বগুড়া অফিস : বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ৫তলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে জেসমিন আক্তার (৫৩) নামের এক ধনাঢ্য মহিলার কথিত আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার বিকেলে নিহত এই মহিলার ২য় স্বামী নুরুল হক দাবি করেন অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন জেসমিন মেডিকেলের ৫তলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। অপরদিকে নিহত জেসমিনের ছোট বোন ও অপরাপর আত্মীয় স্বজন অভিযোগ করেছেন জেসমিনকে কেবিনেই মেরে ফেলে কৌশলে তার লাশ নামিয়ে এনে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে।
নিহত জেসমিন (৫৩) বগুড়া শহরের নামাজ গড় এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি মরহুম আব্দুল খালেক খান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা জেবুন্নেসা খান দম্পতির বড় কন্যা। ৩ বছর আগে নিঃসন্তান জেসমিনের প্রথম স্বামী কাজী ইলিয়াস মারা যাওয়ার পর নিঃসঙ্গতা বোধ থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজ পৈত্রিক বাড়ির পার্শ্ববর্তী গোয়াল গাড়ি গ্রামের বিপতœীক পাত্র হিসেবে নুরুল হককে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর জেবুন্নেসার ভু-সম্পত্তি ও ব্যাংকে জমা নগদ অর্থ কড়ি নিয়ে ২য় স্বামীর বিরোধ তৈরি হয়। বিরোধের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে জেসমিনের বর্তমান স্বামী নুরুল হক বলেন, সে একাধিক বার সিøপিং পিল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অপর দিকে জেসমিনের বোন ও অন্যান্য আত্মীয়রা বলেÑ তাকে জোর করে সিøপিং পিল খাওয়ানো হয়। সবশেষে গত মাসের ১৯ জুলাই জেসমিনের জহুরুল নগরের নিজ বাড়িতে রহস্যজনক এক অগ্নিকাÐে অগ্নিদগ্ধ হয়। অগ্নিকাÐের সময় তার বাড়ির বাইরে থেকে তালা লাগানো ছিল। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।
খবর পেয়ে জেসমিনের আত্মীয়রা তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তির জন্য জোড়াজুড়ি করলে লিগ্যাল গার্ডিয়ান হিসেবে বর্তমান স্বামী নুরুল হক যথাযথ চিকিৎসার আশ্বাসের পাশাপশি মামলার হুমকি দেয়। ফলে জেসমিনকে তার ছোট বোন ঢাকা নিবাসিনী নাসরিন আক্তার খানের টাকায় জেনারেল ওয়ার্ড থেকে ৫ তলাস্থ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
কেবিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুরুল হকের নিয়োজিত এক মহিলা তাকে দেখা শোনার দায়িত্বে ছিল। এই অবস্থায় গতকাল বিকেলের পরে তাকে হাসপাতালের নীচে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। স্বামী নুরুল হকের বক্তব্য সে ৫তলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে।
অন্যদিকে জেসমিনের বোন নাজনিন ও অন্যান্য আত্মীয় বলেছেন, ৫তলা থেকে লাফিয়ে পড়লে তার শরীর ভেঙ্গে চুরমার ও রক্তাক্ত হওয়ার কথা। অথচ জেসমিনের লাশ ছিল পুরোপুরি অক্ষত। তাদের বক্তব্য তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কেবিনেই জেসমিনকে মেরে লাশ নীচে নামিয়ে এনে মাটিতে রেখে বলা হচ্ছে সে আত্মহত্যা করেছে। তারা বলছে, জেসমিনের পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের কপি হাতে পেলে তারা নুরুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। আপাতত তারা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাটি রহস্যজনক হওয়ায় পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার ওসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন