শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বরিশালে এখনও অব্যাহত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া

প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আবহাওয়া পরিস্থিতি এখনো কিছুটা দুর্যোগপূর্ণ। মাঝারী থেকে ভারীবর্ষষেণ জনজীবন বিপর্যস্ত। সাগর মাঝারী মাত্রায় উত্তাল রয়েছে। কুয়াকাটা সাগর সৈকতে ৭-৯ ফুট উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পরছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদী বন্দরগুলোতে ১নম্বর সতর্কতা জারী রাখা হয়েছে। পায়রাসহ সবকটি সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সব মাছধরা নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সতর্কতার সাথে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
আষাঢ়ে বৃষ্টির ক্ষরা কাটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে শ্রাবণের শুরু থেকে মোটামুটি বর্ষণ ফিরে এসেছে। গতকাল দুপুরের আগে ভারীবর্ষণে বরিশালে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরে। আর মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণেই হয়ত শ্রাবণের বিদায় হতে পারে। আবহাওয়া বিভাগ গতমাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৯.৬ ভাগ বেশী বৃষ্টিপাতের খবর দেয়ার পরে চলতি মাসে স্বাভাবিক ৪শ’ মিলিমিটারের বেশী বৃষ্টিপাতের কথা বলেছে দক্ষিণাঞ্চলে। তবে গতকাল দুপুর ৩টা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল সকাল ৬টা থেকে দপুর ৩টা পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সকাল ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। আজ সকালের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
তবে বৃষ্টিপাতের সাথে উজানের ভাটিমুখি ঢল আর ফুঁসে ওঠা সাগরের জোয়ারে সমগ্র উপকূলভাগসহ দক্ষিণাঞ্চল এখনো পানিতে সয়লাব। আবহাওয়া বিভাগ অবশ্য আগস্টে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে ১-২টি মৌসুমী নিম্নচাপ ছাড়াও মাসের দ্বিতীয়ার্ধে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় স্বাভাবিক বন্যার পূর্বাভাসও দিয়ে রেখেছে। ফলে এমাসেই দেশের মধ্যাঞ্চল থেকে উত্তরাংশে আরো একদফা বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রধান নদ-নদীগুলোর উৎসমুখ সীমান্তের ওপারে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভারীবর্ষণ অব্যাহত থাকায় এ বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গত দিন দশেক যাবত আমাদের পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র সীমান্তের ওপারের পানিতে দুকূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মায় প্রবল শ্রোতে দেশের প্রধান ফেরি সেক্টর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াতে যানবাহন পারপারে চরম অচলবস্থা অব্যাহত রয়েছে। দৌলতদিয়াতে ৪টি ঘাটের ৩টিই বিপন্ন। বালু মিশ্রিত প্রবল শ্রোতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার কুঁড়ি মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ফেরিগুলোকে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টাও লাগছে। শ্রোত ঠেলে ফেরিগুলো গন্তব্যে পৌঁছতে চরম ঝুঁকির কবলে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান ফেরি সেক্টর মাওয়াতেও প্রায় একই অবস্থা। প্রধান দুটি ফেরি সেক্টরেই সহস্রাধিক যানবাহনের লাইন লেগে আছে। ফলে রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা চরম ঝুঁকির মুখে।
উজানে বন্যার পানি মেঘনা, তেঁতুলিয়া, বলেশ্বর ও গড়াই-এর শাখা নদ-নদী দিয়ে সাগরে প্রবাহিত হলেও সদ্য অতীত শ্রাবণের অমাবস্যার ভড়া কোটালে সাগর স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট ফুঁসে ওঠায় দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অমাবস্যা কেটে গেলেও সাগর এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেননি। ফলে উজানের পানি গ্রহণ এখনো স্তিমিত। উপকূলের সবগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপসহ অনেক এলাকার মূল ভূ-খÐও গত সপ্তাহধিককাল যাবত পানির তলায়। আমন বীজতলাসহ বিপুল পরিমাণ রোপা আমনও তলিয়ে গেছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন নিয়ে এবার কৃষকের দুঃশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। তবে আগামী সাত দিনের মধ্যে পানি সরে গেলে নতুন বীজতলা তৈরী করে রোপণ সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন