মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

গণপরিবহন সংকটে চট্টগ্রামে চরম দুর্ভোগ দুই দিনে ২২৭০ গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা আটক ১৫৬

প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : প্রতিটি মোড়েই যাত্রীদের জটলা। বাস-টেম্পো আসতেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দু-একজন তাতে উঠতে পারলেও বাকিরা ব্যর্থ হচ্ছেন। তারা হতাশ হয়ে ফের পরবর্তী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রতিটি গণপরিবহন যাত্রীতে ঠাসা। দরজার সাথেও ঝুলছেন অনেকে। তিলধারণের ঠাঁই নেই বাস-টেম্পোতে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও গণপরিবহনে উঠতে না পেরে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। গতকাল (সোমবার) বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রাস্তায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
এমনিতেই নগরীতে গণপরিবহনের তীব্র সংকট। তার উপর আকস্মিক পুলিশের অভিযানে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা আরও কমে গেছে। অভিযানে কিছু যানবাহন আটক হয়েছে, বিপুল সংখ্যক যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতে চালকদের অনেকে রাস্তায় বাস, মিনিবাস ও অটোরিকশা নামাতে ভয় পাচ্ছেন।
ফলে যানবাহনের সংকটে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে অফিস শুরু আর ছুটির সময় কর্মজীবী মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘর থেকে বের হয়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছা আবার কাজ শেষে সময়মতো বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে স্বল্প ও সীমিত আয়ের কর্মজীবী মানুষদের পরিবহন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। হঠাৎ করে নগরীতে যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। মাত্র দুই দিনে ট্রাফিক পুলিশ নগরীতে চলাচলকারী ২ হাজার ২৭০টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এর মধ্যে সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে ৯১৩টি। আটক করা হয়েছে ৩৩টি সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ ১৫৬টি যানবাহন। এরমধ্যে বেশিরভাগই গণপরিবহন। একদিনেই জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৫০টাকা। ফিটনেস ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকা, ট্রাফিক আইন অমান্যসহ নানা অপরাধে এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মাসুদ উল হক। তিনি বলেন, যানবাহনের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান নিয়মিত অভিযানের অংশ মাত্র। তবে মিটারে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে সিএনজি চালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলছে।
তিনি বলেন, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এতে করে রাস্তায় কিছু গণপরিবহন নামছে না আর তাতে মানুষের দুর্ভোগও কিছুটা বেড়েছে। তবে অবৈধ কোন যানবাহনকে রাস্তায় চলতে দেওয়া হবে না। কোন অনিয়ম বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, অটোরিকশার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। মিটারে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। গত ২৪ জুলাই থেকে নগরীতে চলাচালকারী বৈধ-অবেধ ২৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কয়েকশ অটোরিকশা আটকও করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায় অভিযানের মুখে কিছু অটোরিকশা মিটারে ভাড়া আদায় করলেও বেশিরভাগ অটোরিকশায় ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। মিটার আছে কিন্তু তারা মিটারে যাচ্ছে না। গণপরিবহন সংকটের কারণে লোকজনও বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে এসব অটোরিকশায় চড়ছে।
মহানগরীতে বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা ১৩ হাজার। এর পাশাপাশি আবেদিত লিখে আরও দশ হাজার রেজিস্ট্রেশন বিহীন অটোরিকশা রাস্তায় চলছে। চলমান অভিযানে এসব অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি হঠাৎ করে নগরীতে চলাচলকারী অন্য যানবাহন বিশেষ করে গণপরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করে ট্রাফিক পুলিশ। শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টানা অভিযানে এক হাজার ২২৫টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। এর মধ্যে সিএনজি অটোরিকশা ছিল ৪৮৬টি। আটক করা হয় ১৬টি অটোরিকশাসহ ৮১টি যানবাহন। বন্ধের দিনে এমন অভিযানের খবরে পরদিন সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববারে রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা কমে যায়। ওই দিন ১০৪৫টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আটক করা হয় ৭৫টি যানবাহন, যার মধ্যে সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা ১৭টি। অভিযান গতকালও অব্যাবহত ছিল।
অভিযানের ভয়ে গণপরিবহনের একটি অংশ রাস্তায় নামছে না। নগরীর ১২টি রুটে চলাচলকারী বেশিরভাগ বাস মিনিবাস ও হিউম্যান হলারের ফিটনেস নেই, নেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। আর এই কারণে রাস্তায় নামলে পুলিশের মামলা কিংবা গাড়ি আটক হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে অনেকে রাস্তায় গাড়ি বের করেনি।
নগরীতে এমনিতেই গণপরিবহনের সংকট। ১২টি রুটে রুটপারমিট নিয়েও রাস্তায় চলছে না অনেক বাস, মিনিবাস। সকালে এবং বিকালে বিভিন্ন রুটের আড়াইশ থেকে তিনশ বাস বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের পরিবহন করতে রির্জাভ ভাড়ায় চলে যাচ্ছে। এর ফলে প্রায় প্রতিটি রুটে যানবাহনের তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে। তার উপর অভিযান জোরদার হওয়ায় সংকট আরও বেড়ে গেছে। আর এই সুযোগে অটোরিকশা ও রিকশা চালকেরা গলাকাটা হারে ভাড়া আদায় করছে। স্বল্প ও সীমিত আয়ের কর্মজীবী এবং শ্রমজীবী মানুষের আয়ের বিরাট অংশ চলে যাচ্ছে যাতায়াত খাতে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরীর বন্দরনগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় ইপিজেড। এই চট্টগ্রাম ইপিজেডে দুই লাখের বেশি শ্রমিক কর্মরত। কর্ণফুলি ইপিজেডে আছে প্রায় পৌনে এক লাখ শ্রমিক। প্রায় চার শতাধিক তৈরী পোশাক কারখানার পাশাপাশি নগরীর পতেঙ্গা, সাগরিকা, ষোলশহর ও কালুরঘাট শিল্প এলাকায় রয়েছে ছোটবড় অনেক শিল্প কারখানা। এসব শ্রমিকদের বেশির ভাগই গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীদের বিরাট অংশও নির্ভরশীল গণপরিবহনের উপর। আবার সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসার শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা কাজে নগরীতে আসা হাজার মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম গণপরিবহন। লোকসংখ্যার তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা একেবারেই কম। এই খাতে নৈরাজ্য দমনে নানা সময়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কখনো ফলপ্রসূ হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন