শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দুনিয়া কাঁপানো ৯/১১ আজ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:১৪ পিএম

ইতিহাসের বিভীষিকাময় ৯/১১ আজ। ১৯ বছর আগে ২০০১ সালের এ দিনে আত্মঘাতী বিমান হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গর্ব নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা হয়। হামলায় নিহত হয় প্রায় ৩ হাজার মানুষ। আল-কায়দা এ হামলা চালিয়েছে দাবি করে এরপর থেকে বিশ্বব্যাপি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট।২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। অন্যদিনের মতোই জেগে উঠেছিল নিউইয়র্ক সিটি। সে দিনের সকালের সঙ্গে অন্য আট-দশটি সকালের কোনো পার্থক্য ছিল না। কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছিল বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটি। স্থানীয় সময় তখন ৮টা ৪৬ মিনিট। হঠাৎ করেই ঘটল সেই ভয়াল ঘটনা। মুহূর্তেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল সন্ত্রাসের আগুনে কীভাবে জ্বলেপুড়ে শেষ হতে লাগল আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার।‘টুইন টাওয়ার’ হিসেবে পরিচিত বিশ্বের অন্যতম উঁচু দালানটিতে আঘাত হানে সন্ত্রাসীদের দখল করা দুটি যাত্রীবাহী বিমান। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বিমান হামলার এমন ধ্বংসযজ্ঞ বিশ্ববাসীর কল্পনারও বাইরে। মুহূর্তের মধ্যেই নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঢেকে গেল নিকষ কালো ধোঁয়ায়। সবার চোখের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গৌরবের প্রতীক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গৌরবের প্রতীক ওয়াশিংটনের পেন্টাগন ভবনেও হামলা চালায় আরেকটি বিমান। এ ছাড়া পেনসিলভানিয়ায় আরেকটি বিমান দিয়ে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।এই হামলা চালাতে ১৯ জঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের যাত্রীবাহী চারটি বিমান হাইজ্যাক করে। এর মধ্যে দুটি বিমান দিয়ে তারা নিউইয়র্ক শহরের টুইন টাওয়ারে হামলা চালায়। এতে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে আগুন ধরে যায়। দুই ঘণ্টার মধ্যে টুইন টাওয়ার ধসে পড়ে। সঙ্গে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এর পাশের কয়েকটি ভবনও। এ দুটি ফ্লাইটের ধ্বংসযজ্ঞ চলাকালীনই তৃতীয় ফ্লাইটটি দিয়ে জঙ্গিরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনে আঘাত হানে। চতুর্থ ফ্লাইটটি নিয়ে হাইজ্যাকারেরা পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের শাংকসভেলি এলাকার আকাশে যায়। ওখান থেকে তারা সেটিকে নিউইয়র্কের দিকে নিতে চায়। তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল হিল ভবন অথবা হোয়াইট হাউসে আঘাত হানা। তবে সেই হামলা ব্যর্থ হয়। এসব ঘটনায় ১৯ হাইজ্যাকারের সবাই নিহত হয়। এ ছাড়া টুইন টাওয়ার ও এর আশপাশে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ২ হাজার ৭৪৯ জন প্রাণ হারান। নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক ব্যক্তি, নারী ও শিশু। নিহতদের মধ্যে আরও রয়েছেন ৩৪৩ জন দমকল কর্মী ও ৬০ পুলিশ কর্মকর্তা। পেন্টাগনে আত্মঘাতী বিমান হামলায় তখন ১৮৪ জন নিহত হন।উল্লেখ্য, আল-কায়েদার তখনকার ওই হামলায় যারা প্রাণ হারান তারা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন না। ওই হামলায় ৭০টি দেশের মার্কিন প্রবাসীরাও নিহত হন। ওই হামলায় তাত্ক্ষণিক মৃত্যুই শেষ কথা নয়, উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে যারা আহত, অসুস্থ এবং বিষক্রিয়ার শিকার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৮৩৬ জন পরে মৃত্যুবরণ করেন। এই একটি ঘটনা পাল্টে দেয় গোটা যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এ হামলার জের টানতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দেশটির ঋণের খাতায় যোগ হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। যুদ্ধ ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এসব অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ওই হামলার পর থেকে কমপক্ষে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক। রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ‘কস্ট অব ওয়ার’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চালানো হামলায় নিহত হন ২ হাজার ৯৯৫ জন। ওই হামলায় ক্ষতি হয় ৫ থেকে ১০ হাজার কোটি ডলারের। আর এ ঘটনার জেরে নাইন-ইলেভেনের পর থেকে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ থেকে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, নাইন-ইলেভেনের প্রভাব পড়েছিল সারা বিশ্বেও। এজন্য মাশুল গুনতে হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশকে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে ইরাক, আফগানিস্তানকে দিতে হয়েছে চড়া মূল্য। অবশ্য, গত ১৭ বছরে ওয়ান-ইলেভেনের বড় বিপর্যয় থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে আজকের আমেরিকা। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের ওপর আবার গৌরবের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে ফ্রিডম টাওয়ার। বিশাল বাজেট হাতে নিয়ে এর নির্মাণ শুরু হয় ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল। প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় এই ভবনটি নির্মাণে। এবার নিরাপত্তার জন্য রয়েছে আরও অনেক আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যে কোনো বিমান এর দিকে ছুটে এলেই শক্তিশালী রাডারের নিখুঁত গণনায় সেটিকে ভূপাতিত করার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা এতে রাখা হয়েছে।৯ / ১১ হামলার ধারণা কীভাবে পেলেন ওসামা : যুক্তরাষ্ট্রে ৯ / ১১-এ আল-কায়েদার ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার কথা সবার জানা। হামলার পেছনের কাহিনি এখনো রহস্যঘেরা। হামলার ধারণা আল-কায়েদার তৎকালীন প্রধান ওসামা বিন লাদেন কীভাবে পেয়েছিলেন, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।আল-কায়েদার একটি প্রচারণার সাময়িকীতে দাবি করা হয়, ১৯৯৯ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে মিসরের একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা থেকে ৯ / ১১-এর হামলার ধারণা পেয়েছিলেন ওসামা। আল-মাসর নামের ওই সাময়িকীতে দাবি করা হয়, মিসরের কো-পাইলট গামিল আল-বাতৌতির গল্পই ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার প্রেরণা ছিল। আটলান্টিক মহাসাগরে মিসরের যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, তার কো-পাইলট ছিলেন গামিল। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে কায়রোগামী বিমানটি গামিল ইচ্ছাকৃতভাবে সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন বলে কথিত রয়েছে। ওই ঘটনায় বিমানের ২১৭ জন আরোহী নিহত হন। তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন ছিলেন মার্কিন নাগরিক। সন্ত্রাসবাদের গুজব সত্ত্বেও পরিবার ও বন্ধুদের দাবি, গামিলের কোনো দৃঢ় বিশ্বাস ছিল না।বিভিন্ন সূত্রের ভাষ্য, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটি আত্মহত্যা বা চাকরি-সংক্রান্ত ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হতে পারে। মিসরের তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্য, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্য, কো-পাইলট ইচ্ছাকৃতভাবেই বিমানটি সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছেন।আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদা আনসার আল-শরিয়ার ওই সাময়িকীর তথ্যমতে, মিসরের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর শুনে ওসামা জানতে চান, কো-পাইলট বিমানটিকে পার্শ্ববর্তী কোনো ভবনে কেন বিধ্বস্ত করেননি? আল-মাসর সাময়িকীর দাবি, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণটি জানার চেয়ে বরং বিপর্যয় ঘটানোর নতুন ভয়াবহ কৌশলের দিকে ওসামার আগ্রহ ছিল বেশি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack Ali ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৫৭ পিএম says : 0
America destroy twin tower and blamed muslim and since 9/11 America and his allies killed to-date nearly 33 millions muslims and also raped our dearest mother and daughter not only that millions of muslims became disable and become homeless. May Allah's curse on them..
Total Reply(1)
elu mia ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:১০ পিএম says : 0
America didn't destroy twin tower.it was Al Qida.

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন