বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

হিজরি নববর্ষের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

আলম শামস | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২০, ১২:১০ এএম

হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহররম। মহররম আরবি শব্দ। শব্দটি সম্মানিত, পবিত্র ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। মহররম মাসের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলা হয়। আশুরা দিবসের কারণে মহররম মাস ফজিলতপূর্ণ। হজরত হোসাইন (রা.)’র শাহাদত আশুরাকে আরো স্মরণীয় করেছে। মূলত হিজরতের ঘটনাকে স্মরণ করে হিজরি সনের প্রবর্তন করা হয়েছে। এ সনের গণনা হয় চাঁদের হিসাব অনুযায়ী। এ জন্য হিজরি বর্ষকে চান্দ্রবর্ষও বলা যায়। ইসলামের অভ্যুদয়ের পর পবিত্র মক্কায় ইসলাম বিরোধীদের নির্যাতনের মুখে নবুয়তের ১৩তম বছরে হজরত মুহাম্মদ (সা.) তৎকালীন ইয়াসরিবে (আজকের মদিনায়) হিজরত করেন। হিজরতের পর থেকেই মুসলমানদের ঘুরে দাঁড়ানোর যুগের সূচনা হয়। ইসলামের বিকাশ ও জয়যাত্রার ইতিহাসে হিজরতের তাৎপর্য তাই ব্যাপক।

মুসলমানদের কাছে হিজরি ক্যালেন্ডার অন্য যে কোনো ক্যালেন্ডারের মতো নয়। মুসলমানরা এ ক্যালেন্ডারের হিসাবে নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজের মতো ইবাদতগুলো পালন করে। আর এসব পালন করতে গিয়ে তাদের অনেক ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করতে হয়। মুসলমানের জীবনে কোনো ভোগ নয়, ত্যাগই তার সাধনা-এটাই মনে করিয়ে দেয় এই ক্যালেন্ডার। হিজরি ক্যালেন্ডার কোনো মানুষের জন্ম বা মৃত্যুকে উপলক্ষ করে শুরু হয়নি। তা শুরু হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তারা সাহাবিদের জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করার মতো ত্যাগের চরম পরাকাষ্ঠা দেখানোর স্মরণে। সে হিসেবে বলা যায়, হিজরি ক্যালেন্ডারের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো জীবনে ত্যাগ ও তিতিক্ষার প্রতিফলন ঘটানো।

মুসলিম জীবনে হিজরি সন ও তারিখের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কারণ হিজরি সন এমন একটি সন, যার সাথে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তামাদ্দুন ও ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। মুসলমানদের রোজা, হজ, ঈদ, শবেবরাত, শবেকদর, শবেমিরাজসহ ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান, দিন, উৎসব ইত্যাদি হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও আনন্দ-উৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের অনুসারী। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, হিজরি সনের পহেলা মাস মহররম একের পর এক আমাদের দুয়ারে হাজির হয় ঠিকই, কিন্তু হিজরি সনের নব আগমন উপলক্ষে থাকে না বিশেষ কোনো আয়োজন।

ঈসায়ী নববর্ষ কিংবা বাংলা নববর্ষের আগমনে আমাদের দেশের তথাকথিত সংস্কৃতিপ্রেমীরা সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির চর্চায় মেতে ওঠে। এতে ইসলামি বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা করা হয় না। একশ্রেণির তারুণ-তরুণী নববর্ষ উদযাপনের নামে অশ্লীলতা ও বেলেল্লাপনায় গা ভাসিয়ে দেয়। ঈসায়ী নববর্ষ কিংবা বাংলা নববর্ষকে যেভাবে গুরুত্ব তথা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উদযাপন করা হয় এবং হিজরি নববর্ষের প্রতি অবহেলা দেখে মনে হয় হিজরি নববর্ষের যেন আমাদের প্রয়োজনই নেই।

খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর শাসনামলে ১৬ হিজরি সনে, প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) ইরাক এবং কুফার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একদা হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) খলিফা ওমরের (রা.) খেদমতে এ মর্মে পত্র লিখেন যে, আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশ সংবলিত যেসব চিঠি আমাদের নিকট পৌঁছে তাতে দিন, মাস, কাল, তারিখ ইত্যাদি না থাকায় কোনো চিঠি কোন দিনের তা নিরূপণ করা আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। এতে করে আমাদের নির্দেশ কার্যকর করতে সমস্যা হয়। অনেক সময় আমরা বিব্রত বোধ করি চিঠির ধারাবাহিকতা না পেয়ে। হজরত আবু মুসা আশআরীর চিঠি পেয়ে হজরত ওমর (রা.) এ মর্মে পরামর্শ সভার আহবান করেন যে, এখন থেকে একটি ইসলামি ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করতে হবে। উক্ত পরামর্শ সভায় হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.)সহ বিশিষ্ট অনেক সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সকলের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে ওই সভায় হযরত ওমর (রা.) হিজরতের বছর থেকেই ইসলামি দিনপঞ্জি গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জুমাদাল উলা ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, হিজরী সনের প্রথম মাস হলো মহররম। মহররম একটি তাৎপর্যমন্ডিত ও বরকতময় মাস। মুসলিম ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কুরআন কারিমে এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘চারটি মাস রয়েছে যেগুলো সম্মানিত মাস। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো মহররম। (সুরা তাওবাহ : ৩৬)। আর এ মাসেই রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ‘আশুরা’। মহররমের দশম তারিখে ঐতিহাসিক ‘কারবালা’ প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদত বরণ করেছিলেন। এছাড়াও বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনে ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও এই দিনে আরও অনেক ঘটনা ঘটবে। মহররমের ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নফল রোজা। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুল (সা.)-কে এই দিন (আশুরার) এবং এই মাসে রমজানের রোজার চেয়ে অন্য কোনো রোজাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি। (মিশকাত শরিফ)। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার বিশ্বাস যে, আশুরার রোজার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা বিগত এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন।’ (তিরমিজি শরিফ)
লেখক: কবি ও সাংবাদিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ২১ আগস্ট, ২০২০, ৭:২০ এএম says : 0
ভালো
Total Reply(0)
Kazi Md. Diljeb Kabir ২১ আগস্ট, ২০২০, ৯:০৬ এএম says : 0
খুবই ভালো লাগলো
Total Reply(0)
Kazi Md. Diljeb Kabir ২১ আগস্ট, ২০২০, ৯:০৬ এএম says : 0
খুবই ভালো লাগলো
Total Reply(0)
Perveen Minu ২১ আগস্ট, ২০২০, ৭:২৯ পিএম says : 0
বাহ্, অনেক তথ্য জানা গেলো
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন