স্টাফ রিপোর্টার : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমার মন্ত্রণালয় সব সময় ডিজিটাল উদ্যোগের পাশে আছে ও থাকবে। আজকে আমি এখানে যে নতুন অ্যাপটির কার্যক্রম দেখলাম ও শুনলাম তা যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায় তাহলে দেশের উন্নয়নে নতুন দুয়ার খুলে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিটিউশনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে নগর নামের একটি অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এভাবে অ্যাপটির প্রশংসা করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে মন্ত্রী মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই অ্যাপের কার্যক্রমের কথা শুনে একরাশ বিস্ময় প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন, এখন বয়স হয়েছে। কম্পিউটার দেখলে ভয় লাগে। কিন্তু এই অ্যাপ দেখে ঠিক করেছি কাল থেকে কম্পিউটারে বসব। অ্যাপটা ব্যবহার করতে হবে। সত্যি আমি অবাক হলাম। ডিএনসিসির বিশেষ উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাবের গবেষণায় এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। নাম দেয়া হয়েছে নগর। অ্যাপটি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনের নানা সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। যে কোনো স্থানে বসে খুঁজে নিতে পারবেন কাছের হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বক্সের ঠিকানা। সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হলে তিন সেকেন্ডের ভেতর পুলিশ বা প্রিয়জনের কাছে ভুক্তভোগীর অবস্থানসহ বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দেবে এই অ্যাপ।
অ্যাপের এসওএস বাটনে চাপ দিলে মোবাইলের ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে। তারপর ছবি পৌঁছে যাবে উদ্ধারকারীর কাছে। মোবাইলটি পকেটে থাকলে রেকর্ডিং ফাংশন নিজে নিজে চালু হবে। তারপর আশপাশের ঘটনা রেকর্ড হয়ে সেটিও চলে যাবে উদ্ধারকারীর হাতে। এই অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটির যে কোনো সমস্যা সম্পর্কে সরাসরি মেয়র আনিসুলকে অবহিত করা যাবে। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এই অ্যাপটি তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
অ্যাপের এতসব কাÐকারখানা দেখে মন্ত্রী রসিকতায় মেতে ওঠেন, বাংলাদেশ যে ডিজিটাল হচ্ছে, এটি তার আরেক উদাহরণ। আগে কারো কাছে সময় জানতে চাইলে বলত ডিজিটাল সময়, নাকি বাংলাদেশ সময়? এখন আর কেউ সেটা বলে না। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অ্যাপটির কার্যক্রম ও ব্যবহার নিয়ে খ্যাতিমান উপস্থাপক আবদুর নূর তুষারের পরিচালনায় ও উপস্থাপনায় একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হয়।
ওই ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়, রাস্তায় হাঁটছেন, হঠাৎ চোখে পড়লো ম্যানহোলের ঢাকনা নেই। হাতে থাকা মোবাইল ফোনে ছবি তুলে অ্যাপে আপলোড করে নির্দিষ্ট স্থানের নাম লিখে দিলেন। পরে গিয়ে দেখবেন ঢাকনা লাগানো হয়ে গেছে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ! আপনার এলাকায় ভুলেও মশক নিয়ন্ত্রণকারীকে কখনো দেখেননি! অভিযোগ আর নির্দিষ্ট স্থানের ঠিকানা লিখে দিলে দেখবেন সমস্যার সমাধান। বাংলা ও ইংরেজিÑদু’ভাষার এ অ্যাপের প্রথম অংশে থাকবে ঢাকা সার্ভিস অপশন। মোবাইলে ইন্সটল ও রেজিস্ট্রেশন করে যেকোনো নাগরিক এ সেবা পাবেন।
এলাকার রাস্তা, সড়কবাতি, বর্জ্য, ড্রেনেজ, মশক, অবৈধ দখল, ঘুষ-দুর্নীতিÑএ সাতটি অভিযোগ বা মতামত স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেয়র ও সংশ্লিষ্ট শাখায় ড্যাশবোর্ডে অভিযোগ পৌঁছে যাবে। অভিযোগ বা মতামত দেওয়ার পর একটি কনফারমেশন মেসেজ আসবে। এ অপশনে জরুরি ও কম জরুরিভিত্তিক হিসেবে সমস্যা সমাধান করবে ডিএনসিসি। নগর অ্যাপে আরও আছে মেয়র, কাউন্সিলর, ডিএনসিসি কর্মকর্তা, জোনের মোবাইল নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য। আছে নাগরিক সেবা পাওয়ার সব ফর্ম।
অ্যাপটিতে আছে নিয়ারমি (নিকটবর্তী) ও ইমার্জেন্সি অপশন। যাতে পুলিশ স্টেশন, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, বাসস্টপ, এটিএম বুথের ঠিকানার তথ্য। অ্যাপটিতে ট্র্যাক মি ও ট্র্যাক ফ্যামিলি নামে নাগরিক নিরাপত্তার হাতিয়ার হিসেবে দু’টি অপশন আছে। যেখানে মাত্র ৩ সেকেন্ডে যে কোনো নাগরিক সেবা পাবে। এ অপশনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মতো পাঁচজন পছন্দের মানুষকে (পরিবার বা বন্ধু) অ্যাড করা যাবে। এ পাঁচজন ব্যবহারকারীর সব তথ্য পাবে। সেই পাঁচজনের মোবাইলে অ্যাপটি থাকতে হবে। ব্যবহারকারী কোনো বিপদে পড়লে এসওএস আইকন চেপে ধরলে মাত্র ৩ সেকেন্ডে তাদের কাছে এমএসএম চলে যাবে। স্যাটেলাইটের সহায়তায় মা, বাবা, আত্মীয় ও নিকটস্থ পুলিশের কাছে বিপদ সংকেতের তথ্য পৌঁছে যাবে। সঙ্গে ছবি, অবস্থান, এক মিনিটের অডিও পৌঁছে যাবে। ট্র্যাক ফ্যামেলি অপশন সুবিধা ব্যবহার করা যাবে ব্যবহারকারীর অজান্তে গতিবিধি ও অবস্থান জানা যাবে। এক্ষেত্রে ডিএনসিসিকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে পুলিশ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পকল ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নুসরাত জামিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন