শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ডিএসসিসি’র প্রশংসনীয় উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নগরীতে সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর কাজে একটি সমন্বয় সাধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত বুধবার নগরভবনে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় সিটি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে আমরা নাগরিকদের প্রত্যাশা যথেষ্টভাবে পূরণ করতে পারি না। বলাবাহুল্য, যানজট, পানিবদ্ধতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তা মেরামত, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন সংস্কারের নামে যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বিড়ম্বনা ঢাকার নগরবাসির জন্য নৈমিত্তিক স্থায়ী বিড়ম্বনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার কোন সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসন, ডিএমপি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, গণপরিবহন, ওয়াসা, ডিপিডিসি, তিতাস গ্যাসসহ ডিস্ট্রিবিউটর ও সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই নগরবাসিকে সারা বছরই নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নাগরিক পরিবেশ, জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তা ও গতিশীলতা নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত উদ্যোগের দাবী উঠে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কেউ কেউ সিটি গভর্মেন্ট বা নগর সরকার করাও দাবী তুলেছেন। আপাতত: শিল্পোন্নত অনেক আধুনিক শহরের মত নগর সরকারের ধারণা বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও ২৬টি সেবাদানকারী সংস্থার কর্মকা-ে একটি সমন্বয় স্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে বিড়ম্বনাসহ অব্যবস্থাপনা দূর করা অনেকাংশে সম্ভব হতে পারে।
দীর্ঘদিন অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে পরিচালিত হয়েছে বিভক্ত ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন। মূলত: নগরবাসির প্রত্যাশা পূরণে সুবিধার কথা বিবেচনা করেই সিটিকে দুইভাগ করার কথা বলা হলেও বিভক্তির পর নাগরিক সেবার মানবৃদ্ধির বদলে বহুলাংশে কমেছে। এ কারণে গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র প্রার্থীদের কাছে নগরবাসির প্রত্যাশা যেমন ছিল তুঙ্গে, তেমনি ভোটের রাজনীতিতে আরেক ধাপ এগিয়ে মেয়র প্রার্থীরাও নানা রকম প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়িয়েছেন। ইতিমধ্যে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সে সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রাথমিক উদ্যোগও দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে ঢাকার দুই মেয়রকে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে সরকার। এতদিন নাগরিক সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতাকেই মূল অন্তরায় হিসেবে দেখিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। কিছুটা দেরিতে হলেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, খাল ও জলাধার পুনরুদ্ধার থেকে শুরু করে নগরীর পরিবেশগত উন্নয়ন ও নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ডিএসসিসি’র এই সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এই কার্যক্রমের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের তলদেশসহ বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি অ্যাকশন কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ডিএমপিকে। এ ছাড়া ঢাকার ডিসির নেতৃত্বে ১৫ দিনের মধ্যে নগরীর খালগুলোর উপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১ মাসের মধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
নাগরিক সেবায় শৃঙ্খলায় প্রতিষ্ঠায় এই সমন্বিত উদ্যোগের ফলে উন্নয়ন, সংস্কার ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময় ক্ষেপণ ও অর্থনৈতিক অপচয় কমে আসার সাথে সাথে জনভোগান্তি লাঘব হবে বলে সকলের প্রত্যাশা। পরিচ্ছন্নতা এবং সবুজায়নের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন ১০% হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড় দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইনসেনটিভ ঘোষণার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা ও ভবন নির্মাণ বিধিমালা লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষত: বাণিজ্যিক এলাকায় রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্কিং এবং ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোর বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যে সব রাস্তায় কোন ফুটপাত নেই পথচারীদের পায়ে হাঁটার সুযোগ নির্বিঘœ রাখতে সে সব রাস্তায় ফুটপাত তৈরী ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নগরীর উন্নয়নে সব সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ শুধু ঢাকা দক্ষিণে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। ঢাকা উত্তর এবং দেশের সবগুলো সিটি কর্পোরেশন ও বড় শহরেও একই ধরনের সংস্কার ও সমন্বয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। দখল, ভরাট, দূষণ ও বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে রাজধানীসহ প্রতিটি জনপদকে রক্ষা করে আধুনিক, পরিবেশবান্ধব, বিনিয়োগবান্ধব ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে শুধু সিটি কর্পোরেশন ও সেবা সংস্থাগুলোকেই নয়, নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ তাতে নিশ্চিত করতে হবে। শুধু সিদ্ধান্ত গ্রহণই যথেষ্ট নয়, গৃহিত সিদ্ধান্তের যথাযথ বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকা দক্ষিণের এই সময়োপযোগী উদ্যোগ যথাশীঘ্র বাস্তবায়ন ও সাফল্যম-িত হোক, এই প্রত্যাশা আমাদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন