‘কিছু ভালো লাগে না, মন ভালো নেই-এমন কথাগুলো অনেক লোকের মুখে শোনা যায়। আমাদের নিত্যদিনের জীবনে নানা রকম ঘটনার চাপে পড়ে মন খারাপ হয়। শারীরিক মানসিক বা আর্থিক যেকোনো সমস্যাই হতে পারে। মনের এরকম অবস্থাকে বলে বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন। চাইলেই হুট করে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। তবে পরিস্থিতির সাথে সব কিছু মানিয়ে চলতে পারলে ভালো তা না হলে দীর্ঘদিন মানসিক কষ্টে ভুগতে হবে। ফলশ্রুতিতে জীবন স্থবির হয়ে যায় এবং দৈনন্দিন কাজ কর্ম ব্যাহত হয়। ডিপ্রেশন এমন একটি মানসিক সমস্যা যার অশুভ থাবায় মানুষের জীবন হয়ে পরতে পারে ক্ষত-বিক্ষত।
কাদের হয়
যেকোনো দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ১০-২০ ভাগ লোক ডিপ্রেশনে ভুগে থাকেন। পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ মেয়েরা এ রোগে ভুগে থাকেন।
৬৫ বছরের বেশী বয়সের ব্যক্তিরা অন্যদের তুলনায় এ রোগে বেশি ভুগে থাকেন।
বেকার, পরিবারে অশান্তি থাকলে, নিঃস্ব জীবনযাপন কারীরা ও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি ভুগে থাকেন।
কারণ
ডিপ্রেশন এর প্রকৃত কারণ অজানা থাকলেও রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানা গেছে। তা নিম্নে আলোচিত হলো-
জেনেটিক কারণ: এর মধ্যে জেনেটিক কারণ প্রধান। পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্নীয় পরিজনের মধ্যে এ সমস্যা থাকলে এ রোগ হতে পারে।
বায়োকেমিক্যাল কারণ: মস্তিস্কের সেরাটোনিন ও নরএড্রানালিন এর ঘাটতি এবং অনিয়ন্ত্রিত কর্টিসল হরমোন বৃদ্ধিকে ডিপ্রেশন সৃষ্টির রাসায়নিক ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।
ব্যক্তিত্ব: উদ্বেগপ্রবণ, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ব্যক্তি, অল্পকিছুকে বড় করে দেখা, নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়া-এসব সমস্যা ডিপ্রেশন বাড়িয়ে দেয়।
স্নেহবঞ্চিত ও অবহেলা: যে সব শিশু মা-বাবার স্নেহবঞ্চিত, পারিবারিক কোন্দলের মধ্যে বেড়ে ওঠে তাদের মধ্যে ডিপ্রেশনের মাত্রা বেশি থাকে।
রোগব্যাধি ও ঔষুধ: কিছু স্নায়বিক ও হরমোনের রোগ এবং কিছু ঔষুধ যেমন: স্টেরয়েড ও জন্মনিরোধক পিল মস্তিস্ককে প্রভাবিত করে ডিপ্রেশন বাড়াতে পারে।
অন্যান্য: গর্ভাবস্থায় ও অনেক দিন যাবৎ নিদ্রাহীনতাও ডিপ্রেশন বাড়াতে পারে। আবার বৈবাহিক জীবনে অসুখী, কর্মস্থলের সমস্যা, একাকীত্ব ইত্যাদি সমস্যার কারণেও ডিপ্রেশন হয়।
লক্ষণ:
বিষন্ন মন, আগ্রহীনতা, আনন্দহীনতা ডিপ্রেশনের প্রধান লক্ষণ।
তবে এর সঙ্গে, অপরাধবোধ, নৈরাশ্যবাদ, আত্মঘাতী চিন্তা, আত্মসম্মানবোধের অভাব, অরুচী, অনিদ্রা, ক্লান্তি, ওজনে পরিবর্তন, কাজে ধীরগতি ইত্যাদি।
মনে অশান্তি, অযথা মনঃকষ্ট, দুশ্চিন্তাবোধ ও মন খালি খালি লাগা, নেতিবাচক মনোভাব, সবকিছুতে হতাশা, নিজের কোনো ভবিষ্যৎ নেই-এমনটি ভাবা।
স্বরণশক্তির অভাব, শরীর ও মাথাব্যথা, যৌন বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
অ্যালকোহল পান করা, মাদকে জড়িয়ে পড়া।
অমনোযোগী, হজমে সমস্যা, একাকীত্ব, অতিরিক্ত রাগ প্রদর্শন।
শিশুদের ক্ষেত্রে মন খারাপ থাকা, ক্রমাগত কান্না করা, স্কুলে কোনো সমস্যা হলে যেতে না চাওয়া, বন্ধু বা আত্নীয়পরিজনের থেকে দুরে থাকা, মৃত্যু চিন্তা, অনিদ্রা, পড়াশুনায় অমনোযোগী, রেজাল্ট খারাপ হওয়া, ক্ষুধার ধরণ বদলে যাওয়া, ওজনের পরিবর্তন ইত্যাদি।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো যদি ২ সপ্তাহের অধিককাল স্থায়ী হয় তবে তাকে মেজর ডিপ্রেশন সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এদের মধ্যে যদি স্বল্প সংখ্যক লক্ষণ উপস্থিত থাকে, তবে তাকে মাইনর ডিপ্রেশন ধরা হয়। এই মাইনর ডিপ্রেশন পরবর্তীতে মেজরে পরিণত হয়। ডিপ্রেশন তুলনামুলক ১৮-৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তি ও মহিলাদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়। তবে আত্নহত্যার প্রবণতা পুরুষ ও বয়স্কদের বেলায় বেশি পরিলক্ষিত হয়।
চিকিৎসা:
ডিপ্রেশন দেখা দিলে মনোচিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে অভিক্ত হোমিও চিকিৎসকও ভালো ভূমিকা নিতে পারে।
বিষন্নতার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক কারণ থাকলে তার সমাধান করতে হবে।
সাইকোথেরাাপি রোগীর জীবন ও রোগ সম্বন্ধে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দুর করতে পারে।
ডিপ্রেশন বিরোধী ঔষধ নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করা যেতে পারে।
করণীয়
মনে রাখতে হবে, জীবনে চড়াই-উতরাই থাকবেই। এগুলো জীবনেরই একটি অংশ। তাই ডিপ্রেশন থেকে কাটিয়ে উঠতে হবে। মনে শক্তিধারণ করতে হবে।
রোগীর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের রোগীর প্রতি সহমর্মী হতে হবে।
রোগীকে উপহাস বা অবহেলা করা যাবে না।
ডিপ্রেশনের কোন লক্ষণ দেখা দিলে তাকে মানবিকভাবে বোঝাতে হবে। তার প্রতি মানবিক ভাব প্রকাশ করতে হবে।
জীবনকে ভালোবাসতে হবে। জীবনের সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে চলার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
সর্বদা পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহন, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম, হাসি, দুশ্চিন্তা মুক্ত জীবন, বেড়ানো ইত্যাদি ডিপ্রেশনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
রাগ নিয়ন্ত্রণ করা, পরিবারে সময় দেওয়া, ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়া, সংস্কৃতি চর্চা ইত্যাদি ডিপ্রেশনকে দুরে রাখতে পারে।
ডাঃ মোঃ হুমায়ুন কবীর
রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
৮৯, নিমতলী সিটি কর্পোরেশন মার্কেট
চাঁনখারপুল, ঢাকা- ১০০০।
মোবাইল নম্বরঃ- ০১৭১৭-৪৬১৪৫০, ০১৯১২-৭৯২৮৯৪।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন