মটরশুঁটিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। তুলনায় সোডিয়াম যৎসামান্যই। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য দারুণ উপকারী এই খাবার। মটরশুঁটিতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা হাঁপানির শুশ্রƒষা করে। হাড়ের জন্য চাই নন-কোলাজেন প্রোটিন, সেই প্রোটিনের নাম অস্টিওক্যালসিন। কী করে পাওয়া যাবে এই অস্টিওক্যালসিন? মটরশুঁটি, ফুলকপিসহ যেসব খেলেই হবে। মটরশুঁটিতে থাকা ‘কে’ ভিটামিনের একাংশকে ‘কে টু’ ভিটামিনে পরিণত করে শরীরে। সেই কে টু হাড়ের মধ্যে ক্যালশিয়াম অণুদের ধরে রেখে অস্টিওক্যালসিন তৈরি করে। উল্লেখ্য, ভিটামিন ‘কে’ রক্তের তঞ্চন প্রক্রিয়াকেও স্বাভাবিক রাখে। অন্যদিকে, শরীরে অস্টিওক্যালসিন না-থাকা মানে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব কমে যাওয়া। অস্টিওক্যালসিন হল নন- কোলাজেন প্রোটিন। কী করে পাওয়া যাবে এই প্রোটিন? মটরশুঁটি এবং ভিটামিন ‘কে’ থাকে যেসব খাবারদাবারে, সে সব খেলেই হবে। মটরশুঁটি ধারাবাহিক খেয়ে গেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভোগার আশঙ্কা কমে। অন্যদিকে, ডায়াবেটিসে যারা ভুগছেন, তাদের জন্য দারুণ শুশ্রƒষাকারী খাবার এই মটরশুঁটি। গবেষণা জানাচ্ছে, মটরশুঁটি, রাজমা, শিমজাতীয় খাবারে অভ্যস্ত হলে স্টমাক ক্যানসার-গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের ভোগান্তি হয় না। মটরশুঁটিতে ভিটামিন ‘এ’ থাকে আলফা ক্যারোটিন এবং বিটা ক্যারোটিন স্তরে। এছাড়া প্রদাহদমনী উদ্ভিজ পুষ্টিও থাকে যথেষ্ট পরিমাণে। ৪ ধরনের সেইসব ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট তথা উদ্ভিজ্জ পুষ্টি উপাদানের নাম-পিসামস্যাপোনিন ১ এবং ২, পিসোমোসাইড এ এবং বি। এ ধরনের প্রদাহদমনী পুষ্টি উপাদান মটরশুঁটি ছাড়া অন্য কোনো খাবারদাবারে সেভাবে পাওয়াই যায় না প্রায়। মটরশুঁটিতে ফেরুলিক অ্যাসিড এবং ক্যাফিক অ্যাসিড নামে দু’ধরনের ফেনোলিক অ্যাসিড থাকে।
কাউমেস্ট্রোল নামে পলিফেলনল থাকে। কিছু কিছু খাবার-দাবার নিয়মিত খেয়ে চলার কারণে কুঁড়েমি/অবসাদ হয়। প্রতিদিন খানিকটা করে মটরশুঁটি খেলে সেই আলস্যবোধ কাটানো যায়। শরীরে ঢোকা কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, প্রোটিনের বিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে যে সমস্ত উপাদান দরকার তার সব ক’টিই রয়েছে মটরশুঁটিতে। দিনভর ১৩৮ গ্রাম মটরশুঁটি কাঁচা খেয়ে যেতে পারলে শরীর প্রতিদিন ¯্রফে মটরশুঁটি থেকেই ১৯.৫৬ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ‘সি’ পেতে পারে। মটরশুঁটিতে অনেকটা করে থাকে লুটন এবং জিয়াক্সানথিন নামের দু’ধরনের ক্যারোটিনয়েড। চোখে ছানি পড়া, অক্ষিপটের সবচেয়ে দৃষ্টি সংবেদি অংশের ক্ষতি হওয়া আটকায় এই ক্যারোটিনয়েড। চোখের মণির পেছনকার আলোকসংবেদি পর্দা তথা ঝিল্লি, যাকে আমরা অক্ষিপট বলি, তার ব্যাপক শুশ্রƒষা হয় এই দুই ক্যারোটিনয়েডে। চোখের লেন্সেরও শুশ্রƒষা হয়। উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলোর গবেষণা বলছে, ক্যানসার হওয়া এবং তাড়াতাড়ি বয়সের ভাঁজ পড়ে যাওয়া আটকাতে পারে ক্যারোটিনেয়েডের শুশ্রƒষা। এরা প্রবল শক্তিধর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। শরীরে অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর তৎপরতাকে সামাল দেয় লুটিন এবং জিয়াক্সানথিন। মৌলিক অক্সিজেন অণুর ছোবল আটকে শরীরকে রোগ ভোগান্তির খপ্পরে পড়া থেকে বাঁচায় এরা। শরীরের প্রতিরোধী শক্তিকে চাঙ্গা করে। শরীরে যদি এই দুই ক্যারোটিনয়েডের ধারাবাহিক কমতি হয়েই চলে, তা হলে হার্টের রোগ হয়, ক্ষেত্রবিশেষে ক্যানসারও। যারা ধূমপানে এবং মদ্যপানে আসক্ত তাদের শরীরে ক্যারোটিনয়েডের খানতি হবেই। কারণ ধূমপানের জেরে ক্যারোটিনয়েড ধ্বংস হয়। আর হ্যাঁ, মদ্যপানের জেরেও। অন্যদিকে বাইরে থেকে যখন কৃমির বিটা ক্যারোটিন অর্থাৎ সাপ্লিমেন্ট হিসাবে বিটা ক্যারোটিন নেয়া হলেও রক্তে লুটিন কমে যায়। আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড স্তরে ওমগো থ্রি ক্যানি অ্যাসিডও থাকে মটরশুঁটিতে। ১৩৮ গ্রামে ৩০ মিলিগ্রাম। মটরশুঁটিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ক্যাটেচিন এবং ইপিক্যাটেচিন নামে দু-ধরনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ছাড়াও থাকে ভিটামিন সি এবং জিঙ্ক। অনেকটা আয়রন মেলে মটরশুঁটিতে। এই আয়রন পেলে পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ে। শরীরের প্রতিরোধী তন্ত্র উজ্জীবিত হয়। অ্যানিমিয়া তথা রক্তাল্পতা দূর হয়। মটরশুঁটিতে এক লপ্তে অনেকটা ফোলেট মেলে ৮৬.৭৮ মাইক্রোগ্রাম। আয়োডিনও থাকে অনেকটা। যাদের শরীরে আয়োডিনের খামতি রয়েছে তারা প্রাণভরে মটরশুঁটি খান।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন