করোনা মহামারির মধ্যে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার বিরোধের কারণে বিশ্বব্যাপী তার দ্বৈত অর্থনৈতিক সঞ্চালনা নীতিমালা ঘোষণা করেছে। সেই সাথে স্থানীয় বাজারে আধিপত্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেছে। এই দ্বৈত অর্থনৈতিক সঞ্চালনার মাধ্যমে দেশটি তার অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দুই ধরনের অর্থনৈতিক সঞ্চালনা নীতিকে রূপায়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আগের চেয়ে বেশি ও ব্যাপকভাবে ঘরোয়া বাণিজ্যের ওপর জোর দিয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জনসাধারণের সাথে খোলামেলা আলোচনা করে চীন তার বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নীতিতে কিছু পরিবর্তনও এনেছে। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, আগামী অর্ধ দশকের জন্য চীনের চতুর্দশ পঞ্চবার্ষিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বু-প্রিন্ট প্রকাশের কয়েক মাস আগেই এ সংক্রান্ত আভাস দেয় দেশটি।
গত সপ্তাহে চীনের আসন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সংক্রান্ত এক বক্তৃতায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে আমার দেশের অবস্থান ক্রমাগত উন্নত হবে। বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে আমাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে। অন্যান্য দেশগুলোকে আমরা যে বাজার প্রস্তাব করি তা আরও প্রশস্ত হবে। আমরা আন্তর্জাতিক পণ্য এবং মূলধন আকৃষ্ট করার জন্য একটি বিশাল মধ্যাকর্ষ ক্ষেত্র হয়ে উঠব।’
এরপর, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চীনা ব্যাংকের হংকং-ভিত্তিক সহযোগী আইসিবিসি ইন্টারন্যাশনালের অর্থনীতিবিদরা গত কয়েক সপ্তাহে দ্বৈত সঞ্চালনের বিষয়ে একাধারে বেশ কয়েকটি নথি তৈরি করেছেন। সেগুলোর একটিতে চীনের পরবর্তী ধাপের বিশ্বায়নের নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তারা দুটি চার্ট ব্যবহার করেছেন। প্রথমটি বিশ্বব্যাপী চাহিদার কেন্দ্র হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চীনের লক্ষ্য নিবদ্ধ করা একটি আন্তর্জাতিক অর্থনীতি দেখিয়েছে। দ্বিতীয়টি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়া। তিনটি অংশে বিভক্ত একটি বিশ্বচিত্র, যা আঞ্চলিক স্তরে একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে। যেখানে চীনের অভ্যন্তরীণ সঞ্চলনার মূল কেন্দ্রটি এশিয়াতে অবস্থান করছে।
হিনরিচ ফাউন্ডেশনের গবেষক ফেলো স্টিফেন ওলসন চলতি সপ্তাহে একটি ই-মেইল বার্তায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের সাথে গভীর অর্থনৈতিক সংযুক্তিটি কৌশলগত ভুল হিসাবে দেখা হচ্ছে। আর তা চীনের পক্ষে চমৎকারভাবে কাজ করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ততোটা নয়।
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের বাণিজ্য বিরোধের জের ধরে শুল্কে ইটের বদলে পাটকেল নীতি গত দু’বছরে দু’দেশের মধ্যে পণ্য প্রবাহকে হ্রাস করেছে। স্বতন্ত্র দেশগুলোর ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনও রফতানির জন্য চীনের বৃহত্তম গন্তব্য। তবে, চীন কাস্টমসের তথ্যের বরাতে উইন্ড ইনফরমেশন ডাটাবেস জানিয়েছে যে, গত বছর চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধ বৃদ্ধির মধ্যে চীনের মিত্র উত্তর আমেরিকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ ব্যবসায়ী অংশীদারের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে।
তারা জানায়, এ বছর এসোসিয়েশন অফ সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশন্স-আসিয়ান গঠিত ১০টি দেশ চীনের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হয়েছে। এভাবেই চীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় পদক্ষেপের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে এবং সম্ভবত কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে।
বিশ^জুড়ে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে চ্যালেঞ্জগুলো বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং চীনের বাজার ব্যাপকহারে বিস্তৃত হওয়ায়, আরো বেশি সংখ্যক বিদেশী সংস্থা ‘চীনে, চীনের জন্য’ কৌশল অবলম্বন করতে শুরু করেছে। বেইজিং এই বিনিয়োগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্তে¡ও দেশে বাণিজ্য ধরে রাখতে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গেল জুলাইয়ে দেশটি সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে গত বছরের থেকে ১২.২ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে ফেব্রæয়ারির শুরুতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত একাধারে চতুর্থ মাসের জন্য প্রবৃদ্ধি চিহ্নিত হয়েছে।
এপ্রেক্ষিতে চায়না রেনেসাঁ’র ক্ষুদ্র এবং কৌশল গবেষণা বিভাগের প্রধান ব্রুস পাং বলেছেন, ‘মূলধনই মূল নিয়ামক। আপনি যদি আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দেন, তাহলে বিনিয়োগকারীরাও নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগে আসবে।’ পাংয়ের মতে, বিদেশী বিনিয়োগের এই প্রবণতা এবং চীনা রফতানিতে পরিবর্তনগুলো ইতোমধ্যে ঘটছিল এবং করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর তা কেবল ত্বরান্বিত হয়েছে। সূত্র : সিএনবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন