শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি

প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের প্রায় ৫ মাস পর গত ৬ আগস্ট দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্যের নাম ঘোষণা করেছেন। নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটিতে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৪৯৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আগে এই কমিটির সদস্য ছিল ৩৮৬ জন। পুরনোদের পাশাপাশি ব্যাপক হারে নতুনদের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে এই কমিটিতে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে ৭৩ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আগে এর সদস্য ছিল ৩৬ জন। এখানেও বহু নতুন মুখের সংযোজন হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বিএনপির এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি আয়তনের দিক দিয়ে বিশাল। তারা অবশ্য একে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখেছেন। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই দলের কমিটি এমন বড় হওয়াই স্বাভাবিক। কমিটি সম্পর্কে দলের মহাসচিব বলেছেন, আমার দৃষ্টিতে এটি একটি ভাইব্রেন্ট ও ডাইনামিক কমিটি হয়েছে। দেশের রাজনীতিতে এবং গণতন্ত্র উদ্ধারে এই কমিটি ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন স্তরের নেতারা বলেছেন, কমিটিতে বাস্তবতা ও প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময় নিলেও বিএনপি সেই দাবি পূরণ করেছে। দল হিসেবে এটা তার একটি বড় কৃতিত্ব ও সাফল্য। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বের উন্নয়ন ও বিকাশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অনুশীলনের বিকল্প নেই।
কমিটির পর্যালোচনায় দেখা যায়, এতে নবীন ও প্রবীণের সুসামঞ্জস্য সমন্বয় ঘটেছে। এটাই সঙ্গত ও স্বাভাবিক যে, প্রবীণদের জায়গা নবীনদের মাধ্যমে পূরণ হবে। কমিটিতে নবীনদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের অধিক হারে সংযুক্ত করার জন্য কমিটির আকার বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে নতুন মুখ হিসেবে এসেছে ১১৩ জন। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলেও এসেছে অনেক নতুন মুখ। কমিটিতে মহিলাদের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বেশি। পর্যবেক্ষকদের মতে, পরীক্ষিত ও যোগ্য নেতাদের প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কমিটিতে ঠাঁই হয়েছে অনেক নেতার স্ত্রী ও সন্তানের। তবে তাদের এই ঠাঁই হওয়াটা নেতাদের স্ত্রী বা সন্তান হওয়ার কারণে নয়, তাদের কর্ম, ভূমিকা, মেধা ও যোগ্যতা বলেই তারা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। কমিটি নিয়ে কিছু ভিন্নমত, মান-অভিমানের ব্যাপার, বিতর্ক ও অসন্তোষ থাকতেই পারে এবং তা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। বিএনপির মতো একটি বড় দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে স্থান লাভের যোগ্যতাসম্পন্ন নেতার অভাব নেই। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে কমিটি গঠন করা মোটেই সহজসাধ্য কাজ নয়। এতে কিছু হেরফের হতেই পারে, ত্রুটি-বিচ্যুতিও ঘটতে পারে। কেউ বঞ্চিত হতে পারেন, কেউ তুল্যমূল্য না-ও পেতে পারেন। এতে অভিমান ও ক্ষোভ দেখা দিতে পারে তাদের মধ্যে। তবে এ-ও স্মরণ রাখা দরকার, কমিটির আকার যথেচ্ছ বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। বলা যায়, যতটা সম্ভব কমিটির আকার বাড়িয়ে অনেককে সেখানে স্থান দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলররা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষমতা চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর অর্পণ করেন। তিনি সেই দায়িত্ব সমদৃষ্টির আলোকে সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, বিশ্বাস করেন।
এটা ঠিক, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিহাসে কোনো দল এর আগে এত বড় কমিটি গঠন করেনি। অতীতে কেউ করেনি বলে এখন কেউ করতে পারবে না, এমন কথা বলা যায় না। এটা সমালোচনার বিষয় হতে পারে না। দেখার বিষয়, আগামীতেও কমিটি কি করে বা করতে পারে সেটা। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, দল হিসেবে বিএনপি একটা কঠিন সময় পার করছে। দলটি ব্যাপকভাবে দমন- পীড়নের শিকার। এর বহু নেতাকর্মী জেলে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা। এমতাবস্থায় দলটির ঘুরে দাঁড়ানো এবং রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন খুবই কঠিন। নতুন কমিটি দল ও জনগণের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারে সেটাই দেখার বিষয় এবং সেটা অবশ্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দলে কোনোরূপ বিভেদ-বিসংবাদ এ মুহূর্তে কাম্য নয়। দলের মধ্যে অটল ঐক্যই প্রত্যাশিত। নতুন কমিটিতে যারা এসেছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, ইতিবাচক সূচনা উপহার দেবেন, এটা স্বাভাবিক কামনা। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ও গণতন্ত্রায়নে তারা কার্যকর ভূমিকা ও অবদান রাখবেন বলেই আমরা আশা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন