তাজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান রনি সম্পর্কে পিতাপুত্র। ২০০৮ সালে মেহেদীর বয়স যখন ১২ বছর, তখন নির্মাণ শ্রমিক বাবা তাজুল ইসলাম বাহরাইনে যান। বাবাকে ঢাকার বিমানবন্দরে বিদায় জানান পুত্র মেহেদী। ৬ বছর পর বাবা তাজুল ইসলাম দেশে ফিরে আসেন । পিতার দেশে ফেরার আগেই ২০১৪ সালে মেহেদী লেবাননে পাড়ি জমান। তার সঙ্গে ১২ বছর দেখা নেই বাবা তাজুলের। কথা ছিল ছেলে এ বছরই দেশে ফিরবে। ছুটি পেলেও করোনার লকডাউনে ফিরতে পারেননি। কিন্তু বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মেহেদী নিহত হন। কে জানত ১২ বছর আগের সেই সাক্ষাৎই ছিল বাবা-ছেলের শেষ দেখা! পুত্রের স্মৃতি রোমন্থন করে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা জানালেন তাজুল ইসলাম। পরিবারের কাছে মেহেদী এখন শুধুই স্মৃতি।
লেবাননের রাজধানীতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত ৩ বাংলাদেশির একজন মেহেদী হাসান রনি। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামে। করোনার লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারেননি মেহেদী। এখন পিতা তাজুল অপেক্ষায় রয়েছেন পুত্রের লাশের।
তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে মেহেদী ছিলেন সবার বড়। দ্বিতীয় বোন জিয়াসমিন আক্তার (২২)। বিদেশে থেকেই বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। আর বাকি দুই ভাইয়ের বয়স ১৩ ও ৫ বছর। মেহেদী দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ নিয়ে ২০১৪ সালে বৈরুতে যান। সেখানে একটি বিপণিবিতানে কাজ করেন। এরপর আর দেশে আসা হয়নি।
ভাদেশ্বরা গ্রামে রাস্তার পাশেই মেহেদীর বাড়ি। গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তিন কক্ষের টিনের বাড়ির পাকা বারান্দায় স্বজনেরা জড়ো হয়েছেন। আর উঠানে চেয়ারে মা ইনারা পুত্রশোকে স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন। স্বজনেরা তাঁকে কাঁদানোর চেষ্টা করছিলেন। আর ঘরের ভেতরে বোন জিয়াসমিন আহাজারি করছেন।
মেহেদীর পরিবার জানায়, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে লেবাননপ্রবাসী সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. ওয়াসিম নামের একজন ফোন করে মেহেদী অসুস্থ এবং হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে পরিবারকে জানান। গতকাল ভোরে মেহেদীর মৃত্যুর সংবাদ পরিবারের লোকজন জানতে পারেন। মেহেদীর লাশ দেশে আনতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহায়তা চেয়েছে পরিবার।
তাজুল বলেন, ‘আমি ৬ বছর বাহরাইনে কাজ করেছি। এরপর দেশে চলে আসি। বাহরাইনে যাওয়ার সময় মেহেদী এয়ারপোর্টে বিদায় জানাতে গিয়েছিল। এরপর ছেলেকে আর সরাসরি কাছ থেকে দেখিনি। ১২ বছর আগের সাক্ষাৎই যে শেষ সাক্ষাৎ, জানতাম না’ -বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন পুত্রহারা তাজুল। তিনি জানান, মেহেদী বাংলাদেশি ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন। প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে পারতেন না। কয়েক মাস পরপর ২০-৩০ হাজার টাকা পাঠাতেন। খাওয়ার খরচ চালিয়ে টাকা পাঠাতে কষ্ট হতো। দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে ফিরতে পারেননি।
বোন জিয়াসমিন জানান, মেহেদী ছুটিতে এসে তাকে সোনার গয়না দিতে চেয়েছিলেন। গত সোমবার কাজে যাওয়ার আগে ভাইয়া ফোন করেছিন। প্রায়ই ভাই আমাকে ভিডিও কল দিতেন। এখন আর ভাইয়ের ফোন আসবে না। ৬ বছর ধরে ভাইকে দেখি না। ভাইয়ের লাশটা দেখার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিহত তরুণের লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন