শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

অতিবর্ষণ জোয়ার ও পাহাড়ি ঢল চট্টগ্রামে সড়ক ক্ষত-বিক্ষত

প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ সড়ক, রাস্তাঘাট বর্তমানে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে চরম বেহালদশায় পৌঁছেছে। আগ্রাবাদ-বন্দর-সল্টগোলা-সিমেন্ট ক্রসিং হয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়ক, বহদ্দারহাট-সিএন্ডবি-কালুরঘাট সড়ক, মুরাদপুর-বিবিরহাট-অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কসহ চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুর্দশায় অসহনীয় জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরীর প্রতিটি সড়ক স্থানে স্থানে বিপজ্জনক ফাটল, ভাঙন ও খানাখন্দে ভরা। প্রাক-বর্ষা ও বর্ষায় সা¤প্রতিক অতিবর্ষণ পানিবদ্ধতা একই সাথে ঘন ঘন প্রবল সামুদ্রিক জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলজুড়ে সড়ক-মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় রাস্তাঘাটের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মহানগরী ও বৃহত্তর জেলার ক্ষত-বিক্ষত এসব সড়ক, মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ এসব সড়ক মহাসড়কে যানজট প্রতিনিয়ত লেগেই আছে। সেই সাথে হাজার হাজার যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগের মাত্রাও বেড়েই চলেছে। বিপর্যস্ত সড়ক মহাসড়কের দুর্দশাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর পরিবহন মালিক-শ্রমিক যথেচ্ছ হারে ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে বাস-মিনিবাস, কোস্টার, কোচ, সিএনজি অটোরিকশা, রাইডার, টেম্পু যাত্রীদের কাছ থেকে। এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে।
বিগত মে-জুন-জুলাইয়ে থেমে থেমে প্রবল বর্ষণ, সামুদ্রিক জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলের কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার সড়ক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রাথমিক হিসাব মতে, এতে করে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অর্থাৎ সড়ক পুনঃ মেরামতে সম্ভাব্য ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় একশ’ ১০ কোটি টাকা। অধিকাংশ সড়কের উপরিভাগের ছাল-বাকল, আস্তর-ইট-কংকর উঠে গেছে। অসংখ্য গর্ত, ফাটল ও খানাখন্দে ভরে গেছে সড়কগুলো। সড়কের উপর দিয়ে কাদা-পানি জমে আছে। এ অবস্থায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মহানগরীর বেশিরভাগ সড়ক। তাছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার অধিকাংশ সড়ক ভেঙেচুরে খানাখন্দে একাকার হয়ে গেছে। অনতিবিলম্বে মেরামত করা ছাড়া সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী করা সম্ভব হবে না।
এদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বত্রই সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক-মহাসড়ক সংস্কারে তেমন কোন সুফল আসেনি। বরং অগণিত যাত্রীর অবর্ণনীয় ভোগান্তির সাথে নির্মম প্রহসনে পরিণত হয়েছে। গুণগতমান বজায় রাখার প্রশ্নে উপযুক্ত তদারকি ছাড়াই বিদ্যুৎগতিতে যেভাবে সংস্কার চলে তাতে কাজের মান নিয়ে শুরুতেই সন্দেহ দেখা দেয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কই এখন পর্যন্ত স্বচ্ছন্দে যানবাহন চলাচলের জন্য উপযুক্ত ও স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুর্নীতিবাজ চক্রটির সাথে অসৎ ঠিকাদারদের যোগসাজশে সড়ক মেরামত ও সংস্কারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ গছিয়ে দেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ে এসে সড়ক, মহাসড়কের মেরামত ও সংস্কার কাজের গুণগতমান অর্থাৎ মেরামত টেকসই আদৌ হবে কিনা এ সম্পর্কে কোন নিবিড় তদারকির ব্যবস্থা ছিল না। শুধুই চটজলদি কাজ সারতে বলা হয়েছিল। এ অবস্থায় এলোপাতাড়ি কিছু বিক্ষিপ্ত জায়গায় বালি, মাটি, ভাঙাচোরা ইট, সুরকি ও কংকর ফেলা হয়। এভাবে নয়-ছয় করে মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা হরিলুট করা হয় অল্প সময়ের মধ্যেই। এরফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভের শেষ নেই।
সড়ক-মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, আন্তঃজেলা উপজেলা সড়কগুলোতে সংস্কার কাজের হুড়োহুড়িতে যথেচ্ছ শুভংকরের ফাঁকি আর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক, মহাসড়কের ভাঙাচোরা ও খানাখন্দ, গর্তের সংস্কারের পর বর্তমান অবস্থা দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, অত্যন্ত নিম্নমানের ইট-সুরকি, বালি-মাটি আর কংকরের ব্যবহারের কারণেই এহেন দুরবস্থা বিরাজ করছে। অথচ আগের অল্পস্বল্প খানাখন্দগুলো সময়মতো সংস্কার করা হলে এখনকার মতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়তো না এসব সড়ক মহাসড়ক। চট্টগ্রাম অঞ্চলের অংশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ভায়া উখিয়া-টেকনাফ, হাটহাজারী-ফটিকছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ চট্টগ্রামের প্রধান ২২টি রুটে সড়ক মেরামতের পরও এখন আগের মতোই খানাখন্দে, ফাটল ও ভাঙনে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। যাত্রীদের দুঃসহ কষ্ট ও দুর্ভোগ লাঘব হয়নি। সড়ক, মহাসড়কের দুর্দশার কারণে প্রতিনিয়ত যাত্রী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। নাজুক, জরাজীর্ণ, ভঙ্গুর, বেহাল সড়কগুলোর টেকসই ও স্থায়ীভাবে সঠিক তদারকির মাধ্যমে সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনসাধারণ, যাত্রী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জোরালো দাবি তুলেছেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ উদাসীনতা ও অবহেলার পরিণামে চট্টগ্রামের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কের খানাখন্দে ভগ্নদশা বেড়েই চলেছে। এবার বর্ষার আগে এবং গোড়াতেই ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল, প্রবল জোয়ার, নদ-নদীর ভাঙন, পানিবদ্ধতা ও আকস্মিক বন্যার কারণে বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের কমপক্ষে ২০টি সড়ক, মহাসড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। খানাখন্দে ভরা সড়কে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। অহরহ ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অংশের সিংহভাগ এলাকায় আগের মতো অনায়াসে ও স্বাভাবিক গতি বজায় রেখে যেকোন যানবাহন চালিয়ে গন্তব্যে সময়মতো যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সড়ক খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের অভাবে চসিক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছে না মহানগরী এলাকায়। মহানগরী ছাড়াও চট্টগ্রাম শহরতলী এলাকা, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান সড়কের পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়ার অংশে বাস-মিনিবাস, কোচ চলাচলের অনুপযোগী রয়েছে সড়কের ভাঙাচোরা অধিকাংশ জায়গা। এতে করে দুর্ঘটনা ছাড়াও উভয় মহাসড়কে দীর্ঘস্থায়ী যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় বেশি লাগছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন