শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

তাদের প্রতি কোনোরূপ অনুকম্পা দেখানো যাবে না

| প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

রাজধানীজুড়ে তারের জঞ্জাল। এনিয়ে পত্রপত্রিকায় বছরের পর বছর লেখালেখি হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। বিদ্যুতের খুঁটিতে বিদ্যুতের তার তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে ইন্টারনেটের তার, ডিস এন্টেনার তারও। তারের এই জঞ্জাল রাজধানীর সৌন্দর্যের জন্য যেমন হানিকর, তেমনি মূর্তিমান বিপদেরও কারণ। ঝুলন্ত বিদ্যুতের তার ছিড়ে পথচারীদের বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যুবরণের ঘটনা হরহামেশাই ঘটতে দেখা যায়। উন্নতর দেশের কোনো শহরে বা কোথাও তার ঝুলতে দেখা যায় না। তার মাটির ওপরে নয়, নীচ দিয়ে টেনে নেয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও একযুগ আগে ঝুলন্ত তার অপসারণ করে মাটির নীচ দিয়ে টেনে নেয়ায় উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য মাটির নীচে কমন নেটওয়ার্ক করতে লাইসেন্স দেয়া হয় ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন্স ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ককে (এনটিটিএন)। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) তরফে জানানো হয়েছে, দীর্ঘ ১২ বছরে ঝুলন্ত তারের মাত্র ২০-৩০ শতাংশ ভূগর্ভে স্থানান্তরিত হয়েছে। বাকী ৭০-৮০ শতাংশ এখনো পর্যন্ত ঝুলছে। এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগটির এহেন শোচনীয় পরিস্থিতির জন্য বিটিআরসি ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও কেবল অপারেটরদের দায়ী করে থাকে। তার মতে, আইএসপি ও কেবল অপাটেরদের বারবার তাগাদা এমনকি আলটিমেটাম দেয়ার পরও কখনো কাজ হয়নি। তারা তার সরাইনি। সর্বশেষ তার অপসারণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ ৩০ মে পর্যন্ত সময় বেধে দেয়। এই সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তার অপসারণ শুরু করেছে এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তরফে বলা হয়েছে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাস্তা ব্যবহার করে ব্যবসা করতে হলে প্রতি কোম্পানিকে ২৫ লাখ টাকা ফি দিয়ে নিবন্ধন নিতে হবে। তা না হলে কাউকে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। জানানো হয়েছে, এই রাজস্ব পেলে তার মাটির নীচ দিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই সিদ্ধান্ত ও প্রতিজ্ঞায় অটল থাকলে আশা করা যায়, তারের জঞ্জাল রাস্তা থেকে অপসারিত হবে এবং মাটির নীচে তার স্থানান্তরের কাজ দ্রুতই সম্পন্ন হবে।

আশ্চর্যের কথাই বটে, ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং কেবল আপারেটররা বিনা অনুমোতিতে বিনা লাইসেন্সে এবং কোনো প্রকার ফি বা রাজস্ব না দিয়েই বছরের পর বছর ব্যবসা করে আসছে। ইন্টারনেট ও ডিসলাইনের ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। একারণেই এ ব্যবসার দখল নিয়ে দ্ব›দ্ব-ফ্যাসাদ, মারামারি এমন কি খুনোখুনি হতেও দেখা গেছে। দেশটা কি মগের মুল্লুক যে, লাইসেন্স-নিবন্ধন-অনুমতি, অনুমোদন, ফি-রাজস্ব ছাড়াই ব্যবসা করা যায়? দু:খজনক হলেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে। রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড ব্যাংক ইত্যাদি ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশের সেবার মান নিম্ন, সেবামূল্য অত্যাধিক, আচার-আচরন অমানবিক। তারপরও মানুষ বাধ্য হয়ে তাদের দ্বারস্থ হয়। এই সব প্রতিষ্ঠানের একটা বড় অংশের অনুমোদন নেই, লাইসেন্স বা নিবন্ধন নেই এবং তারা সরকারকে কোনো রাজস্বও দেয় না। অথচ দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে আসলে কতটা বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার আছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ধারণা করা হয়, ১৭ হাজারের কম হবে না। এই করোনাকালে কিছু হাসপাতালের দুর্নীতি-অপকর্মের কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত টাস্কফোর্স দেশের সকল বেসরকারী হাসাপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে তাদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য সময়সীমা বেধে দেয়। জানা গেছে, এই সময়সীমার মধ্যে ১২১২৭টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ৪৫১৯টি। অপেক্ষমান আছে ৭৬০৮টি। আর আবেদন করেনি এমন প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩৫০০টি। হাজার হাজার হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দিনের পর দিন ব্যবসা করে গেছে সরকারকে এক পয়সা রাজস্ব না দিয়ে। অন্য কোনো দেশে এটা কল্পনাও করা যায় না। বলার অপেক্ষা রাখেনা, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্র্তৃপক্ষ এর দায়-দায়িত্ব কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।

যে কোনো খাতে শৃংখলা, সুশাসন, জবাবদিহিতা, তত্ত্বাবধান ও নজরদারি অত্যাবশ্যক। এসব না থাকলে ওই খাত থেকে প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া সম্ভবপর হয় না। সেবামূলক খাতে এগুলোর প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি। কারণ, সেবার সাথে মানুষ সরাসরি জড়িত। টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ বা স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম, বিশৃংখলা, দুর্নীতি দায়িত্বহীনতা প্রশ্রয় পেলে মানুষের দুর্ভোগ ও ক্ষতির কোনো পরিসীমা থাকে না। ইন্টারনেট ও ডিসের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে যেমন তেমনি বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও এটা বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও কেবল অপারেটররা নানা ধানাই পানাই শুরু করেছে। তা শোনা যাবেনা। তাদের মনে রাখতে হবে, সাবমেরিন কেবল পর্যন্ত যেখানে মাটির নীচে এবং হাওরেও পানির ওপর দিয়ে লাইন না নেয়ার কথা বলা হয়েছে, সেখানে তাদের তারের স্তুূপ রাস্তায় থাকবে, কিভাবে তারা এটা আশা করে? অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট বিধি-নিয়মের আওতায় আনতে হবে সকল প্রতিষ্ঠানকে এবং প্রাপ্য রাজস্ব ও আদায় করতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকের ক্ষেত্রেও। বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের আবেদন করতে পারেনি তাদের জন্য সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। এজন্য বড় জোর ৭২ ঘণ্টা সময় বাড়ানো যেতে পারে। যারা লাইসেন্সের শর্তাবলী পূরণ করতে পারবে না, তাদের লাইসেন্স নবায়ন হবে না, এটাই সাফ কথা। আলোচ্য উভয় বিষয়ে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করতে হবে। সব কিছু নিয়ম-শৃংখলার মধ্য আসতে হলে যথোপযুক্ত কঠোরতা প্রদর্শনের বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack Ali ২৮ আগস্ট, ২০২০, ৮:৪৫ পিএম says : 0
Government don't know how to rule a country as such anybody can do anythings.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন