি অবস্থান তুলে ধরেন নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমরা ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নেয়ার পক্ষে। আমরা মনে করি এটা একা কারো পক্ষে দমন করা সম্ভব না এমনকি সরকারের একার পক্ষেও না। সে জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছি। সময় লাগছে সেই কারণেই। এই ঐক্যে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য। সেই ঐক্যে আমরা আওয়ামী লীগকে চাই। তারা যদি না আসে তাহলে সেই কবির ভাষায় ডাক শুনে কেউ না আসে, একলা চলো রে। আমরা আমাদের দায়িত্ব নিশ্চয় পালন করবো। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যদি নাও আসে তাহলে বাংলাদেশের আরো যারা দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আছে, শ্রেণী-পেশার সংগঠন আছে, তারা এই ঐক্যের আহŸানে সাড়া দিচ্ছে। তারা নিজেরাও ঐক্যের আহŸান জানাচ্ছে। এমনকি যারা অংশীদার তারাও কিন্তু জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে। সুতরাং জাতীয় ঐক্যের এই আহŸান জনগণের সাড়া পেয়েছে এবং সেই আহŸান অনুযায়ী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে পারবো। বিভিন্ন দলের সাথে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠিক যোগাযোগ বিএনপির হচ্ছে।
নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিরোধী দলের ওপর অগণতান্ত্রিক দমননীতি প্রয়োগ করে চলেছে। জঙ্গিবাদ দমনের নামে সারাদেশে গত কয়েকদিনে আড়াইশ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ও ক্রসফায়ারের ভয়ে ঘা ঢাকা দিয়ে থাকতে হচ্ছে। সরকারের দৃষ্টি যেহেতু বিরোধী দলের দিকে সেহেতু উগ্রবাদীরা নির্ভিগ্নে তাদের সহিংস কর্মকাÐ চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানায় হয়রানির অভিযোগও করেন তিনি। অসংখ্য মামলার মুখে, হামলার মুখে অসুস্থ রিজভী গ্রেফতার এড়িয়ে চলছে। কোথায় আছেন জানি না। নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন যে হত্যার পর শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রহনন করতে চেয়েছে জিয়া। শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের নৃশংস হত্যাকাÐের পর আওয়ামী লীগরাই ক্ষমতায় বসেছিলেন। প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সবমন্ত্রী ছিলেন আওয়ামী লীগের। তাদের (আওয়ামী লীগ) সংসদ বহাল ছিলো। এখানে অন্য কাউকে অভিযুক্ত করার সুযোগ নেই। জিয়াউর রহমান তখন সেনা প্রধানও ছিলেন না। যিনি সেনা প্রধান (মেজর জেনারেল কেএম শফিউল্লাহ) ছিলেন, তিনি এখন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, তাদের মনোনীত এমপিও ছিলেন। ওই সময়ে জিয়াউর রহমানের উপরে জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ ছিলেন, মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান, তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েছিলেন। কাজেই জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করার কোনো সুযোগ নেই।
নজরুল ইসলাম দাবি করে বলেন, শহীদ জিয়া কখনো শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কোনো অশ্লালীন কিংবা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন নাই। এর কোন দৃষ্টান্ত নেই। তাই শহীদ জিয়া শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রহনন করেছেন এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নাই। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ না করার জন্য আহŸান জানাচ্ছি। যখন আওয়াম লীগের সরকার ক্ষমতায়, তাদের সংসদ বহাল তখন কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসে নাই। তিনি দেশে এসেছেন জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এবং তার আগ্রহে ও সম্মতিতে। তিনি (শেখ হাসিনা) ফেরার পর তার বাড়ি-ঘর ও সহায়সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিলো। নজরুল ইসলাম খান পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আজকে যারা সরকারের মন্ত্রী তাদের অনেকেই সেই সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের নানা কটূক্তি করেছিলেন এবং তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাÐের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দেয়ার অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতারাই করেছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন