সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় দেশের অর্থনীতি ও শিল্প-বিনিয়োগে যখন মন্দা দেখা দিয়েছে, তখনো দেশের শিল্প-বিনিয়োগের বৃহত্তম কনগ্লোমারেট বেক্সিমকো গ্রুপ নতুন নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে চলেছে। মাত্র দেড়মাস আগে দেশের প্রথম কোম্পানী হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম অর্থনৈতিক হাব কুয়েতে ওষুধ রফতানি শুরুর মধ্য দিয়ে ওষুধ শিল্পে নতুন সম্ভাবনার সূচনা করেছিল। কুয়েতে ওষুধ রফতানীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই মধ্যপ্রাচ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী ওষুধের বিশাল বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। মাত্র দেড় মাসের মাথায় আমেরিকায় ওষুধ রফতানি কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সেই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিল বেক্সিমকো। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হোটেলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটের হাতে বেক্সিমকো ফার্মার উৎপাদিত হাইপারটেনশনের ওষুধ কার্ভোডিলল রফতানির প্রথম চালান তুলে দিয়ে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক স্থাপন করলো বেক্সিমকো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের গার্মেন্টস পণ্য রফতানির পাশাপাশি ওষুধ রফতানির এই শুভ সূচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা একটি নতুন সোপানে পা’ রাখল। এই গৌরবময় সাফল্যের মধ্য দিয়ে বেক্সিমকোর হাত ধরে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প এক নতুন উচ্চতায় আসীন হল।
বেক্সিমকো গ্রুপ তার কর্পোরেট মটো হিসেবে যে শ্লোগান তুলে ধরছে তা’ হল- ‘টেকিং বাংলাদেশ টু দ্য ওয়ার্ল্ড’। বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার সেই মহাব্রত বেক্সিমকো গ্রুপ যথার্থভাবেই পালন করে চলেছে। দেশের ওষুধ শিল্পে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল শিল্পে বেক্সিমকো ফেব্রিক্স, সিরামিক সামগ্রী রফতানীতে বেক্সিমকো গ্রুপের সাইনপুকুর সিরামিক্স, রিয়েল স্টেট, এলএনজি ও জ্বালানী খাত, সৌরশক্তি বা রিনিউয়্যাবল এনার্জি খাত, আইটি আউটসোর্সিং ও সফ্টওয়্যার শিল্প, টেলিকমিউনিকেশন ও মিডিয়াসহ বেক্সিমকোর উদ্যোক্তাবৃন্দ যেখানেই হাত দিয়েছেন সেই খাতকেই বিশ্বমানে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের এসব উদ্যোগ দেশের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান, শত শত মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক রেমিটেন্সের পাশাপাশি খরা-বন্যার বাংলাদেশ, পশ্চিমা দুনিয়ায় পণ্য রফতানীতে একটি ব্রান্ডিং ডেস্টিনেশন হিসেবে উন্নীত করেছে। বাংলাদেশকে একটি ইতিবাচক সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে এই ব্রান্ডিং-এর কৃতিত্ব অনেকটাই বেক্সিমকো গ্রুপের প্রাপ্য।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের শিল্প বিকাশের অঙ্গীকার নিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক উদ্যোগ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ রফতানীমুখী শিল্প পরিবার বা গ্রুপ অব কোম্পানীতে পরিণত হওয়ার যে পথরেখা নির্মাণ করেছেন বেক্সিমকোর নিরলস উদ্যোক্তারা, তা’ যেন বাংলাদেশের রফতানী বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার আলোক দিশারি হয়ে উঠেছে। একটি সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের সন্তান সোহেল এফ রহমান, সালমান এফ রহমান ভ্রাতৃদ্বয় তিলে তিলে এই প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলেছেন। তারা এখন যথাক্রমে বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত সাড়ে চারদশক ধরে তাদের হাত ধরে এই শিল্পগ্রুপ এখন ওষুধ, টেক্সটাইল ও সিরামিকসহ নানা সেক্টরে বাংলাদেশের রফতানী বাণিজ্যে পথ প্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। রহমান পরিবারের হাত ধরে বেক্সিমকোর গৌরবময় ঐতিহ্যের মুকুটে আরেকটি হীরক প্রতিভা হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এমপি। তাদের মেধা, অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সমন্বিত পরিকল্পনায় বেক্সিমকো গ্রুপ বাংলাদেশের জন্য নতুন নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে সক্ষম হচ্ছে। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের অন্যান্য শিল্পোদ্যোক্তাও যদি বিশ্বের কাছে বাংলাদেশী পণ্যের ব্রান্ডিং তুলে ধরতে পারে, তবে আমরা আগামী দশকের শেষে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে দেখতে পাব। বেক্সিমকো সেই সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে অনন্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হলেও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার একক প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং সামাজিক-রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। জেনেরিক ওষুধের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিতর্ক ও জটিলতা কাটিয়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর ওষুধ রফতানির প্রতিবন্ধকতা আরো ১৭ বছরের জন্য শিথিল করেছে। এই সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার পর বিশেষত পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার যে আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রফতানীর মধ্য দিয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সেই সম্ভাবনার পথকেই প্রশস্ত ও সুগম করে দিল। বেক্সিমকোর হাত ধরে বাংলাদেশের এই জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন