শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

কৃষক পরিবারে উৎসব

আউশের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কা

সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে সোনালী ধান আউশ কাটার উৎসবে মাতলো সীতাকুন্ডের ১৬ হাজারেরও বেশি পরিবার। কৃষাণীরাও কিছুটা ভাগাভাগি করে নিতে পরিবারের সদস্যদের সাথে ধান মাড়াই উৎসবে অংশ নেন। আউশ মৌসুমে মাঠজুড়ে সোনালী ফসল কাটা ও ধান মাড়াই উৎসবের ধুম পরে যায়। এসময়ে গোলা ভরা ধানে ভরে উঠে কৃষকদের ঘর। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার কষ্টের মাঝেও সোনালী ধানের খুশবোই কৃষকদের আবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। 

সীতাকুন্ড কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মৌসুমে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মাঝে বিনামূলে আউশের বীজসহ প্রনোদনা বিতরণ করা হয়েছিল। সেসব বীজ রোপন করে লাভবান হয়েছেন কৃষক পরিবার। তাই উৎপাদন ভাল হওয়ায় একদিকে যেমন কৃষক পরিবার খুশি, অন্যদিকে খুশি পৌরসভা ও উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও। এ বিষয়ে বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন ও সালমা সুলতানা বলেন, শুধু বাড়বকুন্ড ইউনিয়নে ৯০০ হেক্টর জমিতে ২৫০০ কৃষক আউশের হাইব্রিড ব্রিধান ৪৮, ২৮, ৫৫, ৬৫, ৮৬ সহ আরো অন্যান্য জাতের আউশ চাষ করেছে কৃষক। বর্তমানে আউশের ফলনও ভাল হয়েছে। তবে প্রতি বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে এবং প্রবল বর্ষণে আউশের ক্ষতি হয়। কিন্তু এবার ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ কাটিয়ে অল্পদিনে আউশ কাটা শুরু হয়েছে।
নডালিয়া গ্রামের কৃষক রতন চন্দ্র দাস জানান, চলতি মৌসুমে ৪০ শতক জমিতে হাইব্রিড ব্রীধান ৮২ এর চাষ করেছেন তিনি। এতে ধানের ফলন অনেক ভাল হয়েছে। এখানে যারা দায়িত্বে রয়েছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও অনেক সহযোগিতা ও বিভিন্ন ভাবে ধান উৎপাদনে পরামর্শ দিয়েছেন। একই এলাকার কৃষক মো. রফিকসহ অনেকেই চলতি বছরের জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময়ে আউশের বিভিন্ন জাতের ধান রোপন করে তা এখন কাটা শুরু করেছেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, চলতি বছর এখানে ৩০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০০ জন কৃষক আউশের বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ করেন। এ অঞ্চলে বিভিন্ন খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে গত বছর বর্ষার সময় কৃষকদের জমিগুলোতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা অনুক‚লে আছে। তার সাথে ফসলও অনেক ভাল হয়েছে।
কৃষক মো. মান্নান জানান, প্রতিবছর ধানের মৌসুম গুলোতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করে আসছেন তিনি। এবারও প্রায় ৮০ শতক জমিতে আউশ ধান চাষ করেছেন। বর্তমানে তা কাটাও শুরু করেছেন। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে আউশ ধানের তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। ফলে উচ্চ ফলনশীল আউশের বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধানের উৎপাদন হয়েছে। সীতাকুন্ড পৌরসভা এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ্ আলম জানান, পৌরসভা এলাকায় আউশের বিভিন্ন জাতের ধান কাটাও মাড়াই শুরু হয়েছে। ধানের উৎপাদন আশানুরুপ হওয়ায় পৌরসভা এলাকার কৃষকরা অনেক খুশি হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে ধান সংগ্রহ করে কৃষক জমিতে রোপন করেন। উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রতন দত্ত ও উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ বলেন, প্রনোদনার আওতায় সীতাকুন্ডে চলতি মৌসুমে ১৫শ’ ক্ষুদ্র ও প্রান্তি্বক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে রাসায়নিক সারও ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছিল।
এতে করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা সরকারি ভাবে প্রনোদনা সংগ্রহ করে অনেকটা খুশি হয়েছে এবং ধান উৎপাদনে উৎসাহ পেয়েছে তারা। ফলে ধানও অনেক ভাল হয়েছে কৃষকদের। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা কৃষি অফিসার রঘু নাথ নাহা বলেন, চলতি মৌসুমে সীতাকুন্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৬ হাজার ৩২০ জন কৃষক ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আউশ চারা রোপন করে ছিলেন। এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়নি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রনোদনার আওতায় সীতাকুন্ডে চলতি মৌসুমে প্রান্ত্বিক কৃষদের মাঝে বিনামূল্যে প্রনোদনা বিতরণ করা হয়। তাই সরকারের এমন মহতি উদ্যোগ গ্রহণে কৃষক পরিবার মন খুলে আউশ ধানের চাষ করেছেন। ফলে আউশ চাষে বাম্পার ফলনও হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন