বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আইএস গোয়েন্দা বিভাগ বিশ্বব্যাপী হত্যার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে

প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন-৩
ইনকিলাব ডেস্ক : এক যোদ্ধা এক বন্দীকে হত্যা করার পর স্যাফ্রোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমাকে কেমন দেখাচ্ছিল? আমি যেভাবে হত্যা করলাম সেটা কি ভালো হয়নি?
স্যাফ্রো বলেন, তিনি যে ভিডিওতে অভিনয় করেছিলেন এ রকম সব ভিডিওই ঊর্ধ¦তন সদস্যদের সাথে মাসিক বৈঠককালে আদনানি নিজে পরীক্ষা করে দেখেন। আদনানি ঐ শূরার প্রধান।
স্যাফ্রো বলেন, প্রশিক্ষণ কালে যারা তালি মিলাতে পারত না তাদের সাথে নিষ্ঠুর ব্যবহার দেখার পর আইএসের প্রতি তার আনুগত্যে ভাঙন ধরে। প্রচারণা ভিডিও তৈরির সময় পাঁচ মিনিটের একটি ছবির জন্য প্রতিটি দৃশ্য অসংখ্য বার টেক করার ঘটনায় তার চূড়ান্ত মোহমুক্তি ঘটে।
তিনি পালিয়ে আসার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এ জন্য কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়। তিনি দৌঁড়ে ও একটি কর্দমাক্ত মাঠ ক্রলিং করে পাড়ি দিয়ে তুরস্কে পৌঁছেন। ২০১৫ সালের জুলাইতে ব্রেমেন বিানবন্দরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি স্বেচ্ছায় সব কথা স্বীকার করেন। সন্ত্রাসবাদে জড়িত অভিযোগে তার তিন বছর কারাদ- হয়।
ইসলামিক স্টেটের নতুন কাজের মধ্যে ছিল হামলা পরিকল্পনায় বিদেশীদের, বিশেষ করে ইউরোপীয়দের অন্তর্ভুক্ত করা। তার বক্তব্য তদন্ত দলিলপত্র এবং সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়নের সাথে মিলে যায় যে আবাউদের মত ফরাসি ও বেলজীয় নাগরিকরা সাধারণ যোদ্ধাদের চেয়ে বেশী কিছু ছিল এবং তাদের ব্যবস্থাপকের ভূমিকা দেয়া হয়েছিল।
সেন্টার ফর দি এনালাইসিস অব টেরোরিজম ইন প্যারিস-এর চেয়ারম্যান জাঁ চার্লস ব্রিসার্ড বলেন, আবাউদের মত এক ব্যক্তির উপর নির্ভর করা যার কিনা নিজস্ব নেটওয়ার্ক ছিল, একটি সৃজনশীল ও আগ্রহব্যঞ্জক রোডম্যাপ। আইএস কর্তৃপক্ষ তাকে কৌশল ও পন্থার ব্যাপারে স্বায়ত্ত শাসন দিয়েছিল যদিও সার্বিক অর্থে অপারেশন পরিচালনার সবুজ সংকেত তারাই প্রদান করত।
‘এমনি’র বর্তমান নেতৃত্ব প্রসঙ্গে তদন্তকারীরা দু’জনের বিষয়ে একমত হয়েছেন। তারা হল ছদ্মনামধারী ফরাসি নাগরিক আবু সুলেমান ও সিরীয় হিসেবে বর্ণিত আবু আহমদ। মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, তাদের দু’জনকেই আবু আদনানির শীর্ষ সহযোগী বলে গণ্য করা হয়।
ইউরোপীয় গোয়েন্দা তথ্যমতে, এ দু’জনই বিদেশে যোদ্ধা প্রেরণ, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং হামলাকারীদের ইউরোপে প্রেরণের জন্য পাচারকারীদের অর্থপ্রদান প্রভৃতিতে সরাসরি ভূমিকা পালন করে।
আবু সুলেমানের সম্ভাব্য ভূমিকার কথা জানা যায় নভেম্বরে প্যারিসে বাটাক্লান কনসার্ট হলে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের হাতে আটক একজন জিম্মির কাছে। ২৪ বছর বয়স্ক জিম্মি ডেভিড ফ্রিটজ গোয়েপিংগার বলেন, কনসার্টে আগমনকারী কয়েক ডজন লোককে হত্যার পর আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা একদল জিম্মির সাথে একটি হলওয়েতে অবস্থান নেয় এবং তাদেরকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য জানালার সামনে বসতে বাধ্য করে। আড়াই ঘন্টাকাল বন্দিত্বের সময় তিনি শুনতে পান যে এক হামলাকারী আরেক হামলাকারীকে জিজ্ঞেস করছে , আমরা কি সুলেমানের সাথে কথা বলব?
ফরাসি ভাষায় এ প্রশ্ন করায় দ্বিতীয় হামলাকারী উষ্মা প্রকাশ করে ও তাকে আরবিতে কথা বলতে বলে। ফ্রিটজ এক টেলিফোন সাক্ষাতকারে বলেন, আমি তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলাম যে এ ব্যক্তি আলাদা, সে হয়ত হামলার পরিকল্পনাকারী ছিল না, কিন্তু তাদের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি ছিল। হামলাকারীরা সৈন্যদের মত কারো নির্দেশের অপেক্ষা করছিল।
লন্ডনস্থ আইএইচএস কনফ্লিক্ট মনিটর-এর সিনিয়র এনালিস্ট লুডভিকো কার্লিনো বলেন, সুলেমানের পুরো ছদ্মনাম হচ্ছে আবু সুলেমান আল ফারানসি বা আবু সুলেমান ফরাসী। ধারণা যে ৩০ বছর বয়স্ক এ ফরাসি নাগরিক মরক্কো বা তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত। তিনি বলেন, আবাউদের মৃত্যুর পর সুলেমান ইউরোপে সন্ত্রাসী হামলার শীর্ষ পরিকল্পনাকারী পদে উন্নীত হয়েছেন।।
অন্য ঊর্ধ্বতন নেতা আবু আহমাদের নাম জানা যায় এক ব্যক্তির বক্তব্যে যাকে তদন্তকারীরা প্যারিসে হামলাকারী টিমের অংশ বলে সন্দেহ করেন। তার নাম আদেল হাদ্দাদি। আলজেরীয় নাগরিক এ ব্যক্তি বলেন, তিনি এবং টিমের আরেক সদস্য পাকিস্তানের লশকর-ই-তৈয়বার সদস্য মুহাম্মদ উসমান নৌকা যোগে গ্রিসে পৌঁছার পর অন্য দু’ হামলাকারী থেকে পৃথক হয়ে যান। ২৮ বছর বয়স্ক হাদ্দাদি ও ২২ বছর বয়স্ক উসমানকে শেষ পর্যন্ত অস্ট্রিয়ার সালজবার্গের এক উদ্বাস্তু শিবির থেকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য দু’জন নভেম্বরে প্যারিস হামলার সময় স্টেড দ্য ফ্রান্সের বাইরে সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটানো প্রথম দু’ আত্মঘাতী হামলাকারী।
ফরাসি ও অস্ট্রিয় তদন্ত দলিল অনুযায়ী হাদ্দাদি সিরিয়া পৌঁছে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাক্কায় আন্তর্জাতিক ডরমিটরিতে ওঠেন। সেখানে কয়েকমাস পাচক হিসেবে কাজ করার পর ‘এমনি’র একজন সদস্য তাকে নিয়ে যান। তিনি জানান যে আবু আহমাদ নামের একজন আমার সাথে কথা বলতে চান। তারা ৩শ’ গজ দূরের এক খালি এপার্টমেন্টে যান। ‘এমনি’র লোকটি অনর্গল কথা বলছিলেন। তিনি বলেন যে দায়েশ (আইএস) তাকে বিশ্বাস করে। আমাকে সে বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে হবে। তারা আমাকে ফ্রান্সে পাঠাতে যাচ্ছে। সেখানে পৌঁছার পর আমাকে বিশদ জানানো হবে।
এর কিছুক্ষণ পর আবু আহমাদ সেখানে আসেন। হাদ্দাদি বলেন, ৩৮ থেকে ৪২ বছরের মধ্যে বয়স এ সিরীয় ব্যক্তিটি কালো পোশাক পরে ছিলেন। তিনি ছিলেন ‘হুকুমদাতা’।
আবু আহমাদ উসমানসহ আরো ৩ জন সম্ভাব্য হামলাকারীর সাথে ইউরোপে রওনা হওয়ার একদিন আগে তার পরিচয় করিয়ে দেন। অন্য দু’জন ছিল স্থানীয় আরবিভাষী। উসমানও ভােেলা আরবি জানতেন। রওনা হওয়ার দিন আবু আহমাদ তাদেরকে তার তুর্কি সেলফোন নম্বর দেন ও এফএফ নামে তা সেভ করতে বলেন। তিনি হাদ্দাদিকে ২ হাজার ডলার দেন। তাদের তুরস্ক সীমান্তে পৌঁছে দেয়া হয়। সেখানে এক ব্যক্তি তাদের ছবি তোলে ও সিরীয় পাসপোর্ট দেয়। আরেক ব্যক্তি তাদের ৩ অক্টোবর বোটে করে গ্রিসের লেরোস বন্দরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। তাদের যাত্রাসহ সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করেন আইএসের অন্যতম উর্ধ্বতন নেতা সন্ত্রাস রফতানিকারক আবু আহমাদ। ডিসেম্বরে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আবু আহমাদের সাথে হাদ্দাদির যোগাযোগ ছিল। সূত্র দি নিউইয়র্ক টাইমস

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন