শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

স্বপ্নভঙ্গ ওসি প্রদীপের, কারাগারে জামাই আদরে! ৪ জনকে জেল গেইটে র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদ

যেকোন সময় রিমান্ডে ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দদুলাল

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২০, ৬:৩৩ পিএম

চাঞ্চল্যকর মেজর সিনহা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ সহ আসামীরা বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) আত্মসমর্পণ ও নানা নাটকীয়তায় ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পর এখন কারাগারে রয়েছেন। ৬ আগস্ট শুক্রবার ও ৭ আগস্ট শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে শনিবার দুপুর পর্যন্ত রিমান্ড মঞ্জুরের নির্দেশ আদালত থেকে কারাগারে পৌঁছায়নি। তবে বিকেলে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব বিশেষ ব্যস্থাপনায় আদালতের নির্দেশের কপি কারাগারে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।
এর পর আদালত যে চারজন আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেননি সেই চার জন আসামিকে তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব কর্মকর্তারা গতকাল (৮ আগষ্ট) সন্ধ্যায় জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এছাড়াও ওসি প্রদীপ আইসি লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলালকে যে কোন সময় র‍্যাব তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে জানা গেছে।

কারাগারে বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ সহ মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামিরা বিশেষ নিরাপত্তায় জামাই আদরে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন।

এদিকে জেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অপকর্মের কোন শাস্তি হবেনা মর্মে দৃঢ প্রত্যয়ী ছিলেন ভয়ঙ্কর কিলার ওসি প্রদীপ। কিন্তু চট্টগ্রাম হয়ে পার্শ্ববর্তী কোন দেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে তিনি ধরা পড়েন চট্টগ্রাম পুলিশের হাতে। বেপরোয়া ওসি প্রদীপ এভাবে তার বাহিনীর হাতে ধরা পড়বেন ভাবেন নি কোনদিন। এতদিন যারা তার এই কুকর্মে সাহস দিয়েছে, বাহবা দিয়েছে কিমবা তার কাছ থেকে মাসোয়ারা নিয়ে তাকে সাপোর্ট করেছে পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় এখন কেউ তার কাছে নেই।
এতে করে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ওসি প্রদীপের।

তারপর তাকে আত্মসমর্পণ করতে হলো তারই সহকর্মীদের সাথে কক্সবাজার আদালতে। এরপরে এখন তিনি বন্দী রয়েছে কক্সবাজার কারাগারে। যেখানে রয়েছেন তার নির্যাতনে ও তার দেয়া মামলা এবং ক্রসফায়ার থেকে বেঁচে যাওয়া অসংখ্য বন্দী। সেই মানুষগুলোর সাথেই এখন ওসি প্রদীপ কক্সবাজারের কারাগারের একজন বন্দী। এতে করে মানসিকভাবে খুবই অস্বস্থিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে সেই প্রতাপশালী ওসি প্রদীপ।

টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ (সদ্য বরখাস্ত)-এর ক্ষোভের বলি হয়ে ৬টি মিথ্যা মামলায় ১১ মাস ধরে কারাবাস করছেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা। করোনাকালে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের পরিবারের দুর্দিন যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে ৩ ছেলে-মেয়ের পড়া লেখা। স্ত্রী, ৩ সন্তান ও বৃদ্ধ মায়ের চরম অভাব অনটনে দিন কাটছে। মামলার খরচ ও সংসারের ঘানি টানতে তারা বিক্রি করেছেন বসতভিটা। প্রতিনিয়ত ভয় তাড়া করছে তাদের। অবাক করা বিষয় হলো ফরিদকে জামিনে কারামুক্ত করতে কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি তারা। ওসি প্রদীপের ‘ক্রসফায়ারের’ ভয়ে কারাগারকেই নিরাপদ মনে করেছেন ফরিদের পরিবার। এই সাংবাদিকের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য।

ফরিদের স্ত্রী হাসিনা মোস্তফা জানান, তার স্বামী সত্য ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ করতেন। ওসি প্রদীপের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে লিখেছেন। তাই তাকে পরপর ৬টি মামলা দেয়া হয়েছে। ওইসব মামলায় প্রায় ১১ মাস জেলবন্দি। তিনি তার স্বামীর মুক্তি ও ওসি প্রদীপের শাস্তি দাবী করেন।

এখন সেই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার সাথেই একই কারাগারের খাঁচায় বন্দি এক সময়ের প্রতাপশালী ওসি প্রদীপ।

কারাগারে ওসি প্রদীপের জামাই আদরে দিন যাপনের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ক্ষুদ্ধ কয়েদীদের সাথে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে আসামী ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতকে আলাদা সেলে রাখা হয়েছে।

এদিকে ওসি প্রদীপ চকরিয়া থানায় দায়িত্ব পালন করা কালীন সময়ে অন্যায় ভাবে চকরিয়ার প্রখ্যাত কিশলয় উচ্চ বিদ্যালয় হোস্টেলে গুলি চালিয়ে ছাত্রদের আহত করেছিলেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছিলেন ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকার অভিভাবক সহ সাধারণ মানুষ। ওই সময়ে নির্যাতনের শিকার ছাত্র শিক্ষক ও অভিভাবকরা এখন প্রদীপের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন।

মহেশখালীতে দায়িত্ব পালন করা কালীন সময়ে সেখানকার অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে ঘুষ বাণিজ্য এবং একজনের জমি আরেকজনকে মোটা অংকের টাকায় দেয়াসহ অনেক অপকর্মের করেছেন ওসি প্রদীপ। সে সময়ে নির্যাতিত মানুষেরা এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ওসি প্রদীপের ঘুষ বাণিজ্য, নিরহ মানুষকে নির্যাতন, ধরে নিয়ে চাঁদা আদায় ও ক্রসফায়ারে হত্যার নিন্দা জানিয়ে শাস্তি দাবি করেছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নুরুল বশর। তিনি বলেছেন এটি ওসি প্রদীপের বাড়াবাড়ি ও অপকর্মের ফল।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর কন্যা, বর্তমান কক্সবাজার সদরের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল এর ছোট বোন নাজনীন সরওয়ার কাবেরী এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনায় আসে। তিনি মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড সহ ওসি প্রদীপ এবং কক্সবাজারের থানা সমূহ ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ এনেছেন। এজন্য তিনি পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন কে দায়ী করে তার অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

মেজর সিনহা হত্যা ঘটনায় টেকনাফ থানায় পুলিশের করা ২টি মামলায় সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা কেউ ৩১ জুলাই রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন । তারা কেউই মামলায় সাক্ষী দিতে রাজি নয় বলে জানা গেছে। সিনহা হত্যা মামলায় গঠিত তদন্ত কমিটি পুলিশের করা ওই মামলায় সাক্ষীদের সাথে কথা বলতে গিয়ে এই তথ্য বেরিয়ে আসে বলে জানা গেছে । পরেরদিন থানায় ডেকে নিয়ে জোর করে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Emdad ৮ আগস্ট, ২০২০, ৭:২৪ পিএম says : 0
Apnara sobay janen ai sob sorkarer isaray hocce
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন