আইয়ুব আলী : বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে এককভাবে বেশিসংখ্যক হাজী প্রতিবছর হজ পালন করতে যান। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হজ ফ্লাইট হজযাত্রীদের চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল হওয়ায় এবং বিভিন্ন কারণে হাজীদের প্রতি বছরের মতো এবারও হজে যেতে অশেষ বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। এ বছর চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে প্রায় ৯৭টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার হজযাত্রী হজে যাচ্ছেন। গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত অনেক হজযাত্রী হজ ফ্লাইটের সিডিউল তথা নিশ্চয়তা পাননি। এতে করে হজযাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এমনকি অনিশ্চয়তা ভর করেছে। হজ মওসুমে সাপ্তাহিক সিডিউল ফ্লাইটসহ অপ্রতুলমাত্র কয়েকটি হজ ফ্লাইটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি জেদ্দা যেতে পারে। অধিকাংশ হাজীকে ট্রেনে-বাসে করে রাজধানী ঢাকা ঘুরে যেতে হয়। এতে হাজীদের নানামুখী দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী হাজীক্যাম্পটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সেখানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যে হাজী ক্যাম্পে হজ মওসুমে সারাদেশের হাজীদের পদচারণায় মুখরিত থাকার কথা তা এখন নিষ্প্রাণ। চট্টগ্রামের উৎকণ্ঠিত হজযাত্রী ও হজ সংশ্লিষ্টরা পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্প ফের চালু করে চট্টগ্রাম থেকে পর্যাপ্ত সøটে সরাসরি হজ ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়েছেন। চট্টগ্রামে দেশের প্রথম হাজী ক্যাম্প ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকার পরও হজযাত্রীরা বিভিন্ন হয়রানির সম্মুখীন। হাজীদের সহযাত্রী নিয়ে ঢাকায় গিয়ে নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। হজ এজেন্সীগুলোরও ঢাকায় বিভিন্ন ঝামেলা ও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। চট্টগ্রামে হজ কার্যক্রম চালু না থাকায় হাজীদের ঢাকায় গিয়ে সময়মতো ফ্লাইট নিশ্চিত করা ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে।
হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আহমদুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল (শনিবার) দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাপ্তাহিক সিডিউল ফ্লাইটসহ অপ্রতুলমাত্র কয়েকটি সরাসরি হজ ফ্লাইটে কয়েক হাজার হাজী জেদ্দা যেতে পারে। হাজীদের অধিকাশংই হরেক ঝক্কি-ঝামেলার মধ্যে ঢাকা হয়ে জেদ্দা যেতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, একসময় আরবীয়গণের সাথে তাদের পালতোলা জাহাজে করে চট্টগ্রাম থেকে হজযাত্রীরা যাওয়া-আসা করতেন। তবে সুলতানি আমলে পালতোলা জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সরকারিভাবে হজযাত্রী পরিবহন হতো। নিকট-অতীতে পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্প হয়ে চট্টগ্রাম থেকে পানিপথে হাজীরা ‘হিজবুল বাহার’ জাহাজযোগে হজে যেতেন। সারাদেশের আগত হাজীদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্প। দীর্ঘদিন ধরে হাজী ক্যাম্পটি বন্ধ থাকায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের হজযাত্রীদের নানা দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
আহমদুল ইসলাম হাজী ক্যাম্পটি পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে বলেন, হাজী ক্যাম্পটি চালু হলে চট্টগ্রামের হাজীদের হজের আনুষ্ঠানিকতা এখানে সম্পন্ন করে শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে সরাসরি জেদ্দা যেতে পারবেন। হজ এজেন্সীগুলোকে ঢাকায় ছুটতে গিয়ে অর্থ ও সময়ের অহেতুক অপচয়ের শিকার হতে হবে না। তাছাড়া ঢাকা আশকোনা হাজী ক্যাম্পের উপর চাপ কমে আসবে। তিনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হজযাত্রী পরিবহনে একটি উড়োজাহাজ বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে বলে মত ব্যক্ত করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেশের যাবতীয় কিছু ঢাকাকেন্দ্রিক। তার মধ্যে হজও অন্যতম। আহমদুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজযাত্রীদের ব্যাপারে আন্তরিক। তবে বিভিন্নমুখী অব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের হজযাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন