কোরবানির ঈদে দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি ও কুড়াল অন্যতম অনুসঙ্গ। এগুলো মূলত কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। কিন্তু রাজধানীর কাওরান বাজার কামারপট্টিতে দোকানিদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। ঈদের মাত্র এক দিন বাকি থাকলেও বেচাকেনা না থাকায় কামারদের চোখেমুখে হতাশা। দোকানিরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারি, বন্যা ও বিদেশি সরঞ্জামের জনপ্রিয়তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাদের ব্যবসায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কামারদের তৈরি পণ্যের বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতাই এখন বেশি। দোকানগুলোতে ছোট-বড় ছুরি, চাপাতি, দা-বঁটির পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আশানুরূপ ক্রেতা না থাকায় দোকানিরা কেউ দাঁড়িয়ে, কেউবা টুলে বসে ঝিমোচ্ছেন। দোকানের সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলেই ক্রেতা ভেবে হাঁকডাক দেওয়া হচ্ছে।
একটি দোকানের সামনে ছোট কাঠের টুলে বসে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন মো. সুজন মিয়া। সামনে যেতেই তার জিজ্ঞাসা, মামা কী লাগবে? দেখেন সব ধরনের ছুরি, চাপাতি আছে। দামও কম রাখবো। চাইনিজও আছে। আসেন, দেখেন।
সুজন জানান, তারা দুই ভাই এই দোকান চালান। গত বছরের তুলনায় বিক্রি অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে এবার। সাধারণত ঈদুল আজহার ১০ থেকে ১৫ দিন আগে থেকেই বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যেতো। তারা দুই ভাই দম ফেলার সময় পেতেন না। এবার অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। ইদ্রিস আলী নামের অপর এক দোকানি জানান, মানুষের আয় কমে যাওয়ায় পুরনোগুলো দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে।
গত বছর কোরবানি ঈদের আগে দিনে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার তা নেমে এসেছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায়।
অবশ্য হুমায়ুন নামের একজন কামার জানান, চাইনিজ সরঞ্জাম সস্তা হওয়ায় কামারদের তৈরি পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। এর সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে কামার শিল্পকে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী আনোয়ার বলেন, কামারদের তৈরি পণ্যের বাজার ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে চাইনিজ যন্ত্র। আমাদের দেশি ছুরি ও চাপাতির চেয়ে সেগুলো দামে সস্তা। দেখতেও সুন্দর হওয়ায় মানুষ এসব কিনছে। বাধ্য হয়ে আমরাও কিছু চাইনিজ যন্ত্র বিক্রির জন্য দোকানে রেখেছি। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো কামার পেশাই আর থাকবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন