আমড়া একটি সুস্বাদু উপকারী ফল। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে হয় হলুদ। পাকা আমড়া দেখলে কার না জিভে পানি আসে। বিলেতী আমড়া যাকে বলা হয়। সেটা আসলে বিলেত থেকে আসেনি। এসেছে ফিজি দ্বিপুপুঞ্জ থেকে। এই আমড়ার বৈজ্ঞানিক নাম স্পনডিয়া ডাসি। দেশী আমড়ার বৈজ্ঞানিক নাম স্পনডিয়া মেগনিফেরা। কেবল দামে কম নয়। আমড়ার আছে অনেক গুন। আপেলের চেয়েও আমড়ায় প্ররােটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন থাকে বেশি।
নানাভাবে মুখরোচক আমড়া খাওয়া যায়। কাচা, লবন, মরিচ দিয়ে বানিয়ে, রান্না করে, মোরব্বা, আচার, জেলি তৈরী করে। আবার আমড়ার চাটনিও সুস্বাদু। সর্দি জ্বর, ঠান্ডায় আমড়া অত্যন্ত উপকারী। দাঁতে ব্যথা, মাড়ি ফোলা, পুঁজ পড়ে যাদের তারা আমড়া খেলে উপকার পাবেন। আমড়ায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, লোহা, ক্যালসিয়াম ও আঁশ। আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়তা করে। আর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কাঠালের মতো আমড়ার কোন কিছুই ফেলনা নয়। কাচা আমড়া রান্না করে বা ভর্তা বানিয়ে তো খাওয়াই হয়। এমনকি খোসা সিদ্ধ করে বেটে সুস্বাদু চাটনি হয়। পাচফোড়ন আর গরম মসলা দিয়ে তৈরী এই চাটনি খুব সুস্বাদু। ঢাকার মহাখালী সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। আমড়ার আচার নানাভাবে বানানো যায়। আমড়া কেটে নিন। তারপর কাচা মরিচ, ভিনেগার ও সরিষা বাটা লাগিয়ে নিন। এবার পাচ ফোড়ন, হলুদ, মরিচের গুড়ো দিয়ে কষাতে হবে। আমড়া সিদ্ধ হয়ে গেলে চিনি, সামান্য তেল ও খাবার রং দিন। এই তো হয়ে গেলো সুস্বাদু আমড়ার আচার। আমড়া কুচি কুচি করে মুশরীরর ডালের মধ্যে দেয়া যায়। যেটাকে বলে আমড়ার ডাল। টক টক অসাধারণ তার স্বাদ।
আমড়ায় জলীয় অংশ ৮৩.০২, খনিজ ০.৬, লৌহ ০.৩৯, আশ ০.১, চর্বি ০.১, আমিষ ১.১, শর্করা ১৫, ক্যালসিয়াম ০.৫৫ ভাগ। বাংলাদেশে দুটি প্রজাতির আমড়ার চাষ হয়। দেশি আমড়া ও বিলাতি আমড়া। ১০০ গ্রাম আমড়ায় ২.৮ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। দৈনিক একজন মানুষের আয়রনের চাহিদা প্রায় ৩৫% পূরণ সম্ভব। যদি সে ১০০ গ্রাম আমড়া খায়। রক্ত সল্পতা দুর করে আয়রন। ১০০ গ্রাম আমড়া খেলে দৈনিক ভিটামিন সি চাহিদার প্রায় ৫০ পারসেন্ট পূরন হয়। ক্যালরির কথা যদি ধরা হয়, তাহলে ১০০ গ্রাম আমড়ায় মাত্র ২৯ ক্যালরি। ডায়েটে চোখ বুজে আমড়া খাওয়া যায়। সাম্প্রতিক গবেষনায় দেখা গেছে আমড়া রক্তে খারাপ কোলেস্টরের মাত্রা কমায়।
বাংলাদেশের মধ্যে বরিশালের আমড়া সবচেয়ে সুস্বাদু। বরিশাল অঞ্চলে আমড়ার বানিজ্যিক চাষ হয়। ছাদে, বেলকোনিতে বড় টবে আমড়া গাছ লাগানো যায়। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর আমড়ার মৌসুম। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আমড়া রফতানিও হচ্ছে।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
মুনালয়, দক্ষিন নাজিরপুর
ডাক ও থানা বানারীপাড়া, বরিশাল-৮৫৩০,
মেইল: Safiq69@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন