শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

ইলিশকাহন

| প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৭ এএম

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। ইলিশ পছন্দ করে না, এমন মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন। পদ্মার ইলিশ ভাবতেই অনেকের জিভে পানি এসে যায়। ইলিশ দিয়ে নানা রকম মুখরোচক রান্না হয়। যেমন সর্ষে ইলিশ, ইলিশ পোলাও, ইলিশ দোপেয়াজো, ইলিশ পাতুরি, ইলিশ ভাজা, কলা পাতায় ইলিশ, স্মোকড ইলিশ, ইলিশের মালাইকারী , ইলিশের টক ইত্যাদি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ইলিশ ক্লুপেইডা পরিবারের অন্তগর্র্ত । বৈজ্ঞানিক নাম টেনুয়ালুসা ইলিশা।
একটি ইলিশের সর্বাধিক দৈর্ঘ্য ৬০ সেমি। বড় আকারের ইলিশের ওজন হয় প্রায় ২.৫ কিলোগ্রাম। স্ত্রী মাছ দ্রুত বাড়ে এবং সচরাচর পুরুষ ইলিশের চেয়ে আকারে বড় হয়। এ মাছ এক থেকে দুই বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। বাংলাদেশে টেনুয়ালুসা ইলিশা, টি. টলিগেস, টি. কেলি -এই তিন প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে টি. ইলিশা অধিক পরিমাণে সংগৃহীত হয়। ইলিশ সারা বছর সাগরে থাকে। শুধু ডিম পাড়ার সময় নদীতে আসে। নদীর ইলিশ বেশি উজ্জল, কিছুটা রূপালী হয়। সাগরের ইলিশ লম্বা, সরু হয়। সাগরের ইলিশ তুলনামুলক কম উজ্জল হয়।
মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলছেন, সাগর থেকে ইলিশ যখন ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে, মানে উজানে আসে তখন নদীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী খায়। ইলিশ মাছ এই কারণে তখন শরীর বেটে ও মোটা হয়। নদীর ইলিশ তুলনামুলক স্বাদ ভালো হয়। কারণ হলো সমুদ্র থেকে ইলিশ নদীতে ঢোকার পরে নদীর উজানে মানে স্রোতের বিপরীতে যখন চলে, সে সময় এদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জমা হয়। এই ফ্যাট বা তেলের জন্যই ইলিশের স্বাদ বেড়ে যায়। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮৬% বাংলাদেশের। আর বাংলাদেশের মোট ইলিশ উৎপাদনের প্্রায় ৬৬ ভাগ আসে বরিশাল অঞ্চল থেকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। সূত্র জানায়, ২০১৯-২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে সেই রেকর্ড ভেঙে এখন পর্যন্ত ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ৩৩ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১১ বছরের ব্যবধানে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫ থেকে ১৩০টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বরিশালের সন্ধ্যা নদীর ইলিশও স্বাদে গুনে অনন্য। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত সাংবাদিক গোলাম সারওয়াার বলেন, আমাদের সন্ধ্যা নদীর ইলিশের মত ইলিশ আর কোথাও নেই। দেশে প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ইলিশের অভয়াশ্রম। ক্রমবর্ধমান ইলিশ উৎপাদনের এই প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশকে ইলিশ উৎপাদনের রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একই সঙ্গে ইলিশ উৎপাদনেও বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম স্থানে। বাংলাদেশে গত তিন বছরে দেশের ইলিশের আকৃতি ও ওজন বেড়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদন বাড়লেও অন্য দেশগুলোতে কমেছে। উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি ইলিশের গড় দাম গত এক বছরে ২০ শতাংশ কমেছে। বড় আকারের একটি ইলিশ ২০ লাখ পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ইলিশ সারা বছর ডিম পাড়লেও সবচেয়ে কম পাড়ে ফেব্রুয়ারি-মার্চে এবং সবচেয়ে বেশি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ইলিশ নীল-সবুজ শৈবাল, ডায়াটম, ডেসমিড, কোপিপোড, রটিফার ইত্যাদিও খেয়ে থাকে। তবে এদের খাদ্যাভ্যাস বয়স ও ঋতুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। পুষ্টিগুনে ইলিশ অনন্য।
১০০ গ্রাম ইলিশে প্রায় ২১ দশমিক ৮ গ্রাম প্রোটিন। ১৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৩.৩৯ গ্রাম শর্করা, ২.২ গ্রাম খনিজ ও ১৯.৪ গ্রাম চর্বি। তাছাড়া আরোও রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিড, নায়াসিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন বি ১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস। আরও আছে জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়ামের মতো খনিজও রয়েছে ইলিশ মাছে। জিঙ্ক ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে খুব ভালো। সেলেনিয়াম আবার অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে। ইলিশ মাছে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। বিশেষ করে ভিটামিন ডি কিন্তু খুব কম খাবারেই পাওয়া যায়। ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম। অন্য দিকে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে। ফলে হার্ট থাকে সুস্থ। ইলিশ মাছে রয়েছে আয়ডিন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, পটাশিয়াম।
ভিটামিন এ ও ডি-র চমৎকার উৎস হল ইলিশ মাছ। মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে। যার অধিকাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান তাঁদের মধ্যে বয়স কালে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনেও সাহায্য করে ডিএইচএ। ইলিশ মাছ তেলে ভাজলে ফ্যাট ক্যালারির পরিমান বেড়ে যায়। ইলিশে কারো মধ্যে এলার্জি দেখা দিতে পারে। ইলিশ খাওয়ার বেলায় এই বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। এক জরিপে দেখা দেখা গেছে, মাওয়া ঘাটের হোটেলগুলোতে শতকরা ৯০ ভাগই ইলিশের নাম করে সার্ডিন সহ অন্য মাছ বিক্রি করে। তাই মাওয়ায় ইলিশ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ঢাকার কাওরানবাজার, যাত্রাবাড়ি সহ বেশ কিছু জায়গায় ইলিশের পাইকারী বাজার। এসব জায়গা থেকে কম দামে ভালো ইলিশ কেনা সম্ভব।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
মুনালয়,দক্ষিন নাজিরপুর
ডাক ও থানা- বানারীপাড়া,বরিশাল-৮৫৩০
মেইল: Safiq69@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন