শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মাদারীপুরে ঠিকাদারদের রোষানলে পড়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বদলী

প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে : মাদারীপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী নির্মল কুমার বিশ্বাস কতিপয় ঠিকাদারের কাজের মান তদারকি করতে গিয়ে ঠিকাদারদের রোষানলে পড়ে অবশেষে বদলী হয়ে গেলেন। জেলার কোটি কোটি টাকার টেকসই উন্নয়ন কাজের মান তদারকি ও চুক্তিপত্রের শর্ত ভঙ্গসহ নানা অনিয়মের কারণে নির্বাহী প্রকৌশলী কতিপয় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ায় তাদের মধ্যে দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী নির্মল কুমার বিশ্বাস শিবচর উপজেলার কয়েকটি রাস্তার কাজ পরিদর্শনে যান। এর মধ্যে ৬৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা ব্যয়ে টেংরামারী-ভান্ডারীকান্দি এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন কাজ নি¤œমানের হওয়ায় তিনি ঠিকাদারের উপর ক্ষুব্ধ হন। এ সময় তিনি কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সার্ভেয়ার ও উপস্থিত ঠিকাদারকে রাগারাগি করেন। এ সময় তিনি উপজেলা প্রকৌশলীকে কাজ বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেন। পরদিন ওই কাজের ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন মুন্সী শিবচরের কতিপয় ঠিকাদার নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এদিকে ২ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের ৪টি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজের জন্য মেসার্স প্রগতি মিজান (জেভী) প্রো: আবদুল ওহাবকে শর্তসাপেক্ষে কার্যাদেশ প্রদান করে এলজিইডি। কার্যাদেশ দেয়ার সময় কার্য-সম্পাদন জামানত হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আবদুল ওহাব গত ৭ ফেব্রæয়ারি ২০১৬ তারিখে যমুনা ব্যাংক, মাদারীপুর শাখা থেকে ইস্যু করা ২০ লাখ ১৮ হাজার ১০ টাকার একটি পে-অর্ডার দাখিল করেন। কার্যাদেশ পেয়ে দীর্ঘদিনেও ঠিকাদার কাজ শুরু না করায় এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ শুরু করার জন্য একাধিকবার লিখিতভাবে দাগিদপত্র দেন। এতেও কাজ শুরু না করায় এবং কার্য-সম্পাদন জামানতের মেয়াদ আসন্ন হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় নির্বাহী প্রকৌশলী কার্য-সম্পাদন জামানতের অর্থ নগদায়নের জন্য যমুনা ব্যাংক ম্যানেজার বরাবর পত্র দেন।
যমুনা ব্যাংক ম্যানেজার মো. কবির হোসেন ১৯ জুলাই পত্র প্রাপ্তির কথা স্বীকার করলেও এখনো নগদায়নের ব্যবস্থা করেননি। কেন করেননি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,‘মেসার্স প্রগতি মিজান (জেভী)র একাউন্টে ৯ লাখ টাকা কম থাকায় ঠিকাদারকে টাকা জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তিনি টাকা জমা না দেয়ায় আমি নগদায়ন করতে পারছি না।’
এছাড়া একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক আবদুল ওহাব চরমুগরিয়া ঈদগাহ পুকুরের পাড় সংস্কারের কাজেও অনিয়ম করেন। এতে এলাকাবাসীর অভিযোগে নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এসব কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুল ওহাব নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
অপরদিকে ৪১ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের (এওজ ব্রিজ) ত্রিভাগদী-আশাপাট এইচবিবি দ্বারা কাজের জন্য মেসার্স মুনঈম এন্টারপ্রাইজ-এর সাথে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি এলজিইডির চুক্তি সম্পাদন হয়। ঠিকাদার কাজ না করায় নির্বাহী প্রকৌশলী চুক্তিপত্র বাতিল করে জামানতের ২ লাখ ৭ হাজার ৬৪৫ টাকা বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে জমা নেন। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে মেসার্স মুনঈম এন্টারপ্রাইজ-এর মালিকও নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হন।
অন্যদিকে ৮৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে শিরখাড়া ইউনিয়নের ভোরের বাজার রাস্তার কাজে কালাই মোল্লা কনস্ট্রাকশন নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নি¤œমানের ইট সাইডে নেন। এসময় এলাকাবাসী নির্বাহী প্রকৌশলীকে মোবাইল ফোনে জানালে তিনি তাৎক্ষণিক সাইড পরিদর্শনে গিয়ে নি¤œমানের ইট অপসারণ করতে ঠিকাদারকে বাধ্য করেন। এতে তিনিও ক্ষুব্ধ হন। এসব কারণে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও কতিপয় ঠিকাদারের মধ্যে দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়। এই দ্ব›েদ্বর জের ধরে তারা নির্বাহী প্রকৌশলীর অপসারণ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনসহ নানা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। ফলে জেলার টেকসই উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন