শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দক্ষিণের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

করোনার মধ্যেই শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনা সঙ্কটে বন্ধ হয়ে যাওয়া দক্ষিণাঞ্চলের ছোট, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকা ক্রমে সচল হতে শুরু করেছে। গতি সঞ্চারিত হচ্ছে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায়। যদিও মার্চের শেষভাগ থেকে জুনের মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় সবশিল্প প্রতিষ্ঠানই বন্ধ থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীদের যে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। তবুও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ চালু হওয়ায় আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে দক্ষিণাঞ্চলে অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক পরিবার। তবে খান সন্সের মালিকানাধীন বড় দু’টি টেক্সাটাইল মিল এখনো বন্ধ। এ ২টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শ্রমিক এখনো বেকার। কৃষি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠা বেশি দিনের নয়। ৮০ দশকে এ অঞ্চলে মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু সরকারি বরিশাল টেক্সটাইল মিল চালুর মধ্যে দিয়ে। পরবর্তিতে লোকশানের ভাড়ে নূহ্যমান এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি সেক্টরে ছেড়ে দেয়া হয়। খান সন্স গ্রুপ মিলটি চালু করে পর্যাক্রমে আধুনিকায়ন করে। এ শিল্প প্রতিষ্ঠানেরই সহযোগী সোনারগাঁও টেক্সটাইলেও বিপুল জনশক্তি কর্মরত ছিল। তবে পুজি বাজারে তালিকাভুক্ত এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটিও আপতত বন্ধ রয়েছে।
ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে বড় মাপের একটি বেসরকারি টিক্সটাইল মিলসহ আরো কয়েকটি ছোট মাপের শিল্প ইউনিট চালু হয়। বরিশালের দপদপিয়াতে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বড় অলিম্পিক সিমেন্ট ফ্যক্টরি। যার উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক প্রায় ৫ হাজার টন। সচল হতে শুরু করেছে বরিশালের নৌযান নির্মাণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও। ইতোমধ্যেই প্রায় সবগুলো নৌযানের নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এখানে কাজে ফিরেছে।
অপরদিকে বরিশাল মহানগরীতেই দেশের অন্যতম বৃহত ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান অপসোনিন ফার্মার যাত্রা শুরু স্বাধীনতার আগেই। তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অপসো স্যালাইন গড়ে উঠেছে এ নগরীতেই। দেশের ওষুধ শিল্পে বড় ধরণরে অবদান রাখছে অপসোনিন পরিবার। অপসোনিন পরিবারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গেøাবাল ক্যাপসুলও ওষুধ শিল্পে বড় ধরণের অবদান রাখছে। অপসোনিন পরিবারের সহযোগী পদ্মা ক্যাপ ও পদ্মা বেøায়ার’ও এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় বড় অবদান রাখছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১০ সহশ্রাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
এছাড়া বরিশালে মেডিমেট ফার্মাসিইউটিক্যালস, রেফকো ল্যারেটরিজ, কেমিস্ট ল্যাবরেটরিজও ওষুধ শিল্পে অবদান রাখার পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। বরিশালের বিসিক শিল্প এলাকায় বেঙ্গল বিস্কুট ফ্যাক্টরিসহ আরো বেশকিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে আরো বিপুল জনগোষ্ঠীর। এখানে শতভাগ রফতানিমুখি ফরচুন সু ফ্যাক্টরি বিদেশে জুতা রফতানি করে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয়সহ বিপুল জনশক্তির কর্মসংস্থান করছে।
বরিশালের হাটখোলা এলাকায় গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বড় বৈদ্যুতিক কেবলসহ সরঞ্জামাদির প্রতিষ্ঠান মোহাম্মাদিয়া ইলেকট্রিক প্রডাক্ট-এমইপিতে কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে আরো কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ মাঝারি ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠানে অন্তত ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছে। এসএমই খাতেও গত এক দশকে দক্ষিণাঞ্চলে বেশকিছু ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গড়ে ওঠায় আরো কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। করোনা সঙ্কটে গত ২৫ মার্চের পরে বন্ধ হওয়া এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধীরে ধীরে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে শুরু করেছে। এতে শ্রমিক পরিবারের সঙ্কট উত্তরণ ঘটতেও শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডস্ট্রিজ’র সভাপতি সাঈদুর রহমান রিন্টু জানান, মার্চের শেষভাগ থেকে সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প ও ব্যবসা ক্ষেত্র চরম বিপর্যয় নেমে আসে। তবে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আবার উৎপাদনে ফিরে আসায় অবস্থার ইতিবাচক উন্নতি হতে শুরু করেছে। এটা পুরো দক্ষিণাঞ্চলের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার জন্য একটি ভাল দিক। উৎপাদন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেকোন মূল্যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরনের তাগিদ দিয়েছেন। তাদের মতে, জীবিকার জন্য যেন জীবন বিপন্ন না হয়’ সে বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনার তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন