এসি বিস্ফোরণে এত মানুষ হতাহত হবে না : ড. সাইয়েদ মাহমুদ উল্লাহ
নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনা এসি বিস্ফোরণে ঘটেছে; না কি তিতাস গ্যাস লিকেজের কারণে ঘটেছে, এটা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) বিস্ফোরণের ঘটনায় এত মানুষের প্রাণহানি ঘটবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইয়েদ মাহমুদ উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা খুব কম। তবে এসি বিস্ফোরণের স্ফুলিঙ্গ জমে থাকা গ্যাসে পড়লে আগুন লেগে যায়। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তিনি আরো বলেন, এসিতে যে পরিমাণ গ্যাস থাকে সে গ্যাসে আগুন লাগার কথা নয়। তবে তিতাস গ্যাসে অবশ্যই আগুন লাগবে। বন্ধ ঘরে মধ্যে গ্যাস জমে থাকলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানেও গ্যাস বিস্ফোরণে হয়ে আগুন লেগেছে বলে মনে করছেন ঢাবির ওই শিক্ষক।
স্থানীয়রা জানান, মসজিদ বন্ধ থাকা অবস্থায় ভেতরে গ্যাসের লিক হয়ে যায়। পুরো মসজিদের কক্ষটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। এরপরেই এসির বিস্ফোরণ। আর সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের এমন অবস্থা থাকায় বিস্ফোরণের মাত্রা তীব্র হয়। অনেক দিন ধরেই এই মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া তিতাস গ্যাসের লাইন লিক হয়ে গেছে এমন অভিযোগ তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানানো হলেও তারা কিছুই করেনি। তারা আরো জানান, মাঝেই মাঝেই মসজিদের ভেতরে গ্যাসের কটু গন্ধ পাওয়া যেতো। কিন্তু তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কোন টনক নড়েনি। এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।
ঘটনাস্থ পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন জানান, মসজিদের সামনের গ্যাসের লাইনে লিকেজ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে এসি চালানোর সময় জানালা বন্ধ থাকায় ওই গ্যাস ভেতরে জমা হয়ে যায়। হঠাৎ কেউ বৈদ্যুতিক সুইচ অফ-অন করতে গেলে স্পার্ক থেকে এই বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, মসজিদের মেঝের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন গেছে। পানি দেয়ার সময় বুদ বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছিল। ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা ধারণা করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা দ্রুত এখানে এসে আমাদের ধারণাকে নিশ্চিত করে। তারা জানান- গ্যাসের লাইন থেকেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, গত এক মাস থেকে গ্যাস লাইন লিকেজের সমস্যা চলছে। তারা মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলে গ্যাসের গন্ধ পেতেন। কিন্তু বিষয়টি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানানো হয়। কিন্তু তারা মেরামত করেনি। পশ্চিম তল্লা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সোহেল শেখ নামের এক ব্যক্তি জানান, আগে থেকেই মসজিদের ভেতরে গ্যাসের গন্ধ পেতাম। এসি চালানোর কারণে মসজিদের দরজা-জানালা বন্ধ থাকত। ভেতরে গ্যাস জমে গিয়েছিল। গতকাল গ্যাস বিস্ফোরণের কারণেই এসি বিস্ফোরণ হয়েছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুল গফুর জানান, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সপ্তাহখানেক আগে গ্যাস লিকেজের বিষয়টি তারা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের ঠিকাদারকে জানান। তখন ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। টাকা জোগাড় করার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাসের লিকেজের অভিযোগ পেয়ে তাদের একটি দল কাজ করছে। এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার এশার নামাজের সময় নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন